Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নোট-কাণ্ডে তলানিতে টাকার দাম

নোট বাতিলের কোপে ভারতীয় টাকার বিনিময়মূল্য। গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ৯ তারিখে প্রথম ধাক্কাতেই ডলারে টাকা নামে ৩১ পয়সা, যদিও বাজার বন্ধের সময়ে সে দিন তা কাটিয়ে ওঠে ভারতীয় মুদ্রা।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share: Save:

নোট বাতিলের কোপে ভারতীয় টাকার বিনিময়মূল্য।

গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ৯ তারিখে প্রথম ধাক্কাতেই ডলারে টাকা নামে ৩১ পয়সা, যদিও বাজার বন্ধের সময়ে সে দিন তা কাটিয়ে ওঠে ভারতীয় মুদ্রা। ১০ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত হিসেব ধরলে শুধু ১৭ তারিখ বাদ দিলে টানা পড়েছে টাকা। গত ৯ নভেম্বর ১ ডলারের দাম ছিল ৬৬.৪৩ টাকা। ১৮ তারিখে তা থেমেছে ৬৮.১৩ টাকায়। ডলারে টাকার নিট পতন ১৭০ পয়সা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে নোট-কাণ্ডের জেরে শেয়ার বাজারে মন্দা ও পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে ডলারের শক্তি বৃদ্ধি টাকার পড়ায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।

এর পিছনে যে-সব কারণ কাজ করছে, সেগুলি হল:

• ভারতে নোট বাতিল ঘিরে অনিশ্চয়তায় আতঙ্কিত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। তারা এ দেশের বাজারে একটানা শেয়ার বিক্রি করে চলেছে, শুক্রবারও যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২৬ কোটি টাকা

• কালো টাকা নিয়ে কড়াকড়ির আঁচ তাদের যাতে গায়ে না-লাগে, সে জন্য বাড়তি সাবধানী বিদেশিরা। অথচ এই সব সংস্থার লগ্নির উপর এখনও অনেকটাই নির্ভর করে ভারতের শেয়ার বাজারের ওঠা-পড়া

• বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করলে তারা সেই খাতে পাওয়া টাকা ডলারে পরিণত করেই নিজেদের দেশে নিয়ে যায়, যার জেরে চাপ বাড়ে ডলারের জোগানে, ঊর্ধ্বমুখী হয় তার দাম

• বিশ্ব বাজারেও বিভিন্ন মুদ্রার তুলনায় ডলারের বিনিময়মূল্য এই মুহূর্তে গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি

• মার্কিন অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ভাল হওয়ার জেরে তুলনায় কিছুটা তাড়াতাড়িই সুদের হার বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন জ্যানেট ইয়েলেন। যার প্রভাবে চড়ছে ডলার

• মার্কিন অর্থনীতিতে সুদ বাড়লে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতের বাজার থেকে আরও বেশি পরিমাণে লগ্নি তুলে নেবেন বলেও আশঙ্কা এ দেশের শেয়ার বাজার মহলের। কারণ, সে ক্ষেত্রে তারা স্বদেশে অর্থ লগ্নিতেই বেশি উৎসাহিত হবে। সেই কারণেও এখন থেকে তারা কিছুটা লগ্নি সরিয়ে নিচ্ছে বলে বাজার সূত্রের ইঙ্গিত। আর, এই প্রবণতাতেই ইন্ধন জুগিয়েছে ভারতে নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তা

সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রয়ক্ষমতা কমছে ভারতীয় টাকার। মহার্ঘ হচ্ছে আমদানি। তার কারণ, ডলারের দাম চড়ার অর্থ প্রতি ১ টাকা খরচ করলে বিশ্ব বাজার থেকে কেনা যাবে কম মূল্যের পণ্য। তবে টাকার কম দাম একই সঙ্গে ভারতের রফতানি পণ্যের বাজার বাড়াতে সাহায্য করবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। কারণ, ১ ডলার খরচ করে এখন আগের থেকে বেশি মূল্যের ভারতীয় পণ্য কিনতে পারবেন বিদেশিরা। কিন্তু সব মিলিয়ে বৈদেশিক বণিজ্যে ঘাটতি বাড়ারই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা। কারণ, অশোধিত তেল, সার ইত্যাদির জন্য ভারত মূলত আমদানি-নির্ভর। তাই আমদানির খরচ বাড়বে। তবে রফতানির পরিমাণ কতটা বাড়বে, সেটা অনিশ্চিত। ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি এখনও সার্বিক ভাবে চাঙ্গা না-হওয়াতেই রফতানি ঢিমেতালে এগোচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রেরও ইঙ্গিত।

আসলে বিশ্ব অর্থনীতিতেও এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তা বিস্তর। এক দিকে, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্তে (ব্রেক্সিট) পাউন্ডের দর পড়েছে। অন্য দিকে, অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দা হিসেবে বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চিত সময়ে (যদি মার্কিন অর্থনীতি টালমাটাল না-থাকে) ডলারের দাম বাড়ে। ফলে তার সাপেক্ষে পড়ে টাকার দর। এখনও তা-ই হচ্ছে।

টাকার পতনে ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ পড়েছে ভারতীয় আমদানিকারীদের। তাঁরাও ডলারের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছেন, যা তার দাম আরও কিছুটা টেনে তুলছে ভারতের বাজারে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম এখনও তুলনায় কম থাকলেও এ বার তা বাড়ার মুখ নেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ, তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক ইতিমধ্যেই তাদের উৎপাদন কমিয়ে আনতে রাজি হয়েছে। এখন গড়ে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম ৪৫ ডলারের মতো। তা ঊর্ধ্বমুখী হলে ভারতের উপর চাপ বাড়বে, যার জেরে বাণিজ্য ঘাটতি উদ্বেগজনক হতে পারে বলে ইঙ্গিত সরকারি সূত্রেরও।

ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জঙ্গানেশ শনিবারই বলেন, সব ক’টি উৎপাদনকারী দেশ যদি ভিয়েনায় ৩০ নভেম্বরের বৈঠকে একমত হয়ে তেল উত্তোলন ছাঁটাইয়ে রাজি হয়, তা হলে দর বেড়ে ব্যারেলে ৫৫ ডলার ছোঁবে। উৎপাদনকারীর তালিকায় ওপেক সদস্য ছাড়াও আছে রাশিয়ার মতো দেশ।

তবে ডলারে টাকার দামে অত্যধিক ওঠা-পড়া ঠেকাতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কও তৎপর। প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাজারে ডলার বিক্রি করে তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে নোট-কাণ্ডের প্রভাব কেটে গেলে টাকা ঘুরে দাঁড়াবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উন্নয়নশীল দুনিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ ক্ষেত্রে টাকাকে কয়েক কদম এগিয়েই রেখেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dollar Money Currency note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE