প্রতীকী ছবি।
অতিমারির ঢেউ সামলে গত বছর অর্থনীতির কিছুটা মাথা তোলার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। তবে শুক্রবার প্রকাশিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্টে অনেক বেশি স্পষ্ট আগামী সম্পর্কে উদ্বেগের বার্তা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে মূল্যবৃদ্ধিকে ক্রমশ উপরে ঠেলে কাড়ছে দেশের বাজারের চাহিদা বা গতি হারিয়ে অর্থনীতির আকাশ যে ফের কালো মেঘে ঢাকা পড়ছে, সেই হুঁশিয়ারি স্পষ্ট। এটাও বলা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা সম্ভাবনাময় দেশগুলির (ভারত যে তালিকায় পড়ে) আর্থিক বাজারের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, মঙ্গলবার গত অর্থবর্ষ এবং জানুয়ারি-মার্চে দেশে বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে। তার আগে এই রিপোর্টে শীর্ষ ব্যাঙ্কের খানিকটা সুর বদল তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের বক্তব্য, এর আগে আরবিআইয়ের ইঙ্গিত ছিল অনিশ্চয়তা বহাল থাকলেও বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা কিছুটা কমেছে। এখন মূল্যবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পণ্যের দামে লাগাম পরানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ দিনের রিপোর্টে জিডিপি-র বৃদ্ধি নিয়ে তাদের উদ্বেগ অনেক বেশি।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের সতর্কবার্তা, দেশের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে চড়ছে (এখন ১৫ শতাংশের উপরে), তাতে খুচরো বাজারের দামের উপরে তার চাপ পড়ার ঝুঁকি থাকছে। বলা হয়েছে, শিল্পে ব্যবহারের কাঁচামালের চড়া দাম, পরিবহণ খরচ এবং জোগান সঙ্কটই সেই পরিস্থিতি উস্কে দিচ্ছে।
টিকাদানে গতি ও করোনা বিধিনিষেধ শিথিলের পরে ব্যক্তিগত চাহিদা বেড়েছে, মত আরবিআই-এর। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় জটিলতা সত্ত্বেও দেশের রফতানি বৃদ্ধি ইতিবাচক। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, জানুয়ারি-মার্চে চাহিদা শ্লথ হওয়ার প্রতিফলনও চোখে পড়েছে। রিপোর্টে দাবি, মূল্যবৃদ্ধির এই চাপের মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধির পথে এগোতে কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। পুনর্গঠনের সুবিধা পাওয়া কোনও ঋণ বাকি পড়ছে কি না, সে ব্যাপারেও তারা সতর্ক থাকতে বলেছে ব্যাঙ্কগুলিকে।
ইঙ্গিত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না- থামলে বা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না-এলে অর্থনীতির অবস্থা আরও কাহিল হতে পারে। যে কারণে ভবিষ্যতে দেশের বৃদ্ধির পথে থাকার প্রসঙ্গে আরবিআই জোর দিয়েছে কিছু শর্ত পূরণে। যেমন, বিভিন্ন পণ্যের জোগানের বাধা কাটাতে হবে। এমন ভাবে ঋণনীতি ছকতে হবে, যা টেনে নামাবে মূল্যবৃদ্ধিকে। বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মূলধনী অর্থাৎপরিকাঠামো তৈরিতে খরচে। যাতে উৎপাদন বাড়ে। উৎপাদন বৃদ্ধি কাজ বাড়িয়ে চাহিদাকে চাঙ্গা করতে পারে।
পাশাপাশি যে সব সংস্কার করোনা পরবর্তী সময়ে কর্মীদের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে ও দক্ষতা বাড়াবে, সেগুলি জরুরি। কারণ তার হাত ধরেই উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যাবে, যা স্থায়ী, সামঞ্জস্য পূর্ণ ও সকলকে সুবিধা দেওয়ার মতো বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে দেশকে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy