Advertisement
E-Paper

ধস বাজারে, কাঠগড়ায় সেই চিন

আরও খারাপ হয়েছে চিনের আর্থিক হাল। আর তার জেরে ধস নেমেছে সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। রেহাই পায়নি ভারতও। সোমবার বছরের দ্বিতীয় লেনদেনের দিন সেনসেক্সের পতন হয়েছে প্রায় ৫৩৮ পয়েন্ট। পাশাপাশি এ দিন বড় মাপের পতন হয়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টির।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০৩

আরও খারাপ হয়েছে চিনের আর্থিক হাল। আর তার জেরে ধস নেমেছে সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। রেহাই পায়নি ভারতও। সোমবার বছরের দ্বিতীয় লেনদেনের দিন সেনসেক্সের পতন হয়েছে প্রায় ৫৩৮ পয়েন্ট। পাশাপাশি এ দিন বড় মাপের পতন হয়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্‌টির।

চিনের বাজারে শেয়ার দর দ্রুত পড়তে থাকায় এ দিন বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রক। যা অন্য শেয়ার বাজারগুলিতে লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

বাজারে ধসের হাত ধরে এ দিন বড় মাপের পতন হয়েছে টাকার দামেও। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়েছে ৪৭ পয়সা। যার ফলে বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৬.৬১ টাকা।

ভারতে সেনসেক্সের পতন হয়েছে প্রায় ৫৩৭.৫৫ পয়েন্ট। সূচক ফের নেমে এসেছে ২৫ হাজারের ঘরে। এক সময়ে পতন ৫৫০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থিতু হয় ২৫,৬২৩.৩৫ অঙ্কে। ১৭১.৯০ পয়েন্ট পড়ে নিফ্‌টি দিনের শেষে থামে ৭৭৯১.৩০ অঙ্কে।

এ দিনের পতনের জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা, যার মধ্যে রয়েছে:
(১) চিনের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতির ইঙ্গিত
(২) সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জেরে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক পটে অস্থিরতা
(৩) টাকার দামের পতন
(৪) ভারতেও শিল্প বৃদ্ধির হার গত ২৮ মাসে সব থেকে নীচে চলে আসার ইঙ্গিত।

একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে, চিনে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার দ্রুত কমছে। পতন অব্যাহত রয়েছে গত পাঁচ মাস ধরে। এই খবরের জেরে এই দিন প্রথমে চিনের শেয়ার বাজারে ধস নামে। প্রধান শেয়ার বাজার সাংহাইয়ে সূচক ৭ শতাংশ পড়ে যায়। সে দেশের নিয়ম অনুয়ায়ী এর পরই শেয়ার বিক্রি বন্ধ করে দেয় বাজার নিয়ন্ত্রক। চিনা বাজার পড়ার আর একটি কারণ, বড় শেয়ারহোল্ডারদের বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তা। পতন ঠেকাতে যাঁদের হাতে ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে, তাঁদের বিক্রির উপর চিন যে-নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তার মেয়াদ শেষ শুক্রবার। তখন বিক্রির হিড়িকে দর আরও পড়ার আশঙ্কাতেই হাতের শেয়ার বেচে দিচ্ছেন লগ্নিকারীরা।

চিনের শেয়ার বাজারে ধসের খবর এশিয়া-সহ বিশ্বের অন্য বহু শেয়ার বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

চিনের বাজারে ধসের খবরের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ভারতেও উৎপাদন শিল্পের খারাপ হাল নিয়ে নিক্কেই পার্চেজিং ম্যানেজার্স ইন্ডেক্স-এর ভিত্তিতে মার্কিটের সমীক্ষা সূচকের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে।

এ দিনের পতনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বাজারও চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘সমস্যা আমাদের দেশে নয়। বিশ্বায়নের যুগে বিদেশের সমস্যার প্রভাবে আমাদের দেশের শেয়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশে কাল কী হবে, তা এখন কেউই ঠিক করে বলতে পারবে না। তাই বাজার কেমন যাবে, তা বলা কঠিন।’’

তবে ভারতের বাজার নিয়ে বিশেষ আশাবাদী ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং বাজার বিশেষজ্ঞ কমল পারেখ। কমলবাবু মনে করেন ‘‘আগামী তিন-চার দিন বাজার খারাপ গেলেও ফের তা চাঙ্গা হতে থাকবে।’’ কেন তিনি এমনটা আশা করছেন? কমলবাবুর উত্তর, ‘‘কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, ভারতের আর্থিক ও রাজনৈতিক চিত্র এখন বেশ ভাল। তাই নিজের জোরেই ভারতের বাজার যে দ্রুত চাঙ্গা হবে, তা নিয়ে আমি বাজি ধরতে রাজি।’’

কমলবাবুর মতোই আশাবাদী ক্যালাকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে ২০১৬ সালে ভারতের বাজার ভাল রকম তেজী হবে। তার একটাই কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বের যে-কোনও দেশের থেকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি অনেক বেশি। এর জন্য লগ্নির ক্ষেত্র পছন্দ করার সময়ে ভারতকে অবজ্ঞা করা বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পক্ষে মুশকিল হবে।’’

তবে ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি এ দিন ৬৬৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। অবশ্য, শুধু তারাই নয়, এ দিন ভারতীয় সংস্থাগুলিও শেয়ার বিক্রি করেছে ২২২ কোটি টাকার।

বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির এই শেয়ার বিক্রি অবশ্য কপালে ভাঁজ ফেলেছে বেশ কিছু বাজার বিশেষজ্ঞের। তাঁদের আশঙ্কার কারণ কী? তাঁরা বলেন, এই সব সংস্থা বছরের প্রথমেই কোন দেশে কত লগ্নি করবে, সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা ছকে ফেলে। ফলে বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, চিনের আর্থিক হাল খারাপ হতে থাকার বিরূপ প্রভাব বিশ্বের শেয়ার বাজারগুলির উপর পড়বে।

অন্য দিকে, আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ আবার সুদের হার বাড়াবে বলে বাজারে খবর রয়েছে। আর তা বাস্তবায়িত হলে, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি আগামী দিনে অনিশ্চিত শেয়ার বাজারের পরিবর্তে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসাবে ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানত বা ঋণপত্রের মতো মার্কিন মুলুকের নিশ্চিত আয়ের প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে।

China recession
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy