Advertisement
০৫ মে ২০২৪
চা শিল্পের আশঙ্কা দাম ও গুণমান নিয়ে

ছাড়পত্রের লাল ফিতে আলগা করতে চায় কেন্দ্র

চা চাষ শুরু কিংবা চা তৈরির কারখানা গড়ার জন্য আগাম ছাড়পত্র নিতে হয় টি বোর্ডের কাছে। ওই আগাম অনুমোদন নেওয়ার রেওয়াজ এ বার তুলে দিতে চায় কেন্দ্র। একই সঙ্গে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও আপত্তি না থাকার শংসাপত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি) নেওয়ার প্রথা প্রত্যাহারের পক্ষপাতী তারা। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে প্রস্তাবও দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

চা চাষ শুরু কিংবা চা তৈরির কারখানা গড়ার জন্য আগাম ছাড়পত্র নিতে হয় টি বোর্ডের কাছে। ওই আগাম অনুমোদন নেওয়ার রেওয়াজ এ বার তুলে দিতে চায় কেন্দ্র। একই সঙ্গে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও আপত্তি না থাকার শংসাপত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি) নেওয়ার প্রথা প্রত্যাহারের পক্ষপাতী তারা। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে প্রস্তাবও দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক।

এমনিতে নিয়ম-কানুন সরল করার পক্ষপাতী হলেও, কেন্দ্রের এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে চা শিল্পের একাংশ। তাদের আশঙ্কা, আগাম অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা উঠে গেলে, যথেচ্ছ চা চাষ শুরু হবে। ফলে চাহিদার তুলনায় হুড়মুড়িয়ে বাড়বে জোগান। কমবে চায়ের দাম। প্রশ্নের মুখে পড়বে গুণমানও। তাতে আখেরে চা শিল্পেরই ক্ষতি। ফলে চালু ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার আগে সব দিক খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা।

চা চাষ ও তার কারখানা গড়তে চা পর্ষদের কাছে (টি বোর্ড) অনুমতি নিতে হয়। রাজ্যের কাছ থেকে নেওয়া এনওসি দাখিল করতে হয় (বিশেষত ক্ষুদ্র চাষিদের) পর্ষদের ঘরে। কিন্তু সম্প্রতি টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভায় এসে বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনী রঞ্জন রশ্মি জানান, তাঁরা ওই সব ছাড়পত্র তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী। আগ্রহী, কারও কাছে জমির স্বত্ত্ব থাকলেই তাঁকে চা চাষের সুযোগ দিতে। তবে পর্ষদের কাছে তার নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন) থাকতে হবে। তাঁর দাবি, মূলত, উৎপাদন বাড়াতেই এই পদক্ষেপ।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৩০ জুনের পর যে সব ক্ষুদ্র চা চাষি এনওসি-র আবেদন জানিয়েছিলেন, রাজ্য তাঁদের কাউকেই তা দেয়নি। তা সত্ত্বেও বহু জায়গাতেই চলছে চা চাষ।

উদার অর্থনীতির জমানায় লাল ফিতের ফাঁস এড়াতে আগ্রহী চা শিল্পও। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই শিল্পের অনেকের আশঙ্কা, এক ধাক্কায় এই সব নিয়ন্ত্রণ উঠে গেলে, নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা। বিশেষত ক্ষুদ্র চা চাষের বাড়বাড়ন্তে চায়ের গুণমান এবং চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হবে বলেই রশ্মির প্রস্তাব নিয়ে দু’বার ভাবছেন তাঁরা।

চা শিল্পমহলের একাংশের যুক্তি, আগে চায়ের চাহিদা বাড়ানো জরুরি। সেই সঙ্গে উৎপাদন। কারণ, এখনই চাহিদা-জোগানের মধ্যে ফারাক কম। তার উপর যথেচ্ছ চা চাষ শুরু হলে, পরিস্থিতি আরও বিগড়ানোর সম্ভাবনা। চা বহুজাতিক গুডরিক-এর এমডি অরুণ কুমার সিংহের বক্তব্য, নিয়ম-কানুন সরল করা জরুরি। কিন্তু তার থেকেও বেশি দরকার শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নতুন করে সমীক্ষা চালানো। কারণ, আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানোর পর কেটে গিয়েছে এক দশকেরও বেশি সময়। ফলে চাষে নিয়ন্ত্রণ না-থাকলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমীকরণ কী দাঁড়াবে, তা খুব স্পষ্ট নয়।

ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা-র প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এনওসি না-পাওয়ায় পর্ষদের ভর্তুকি বা ব্যাঙ্ক ঋণ পাচ্ছি না।’’ তবে তিনিও বলছেন, বহু অযোগ্য জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে গুণমানের উপর। ভারতীয় চায়ের মান বজায় রাখতে শুধুমাত্র যোগ্যদেরই চাষের অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া টি ডিলার্স অ্যসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পীযুষ দেশাই। তাঁর প্রশ্ন, পর্ষদ যেখানে মান বাড়াতে ক্ষুদ্র চা চাষিদের উন্নত চাষের পদ্ধতি মানতে বলছে, তখন এই উদ্যোগ তার পরিপন্থী নয় কি?

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আজম মোনেমের যুক্তি, সার্বিক ভাবে চায়ের বাজার খারাপ হলে, সবচেয়ে আগে ক্ষতির মুখে পড়বেন ক্ষুদ্র চাষিরাই। তাঁর দাবি, এখনই অসম ও পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ক্ষুদ্র চা চাষির সংখ্যা এক লক্ষের বেশি। আগে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত চাষের পদ্ধতি শেখানো দরকার। না হলে, শুধু সহজে চা চাষের ছাড়পত্র দিয়ে এই শিল্পের প্রসার ঘটানো শক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE