Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
নয়া কৌশল কেন্দ্রের

স্বেচ্ছায় গ্যাসে ভর্তুকি ছাড়ার আহ্বান

সামর্থ্যে কুলোলে ভর্তুকি ছাড়ুন। স্বেচ্ছায় ‘না’ বলুন রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি-সিলিন্ডারে। সাধ্য থাকলে বাজার দরে রান্নার গ্যাস কিনতে এ বার সাধারণ মানুষকে এই ডাক দিল মোদী-সরকার। যাকে পুরোদস্তুর কৌশলী রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

সামর্থ্যে কুলোলে ভর্তুকি ছাড়ুন। স্বেচ্ছায় ‘না’ বলুন রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি-সিলিন্ডারে। সাধ্য থাকলে বাজার দরে রান্নার গ্যাস কিনতে এ বার সাধারণ মানুষকে এই ডাক দিল মোদী-সরকার। যাকে পুরোদস্তুর কৌশলী রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের দাবি, ইতিমধ্যেই নিজের ইচ্ছায় এই ভর্তুকি প্রকল্পের সুযোগ নেওয়া ছেড়ে দিয়েছেন হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং ইন্ডিয়ান অয়েলের ১০০ জন কর্মী। তাঁদের প্রত্যেককে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি পাঠিয়েছেন পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এই একই পথে হাঁটার জন্য দেশবাসীকেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রক জানিয়েছে, যাঁরা বাজার দরে রান্নার গ্যাস কেনার ক্ষমতা রাখেন, চাইলে তাতে ভর্তুকির সুবিধা আর না নিতে পারেন তাঁরা। এ জন্য শুধু ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠি দিতে হবে। আগামী দিনে তা যাতে অনলাইনে করা সম্ভব হয়, তারও ব্যবস্থা করবে তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলি।

মন্ত্রকের দাবি, যাঁরা বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে সমর্থ, তাঁরা নিজেদের কোটা ছেড়ে দিলে, ভর্তুকির সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া যাবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, গরিব মানুষের দরজায়। সে ক্ষেত্রে এই পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন তাঁরা। ভর্তুকির টাকা যাবে তাঁদের পকেটে, যাঁদের সত্যিই তা দরকার।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, মোদী-সরকারের এই ঘোষণা যথেষ্ট কৌশলী চাল। কারণ, অর্থনীতির হাল ফেরাতে রাজকোষ ঘাটতি যে ছাঁটাই করতে হবে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আর তার জন্য যে ডিজেল-কেরোসিন-রান্নার গ্যাসে দেওয়া বিপুল ভর্তুকির বেশ কিছুটা কমানো জরুরি, তা-ও তাঁদের অজানা নয়। কিন্তু অর্থনীতির যুক্তি বললেও, এই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত ঘোষণার পথে সব থেকে বড় বাধা এখন রাজনীতি। ঠিক যে কারণে এ দিনই প্রধান জানিয়েছেন, এখনই ভর্তুকির সিলিন্ডার -এর দর বৃদ্ধির পরিকল্পনা তাঁদের নেই। অথচ শোনা যাচ্ছিল ওই গ্যাসের দাম ২৫০ টাকা এবং কেরোসিন লিটারে ৪ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ খতিয়ে দেখতে পারে মন্ত্রিসভার রাজনীতি বিষয়ক কমিটি।

এনডিএ-সরকার বিলক্ষণ জানে সদ্য রেলভাড়া বাড়ানোর পর এখনই রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নিলে, তাকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানাবে বিরোধীরা। তাতে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে সাধারণ মানুষের কাছে। শুধু তা-ই নয়, এখনই এই দাম বাড়ানো রাজনৈতিক ভাবে আত্মঘাতী হতে পারে বলে মনে করে বিজেপি-ও। বিশেষত সামনেই যেখানে মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট।

আর সেই কারণেই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের এ দিনের ঘোষণাকে নতুন কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, এতে কিছু মানুষও যদি নিজের থেকে ভর্তুকি নেওয়ার সুবিধা ছেড়ে দেন, তাতে কেন্দ্রের লাভ। তার উপর বেশ কিছু জন এই সুবিধা ছাড়তে শুরু করলে, আপনেই সামাজিক চাপ তৈরি হতে পারে তাঁদের উপর, যাঁরা বাজার দরে সিলিন্ডার কিনতে সমর্থ।

শুধু তা-ই নয়, তাঁদের মতে, এর দৌলতে বিদেশি লগ্নিকারী, মূল্যায়ন সংস্থাগুলিকেও সদর্থক বার্তা দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা বুঝবে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ে এই সরকার আন্তরিক। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় হয়তো সব তেতো ওষুধ এক সঙ্গে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল হলে দীর্ঘ মেয়াদি ভালর জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত ঘোষণায় মোদী-সরকার পিছপা হবে না বলে বিশ্বাস পোক্ত হবে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subsidy cooking gas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE