মন্ত্রকের দাবি, যাঁরা বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে সমর্থ, তাঁরা নিজেদের কোটা ছেড়ে দিলে, ভর্তুকির সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া যাবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, গরিব মানুষের দরজায়। সে ক্ষেত্রে এই পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তাঁরা। ভর্তুকির টাকা যাবে তাঁদের পকেটে, যাঁদের সত্যিই তা দরকার।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, মোদী-সরকারের এই ঘোষণা যথেষ্ট কৌশলী চাল। কারণ, অর্থনীতির হাল ফেরাতে রাজকোষ ঘাটতি যে ছাঁটাই করতে হবে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর তার জন্য যে ডিজেল-কেরোসিন-রান্নার গ্যাসে দেওয়া বিপুল ভর্তুকির বেশ কিছুটা কমানো জরুরি, তা-ও তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু অর্থনীতির যুক্তি বললেও, এই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত ঘোষণার পথে সব থেকে বড় বাধা এখন রাজনীতি। ঠিক যে কারণে এ দিনই প্রধান জানিয়েছেন, এখনই ভর্তুকির সিলিন্ডার -এর দর বৃদ্ধির পরিকল্পনা তাঁদের নেই। অথচ শোনা যাচ্ছিল ওই গ্যাসের দাম ২৫০ টাকা এবং কেরোসিন লিটারে ৪ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ খতিয়ে দেখতে পারে মন্ত্রিসভার রাজনীতি বিষয়ক কমিটি।
এনডিএ-সরকার বিলক্ষণ জানে সদ্য রেলভাড়া বাড়ানোর পর এখনই রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিলে, তাকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানাবে বিরোধীরা। তাতে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে সাধারণ মানুষের কাছে। শুধু তা-ই নয়, এখনই এই দাম বাড়ানো রাজনৈতিক ভাবে আত্মঘাতী হতে পারে বলে মনে করে বিজেপি-ও। বিশেষত সামনেই যেখানে মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট।
আর সেই কারণেই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের এ দিনের ঘোষণাকে নতুন কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এতে কিছু মানুষও যদি নিজের থেকে ভর্তুকি নেওয়ার সুবিধা ছেড়ে দেন, তাতে কেন্দ্রের লাভ। তার উপর বেশ কিছু জন এই সুবিধা ছাড়তে শুরু করলে, আপনেই সামাজিক চাপ তৈরি হতে পারে তাঁদের উপর, যাঁরা বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে সমর্থ।
শুধু তা-ই নয়, তাঁদের মতে, এর দৌলতে বিদেশি লগ্নিকারী, মূল্যায়ন সংস্থাগুলিকেও সদর্থক বার্তা দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা বুঝবে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ে এই সরকার আন্তরিক। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় হয়তো সব তেতো ওষুধ এক সঙ্গে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল হলে দীর্ঘ মেয়াদি ভালর জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত ঘোষণায় মোদী-সরকার পিছপা হবে না বলে বিশ্বাস পোক্ত হবে তাদের।