Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজর রাজকোষ ঘাটতির দিকেই

কিন্তু এই উত্থান কি ধরে রাখতে পারবে সেনসেক্স? ৫ জুলাই নির্মলার বাজেট পেশের দিন সকালেও সেনসেক্স ৪০,০০০ ছুঁয়েছিল। কিন্তু তার পরেই বাজেটে হতাশ হয়ে পতন শুরু হয় বাজারে।

শুক্রবারের রকেট গতি ধরে রাখতে পারবে তো মুম্বই শেয়ার বাজার?

শুক্রবারের রকেট গতি ধরে রাখতে পারবে তো মুম্বই শেয়ার বাজার?

অমিতাভ গুহ সরকার 
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

এক দিকে কর্পোরেট করে বড় ছাড়। অন্য দিকে কিছু শিল্পে জিএসটি কমানো— শুক্রবার কেন্দ্রের এই জোড়া পদক্ষেপে উচ্ছ্বাস ফিরেছে শেয়ার বাজারে। ডলারের নিরিখে বেড়েছে টাকাও। অনেকেই বলছেন, এটি বস্তুত ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের তৃতীয় ও নির্মলা সীতারামনের দ্বিতীয় বাজেট। যেখানে রয়েছে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে টেনে তোলার মরিয়া চেষ্টা। ঢালাও ত্রাণের ব্যবস্থা। কিন্তু বিপুল কর ছাড়ের প্রভাব রাজকোষের উপরে কতটা পড়বে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, এর পরে সরকারি ব্যয় আদৌ কতটা বাড়ানো সম্ভব!

একই দিনে এতগুলি সুবিধা যে পাওয়া যাবে, তার আশা ছিল না। ফলে ঘোষণামাত্রই আগাম দেওয়ালির রোশনাই শুরু হয় বাজারে। সেনসেক্স ১,৯২১ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছয় ৩৮,০১৪ অঙ্কে। নিফ্‌টি বাড়ে ৫৬৯ পয়েন্ট। থামে ১১,২৭৪ অঙ্কে। লগ্নিকারীদের সম্পদ বেড়েছে ৬.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা। বেড়েছে ইকুইটি ফান্ডগুলির ন্যাভ। আবার রাজস্ব আয় কমার আশঙ্কায় বেড়েছে বন্ড ইল্ডও। আশঙ্কা, ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্র বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলতে পারে। শুক্রবার ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ১৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ছোঁয় ৬.৭৯%। এতে চাপ বাড়বে বন্ড ফান্ডের ন্যাভের উপরে।

কিন্তু এই উত্থান কি ধরে রাখতে পারবে সেনসেক্স? ৫ জুলাই নির্মলার বাজেট পেশের দিন সকালেও সেনসেক্স ৪০,০০০ ছুঁয়েছিল। কিন্তু তার পরেই বাজেটে হতাশ হয়ে পতন শুরু হয় বাজারে। সেই সঙ্গে পণ্যের চাহিদায় পতনের প্রভাব যোগ হওয়ায় সূচক নামে ৩৬,০০০-এর ঘরে।

কী পেল শিল্প

• কর্পোরেট কর কমে ২২%। তবে এই সুবিধা নিলে আগে প্রাপ্ত ছাড়গুলি মিলবে না।

• প্রকৃত করের হার ৩৪.৯৪% থেকে কমে হবে ২৫.১৭%।

• নতুন হার গত এপ্রিল থেকেই প্রযোজ্য।

• যে সব সংস্থা কম করের বিকল্প বেছে নেবে, তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিকল্প কর (ম্যাট) প্রযোজ্য হবে না।

• দেশীয় নতুন সংস্থার ক্ষেত্রে করের হার ১৫%। সারচার্জ, সেস-সহ প্রকৃত হার দাঁড়াবে ১৭.০১%। যা আগে ছিল ২৯.১২%। এদেরও ম্যাট দিতে হবে না।

• যারা আগের কর ব্যবস্থায় থাকতে চাইবে তাদের ম্যাট ১৮.৫% থেকে কমে ১৫%।

বাজারের জন্য

• শেয়ারের মূলধনী লাভের উপরে অতি ধনীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হবে না। একই সুবিধা পাবে বিদেশি লগ্নিকারীরাও।

• ৫ জুলাইয়ের আগে শেয়ার ফেরানোর (বাই ব্যাক)

রাজকোষে প্রভাব

• সরকারের কোষাগারের আয় কমবে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা।

• ২০১৯-২০ বছরে কর্পোরেট করের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা।

অর্থাৎ, ক্ষত পুরোপুরি শুকোয়নি। একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক—

• কর কমায় লাভজনক সংস্থাগুলির কর পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) বাড়বে। ফলে বাড়বে শেয়ার পিছু আয় বা ইপিএস। কমবে দাম ও আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও)। অর্থাৎ সুযোগ থাকবে ওই সব শেয়ারের দাম বাড়ার।

• যে সব সংস্থা বড় লোকসানে চলছে তাদের বড় কোনও সুবিধা হবে না।

• কর হ্রাসে নিট লাভ বাড়বে। ডিভিডেন্ড বাড়তে পারে। কিন্তু চাহিদা বাড়ার পথ তৈরি হবে না।

• কর ছাড়ের ফলে লগ্নিকারীরা নতুন সংস্থা তৈরিতে উৎসাহিত হতে পারেন। বাড়তে পারে কর্মসংস্থান।

• সিমেন্ট, বিস্কুট, অধিকাংশ গাড়ির কর কমানো হয়নি। অর্থাৎ এই সব শিল্পে চাহিদার ভাটা এখনই কাটছে না।

• বাজারকে বাড়াতে বা অন্তত একই জায়গায় রাখতে বাড়াতে হবে চাহিদা। এর জন্য বাড়াতে হবে কর্মসংস্থান এবং নগদের জোগান। এমনিতে সরকারি কোষাগারের হাল সুবিধার নয়। তার উপরে কর ছাড়ের ফলে সরকারের পক্ষে কতটা উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া সম্ভব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corporate Tax Nirmala Sitharaman Fiscal Deficit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE