পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্পপতি তৈরিতে মূলধন ঢালতে পিছপা নয় বিভিন্ন উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা। কিন্তু হাতের কাছে সব উপকরণ মজুত থাকা সত্ত্বেও তোলাবাজি ও ইন্সপেক্টর-রাজের দৌরাত্ম্যে মার খাচ্ছে এ রাজ্যের ছোট ও মাঝারি সংস্থা। এই সমস্যা ছেঁটে ফেলতে না-পারলে বিশাল সম্ভাবনার কণামাত্র বাস্তবায়িত করা যাবে না বলে অভিযোগ দেশের বৃহত্তম উদ্যোগ সহায়ক ব্যাঙ্ক, স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বা সিডবি-র। অথচ দক্ষ মানবসম্পদ ও পরিকল্পনায় স্বকীয়তা কাজে লাগিয়ে শিল্প গড়তে উৎসাহী রাজ্যের অনেক ছোট উদ্যোগী।
শনিবার কলকাতায় বণিকসভা সিআইআই-এর অনুষ্ঠানে যোগ দেন সিডবি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড-এর প্রধান অনন্ত পি শর্মা। সিআইআই-এর মঞ্চ থেকে তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিশেষ একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। ২০০ কোটি টাকার এই তহবিল থেকে সদ্য তৈরি বা স্টার্ট আপ সংস্থাদের পুঁজি দেওয়া হবে। অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তোলাবাজির সমস্যা এতটাই বেড়েছে যে, ব্যবসার কথা না-ভেবে উদ্যোগপতিদের অধিকাংশ সময় এই সমস্যা সামলাতে চলে যায়। নিত্য এই ঝামেলায় পড়ে লাভের মুখ দেখতে পারছে না বহু ছোট ও মাঝারি সংস্থা।’’
শুধু ছোট ও মাঝারি সংস্থা নয়, সিন্ডিকেট-রাজের সমস্যায় পড়ে বড় শিল্পও। তবে সে ক্ষেত্রে আর্থিক ও অন্যান্য জোর বেশি থাকার ফলে সমস্যা সামলানো সহজ বলে বলে মনে করেন শর্মা। কিন্তু সামান্য পুঁজি নিয়ে শুরু করা নতুন উদ্যোগপতিদের পক্ষে তোলাবাজির টাকা মেটানো কঠিন। এবং একবার টাকা দিলেই যে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে, তা-ও নয়। তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসার প্রতি পদক্ষেপে এই সমস্যা উঠে আসার কারণেই এ রাজ্যের নতুন উদ্যোগপতিরা যতটা সফল হতে পারতেন, ততটা পারছেন না। সমস্যা নির্মূল না-করলে এ রাজ্যে ছোট ও মাঝারি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।’’
পশ্চিমবঙ্গের মতো মহারাষ্ট্রের জন্যও এ ধরনের তহবিল তৈরি করেছে সিডবি। একই অঙ্কের টাকা মহারাষ্ট্রের জন্যও বরাদ্দ করেছে তারা। এই ধরনের পুঁজি ঢালার সময়সীমা বছর পাঁচেক ধরা হয়েছে। তবে তার আগেই এই আর্থিক সুবিধার সদ্ব্যবহার হলে, নতুন পুঁজির তহবিল তৈরি করতে পিছপা হবে না সিডবি।
এ রাজ্যে সংস্থা প্রতি পুঁজি ঢালার ঊর্ধ্বসীমা ৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, স্টার্ট আপ সংস্থার জন্য এই পুঁজি যথেষ্ট। তবে সেই পুঁজি কাজে লাগিয়ে লাভের মুখ দেখা জরুরি। কারণ পরবর্তী পর্যায়ের পুঁজি পেতে সংস্থার লাভজনক হওয়া বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যের ছোট ও মাঝারি সংস্থা সিন্ডিকেট-রাজের কারণে মুখ থুবড়ে পড়লে, সম্প্রসারণের সম্ভাবনাই থাকবে না বলে মনে করছে সিডবি।
সিডবি-র এই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা রাজারহাটের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকই প্রমাণ করেছে। সিন্ডিকেট সমস্যার কারণে রাজারহাটে ছোট-মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জন্য তৈরি তালুক এখনও খুঁড়িয়ে চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগ টানতে বাম আমলে রাজারহাটে ৩০ একর জমি চিহ্নিত হয়। ৪৮টি সংস্থা এখানে জমি নেয়। দফায় দফায় সিন্ডিকেটের পাওনা মিটিয়ে অধিকাংশ সংস্থাই আসল কাজ শুরু করতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে লন্ডনের সংস্থা নিওরোলজিক। অফিসের জন্য বাড়ি তৈরি করতে গিয়েই সিন্ডিকেটের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছে সংস্থা। টাকা দেওয়ার পরেও স্বস্তিতে কাজ করতে পারেনি তারা। অবশেষে প্রকল্প অর্ধসমাপ্ত রেখে লন্ডনে ফিরে গিয়েছেন নিওরোলজিকের কর্তা, যিনি এ শহরেই জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy