Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
মজুত মাত্র চার দিনের কয়লা

ভয়াবহ বিদ্যুত্‌ সঙ্কট এড়াতে মরিয়া চেষ্টা কোল ইন্ডিয়ার

বিদ্যুত্‌ সংস্থাগুলির ভাঁড়ারে মজুত মাত্র চার দিনের কয়লা। এই অবস্থায় দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রে প্রধান কাঁচামাল কয়লার অভাবে উত্‌পাদন তলানিতে। বড় ধরনের বিদ্যুত্‌ বিপর্যয় এড়াতে তাই যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় কয়লা জোগান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠেপড়ে লেগেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

বিদ্যুত্‌ সংস্থাগুলির ভাঁড়ারে মজুত মাত্র চার দিনের কয়লা।

এই অবস্থায় দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রে প্রধান কাঁচামাল কয়লার অভাবে উত্‌পাদন তলানিতে। বড় ধরনের বিদ্যুত্‌ বিপর্যয় এড়াতে তাই যুদ্ধকালীন তত্‌পরতায় কয়লা জোগান দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠেপড়ে লেগেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া।

কিছু বিদ্যুত্‌ সংস্থা ইতিমধ্যেই কয়েকটি ইউনিট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতি শেষ বার তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালের ৩০-৩১ জুলাই। সে বার নজিরবিহীন বিদ্যুত্‌ ঘাটতির কবলে পড়েছিল সারা দেশ, বিশেষ করে উত্তর ও পূর্ব ভারত মিলিয়ে ২২টি রাজ্যে বিদ্যুত্‌ গ্রিড বসে যায়। ফলে জীবনযাত্রা প্রায় থমকে গিয়েছিল ৬২ কোটি মানুষের।

এ বারেও দেশের একটি বড় অঞ্চলে যাতে অন্ধকার নেমে না-আসে, তার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কোল ইন্ডিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, সেই কারণে বহু বছরের সঞ্চিত কয়লাতেও হাত দিতে বাধ্য হচ্ছে সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে রেলওয়ে সাইডিং, কয়লা ওঠানো-নামানো হয় এমন এলাকা এবং অন্য উত্‌স থেকে তিল তিল করে সঞ্চিত কয়লা।

যে-সমস্ত বিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের অবস্থা সঙ্গীন, সেখানেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কয়লা জোগাচ্ছে কোল ইন্ডিয়া। যে-সব সংস্থার অবস্থা আরও খারাপ, সেখানে সরবরাহ বাড়াতে কোল ইন্ডিয়া তার শাখা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে। বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন সংস্থাগুলিকেও শুধুমাত্র রেলের উপর ভরসা না-করে জরুরি প্রয়োজনে নিজস্ব ট্রাকে করে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়লা নিয়ে আসতে বলেছে কোল ইন্ডিয়া। উদাহরণ হিসেবে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আম্রপালি খোলা-মুখ খনির কথা বলেছে কোল ইন্ডিয়া। এ ধরনের খনির ক্ষেত্রে পুরোপুরি রেলের পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করলে সঙ্কট বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে কোল ইন্ডিয়া। কারণ মালগাড়ি দেরিতে চলার জন্য অনেক সময়েই কয়লা পৌঁছয় দেরিতে।

বিদ্যুত্‌ কেন্দ্রে কয়লা জোগানে টান পড়ার পিছনেও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত। এগুলি হল:

ভারী বর্ষার ফলে পূর্ব ভারতে কোল ইন্ডিয়ার উত্‌পাদন নেমে আসা। গত এক সপ্তাহ যাবত্‌ তা দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১০ লক্ষ টন, যেখানে গড় উত্‌পাদন দিনে ১৩ লক্ষ টন।

ভিজে যাওয়া কয়লা বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদনে কাজে না-লাগা।

উপযুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার অভাব।

দেশে মোট কয়লা উত্‌পাদনের ৮০ শতাংশের বেশি আসে কোল ইন্ডিয়া-র হাত ধরে। সংস্থার সঞ্চয় ভাণ্ডার মাত্র ৩ কোটি টন, এখন যেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে কয়লা পাঠানো হচ্ছে ধুঁকতে থাকা বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন সংস্থাগুলিকে। এই সব বিদ্যুত্‌ সংস্থাকে কোল ইন্ডিয়া চলতি অর্থবর্ষে ৪০ কোটি ৮০ লক্ষ টন কয়লা সরবহাহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। জোগান তার চেয়ে ৩ কোটি টন কম হতে পারে বলে সংস্থা সূত্রের ইঙ্গিত। এর জেরে আমদানি বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ইতিমধ্যেই বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম কয়লা আমদানিকারী দেশ ভারত।

এই উত্‌পাদন সঙ্কটের মধ্যেই পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছে কোল ইন্ডিয়া ইউনিয়নগুলির চলতি মাসেই তিন দিন ‘নিয়ম মাফিক কাজ’ করার হুমকি। তাদের দাবি, মূলত যে-সব বেসরকারি সংস্থা কয়লা ব্লক হাতে পেয়েও তা ফেলে রেখেছে, তাদের কাছ থেকে সেগুলি ফিরিয়ে নেওয়া হোক।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সব কয়লা ব্লক বণ্টনই বেআইনি ভাবে করা হয়েছে বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগিও আদালতে জানান, কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে আদালতের রায় কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিয়েছে। তারা এগুলি নতুন করে বণ্টনেও রাজি।

কিন্তু তার মধ্যে যে-সব খনি থেকে উত্‌পাদন শুরু হয়েছে, সেগুলির বণ্টন বহাল রাখা জরুরি। তার কারণ দেশ জুড়ে যখন তীব্র বিদ্যুত্‌ সঙ্কট চলছে, তখন এগুলির বণ্টন বাতিল করলে বিদ্যুত্‌ সংস্থাগুলিতে কয়লার জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়বে। ফলে আরও ঘোরালো হবে বিদ্যুত্‌ সঙ্কট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE