ছবি: সংগৃহীত
কাহিল চাহিদা ও শ্লথ বৃদ্ধির জেরে এমনিতেই উদ্বেগে ছিল অর্থনীতি। পরের দফায় কামড় বসায় করোনাভাইরাস। দেশীয় অর্থনীতির মন্থর গতিকে সব সময় তেমন আমল না-দিলেও, করোনার ধাক্কায় ত্রাহি ত্রাহি রব বাজারে। হুড়মুড়িয়ে নামতে থাকে সূচক। সেই পতন বন্ধ হয়নি এখনও। বরং শুক্রবার সূচকের পথে নতুন কাঁটা হয়েছে ইয়েস ব্যাঙ্কে আর্থিক নয়ছয়। সব মিলিয়ে আপাতত ভালুকের গ্রাসেই সূচক। তবে শুধু ভারতে নয়, করোনা কামড় বসিয়েছে বিশ্ব জুড়ে। প্রায় সব দেশের শেয়ার বাজারই পড়ছে। গত দু’সপ্তাহে ভারতে ১০টি কাজের দিনে মাত্র দু’দিন সবুজে ফিরেছিল বাজার। বাকি আট দিন অনেকটাই নেমেছে।
করোনা সংক্রমণের জেরে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ায় সঙ্কটে বহু শিল্প। যে সব দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছিল, তারা এখন গভীর সঙ্কটে। বৃদ্ধি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা সকলেরই। সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ভারতে বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪.৭%। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের সমীক্ষা অনুযায়ী, শুধু করোনার আঘাতেই জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে তা পিছলে যেতে পারে ৪০ বেসিস পয়েন্ট। অর্থাৎ সামনে আশার আলো তেমন নেই। বরং কসরত চলছে সঙ্কটের মোকাবিলা করা নিয়ে। এই অবস্থায় বাজারে পতন থামবে কবে, প্রশ্ন এখন সেটাই। সূচকের নাগাড়ে পতনে আহত মিউচুয়াল ফান্ডও। বিশেষত শেয়ার নির্ভর (ইকুইটি) ফান্ডগুলি। বেশ খানিকটা করে ন্যাভ কমেছে অনেক প্রকল্পেই।
এই অবস্থায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আচমকা ইয়েস ব্যাঙ্কের পর্ষদ ভেঙে দিতেই কাঁপুনি বাড়ে লগ্নিকারীদের। ব্যাঙ্কটির আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার খবরে শুক্রবার এক সময়ে সেনসেক্স নানে ১৪৫৯ পয়েন্ট। দিনের শেষে পতন দাঁড়ায় ৮৯৪ পয়েন্ট। পড়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার শেয়ার। গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্কের পরে ফের বড় মাপের কোনও বেসরকারি ব্যাঙ্ককে এ ভাবে ভেঙে পড়তে দেখা গেল। অর্থমন্ত্রী গ্রাহকদের জমা টাকা সুরক্ষিত থাকবে বলে আশ্বাস দিলেও, লোকসান বইতে হবে ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ারে লগ্নিকারীদের, যার মধ্যে থাকবে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডও। লোকসান হতে পারে বেশ কিছু বন্ড ফান্ডেও। এই বিপর্যয়ের কারণে মানুষের আস্থা কমবে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির প্রতি। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রথম ১০টি ব্যাঙ্কের মধ্যে তিনটি বেসরকারি, ব্যবসার দিক থেকে যারা ভালই করছে।
এ বার তাকানো যাক সপ্তাহের অন্যান্য খবরগুলির দিকে—
• এসবিআই কার্ডসের ১০,৩৩৫ কোটি টাকার পাবলিক ইসুতে আবেদন জমা পড়েছে প্রয়োজনের ২৬.৫ গুণ।
• সোনার দাম তুঙ্গে। শুক্রবার ১২৫০ টাকা বেড়ে, পাকা সোনা (১০ গ্রাম) ছুঁয়েছিল ৪৫,০৮০ টাকা। এতে পৌষ মাস গোল্ড ফান্ড, গোল্ড বন্ড ও গোল্ড ই টি এফে লগ্নিকারীর।
• পড়ছে টাকার দাম। শুক্রবার ডলার ৪৬ পয়সা বেড়ে হয় ৭৩.৭৯ টাকা। এতে বাড়বে কেন্দ্রের আমদানি বিল। চাপে আমদানি-নির্ভর শিল্প।
• বিশ্ব বাজারে দাম কমছে তেলের। ভারতের পক্ষে ভাল, কারণ কমবে সরকারের তেল আমদানির বিল, পরিবহণ খরচও।
• করোনা আক্রমণ থেকে অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেড সুদ কমিয়েছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট।
• চিনে গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্পে কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ভারতীয় গাড়ি নির্মাণ শিল্প।
• ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯% শেয়ার হাতে নেবে স্টেট ব্যাঙ্ক। প্রথম দফায় এসবিআই কিনবে ২৪৫ কোটি শেয়ার, দাম পড়বে ২৪৫০ কোটি টাকা। স্টেট ব্যাঙ্কের দাবি, ব্যাঙ্কটিতে লগ্নি ১০,০০০ কোটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে ও এতে হিসেবের খাতায় চাপ পড়বে না।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy