Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

স্বাস্থ্য বিমার কথা ভুলে গেলে চলবে?

চাকরি করছেন এক বছর। সবেমাত্র জমানো শুরু করেছেন। চোখে অনেক স্বপ্ন রয়েছে। তা পূরণে শুরু থেকে লগ্নি সাজানোর পরামর্শ দিলেন শৈবাল বিশ্বাসচাকরি করছেন এক বছর। সবেমাত্র জমানো শুরু করেছেন। চোখে অনেক স্বপ্ন রয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৬
Share: Save:

পরিচিতি: সুলগ্না (২৪)

কী করেন: কাজ করেন বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়। থাকেন বেঙ্গালুরুতে। পরিবার কলকাতায়। বাবার অবসর কয়েক মাসে

লক্ষ্য: বাবার অবসরের পরে সংসারের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া। নিজের বিয়ে ও আগামী জীবনের জন্য সঞ্চয়। বেড়ানো, বেঙ্গালুরুতে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার টাকা জোগাড়

দেখে ভাল লাগল কম বয়সেই জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে খুব স্পষ্ট ধারণা রয়েছে সুলগ্নার। কাজের সূত্রে নিজে একা থাকেন বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু কলকাতায় পরিবারের হাল ধরারও ইচ্ছে রয়েছে। সে জন্য তৈরি হতে চান এখন থেকেই। আবার বিয়ে ও ভবিষ্যতের কথাও ভাবছেন। চলুন দেখি কী ভাবে তাঁকে লগ্নির দিশা দেখানো যায়।

গোড়ায় গলদ

সুলগ্নার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। ফলে তাঁর পেনশন রয়েছে। আবার অবসরের সময়েও থোক টাকা পাবেন। ফলে পুরোপুরি মেয়ের উপরে তাঁকে নির্ভর করতে হবে না। তাই পরিবারের কথা ভেবে সুলগ্নার এখনই জীবন বিমা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি জীবন বিমা করে ফেলেছেন। মাসে মাসে সেখানে দিচ্ছেন ৩,০০০ টাকা করে। ফলে আপাতত তা চালানো ছাড়া উপায় নেই।

কারণ, অন্তত দু’বছর টাকা না দিলে, পুরো জমাই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। আর তিন বছর টাকা দিয়ে গেলে পেড-আপ ও পলিসি সারেন্ডারের সুবিধা পাবেন। ফলে কমপক্ষে তিন বছর চালিয়ে যান। তার পরে সেটি পেড-আপ করুন। তত দিনে বিয়ে হয়ে গেলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে আলাদা টার্ম পলিসি করে দু’জনকে নমিনি করতে হবে। যাতে এক জনের কিছু হলে অন্য জন টাকা পান।

স্বাস্থ্য বিমা কই!

জীবন বিমার চেয়েও সুলগ্নার আগে জরুরি স্বাস্থ্য বিমা করা। অফিসের বিমা থাকলেও। কম বয়সে স্বাস্থ্য বিমা করালে তার প্রিমিয়ামও কম পড়বে। প্রথম কয়েক বছর ক্লেম না করলে, আগে থাকা রোগের চিকিৎসার খরচও মিলবে। বাবা-মায়ের বিমা না থাকলে, তাঁদের জন্য আলাদা ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করাতে পারেন। বেশি বয়সে বিমা করালে প্রিমিয়াম বেশি পড়বে ঠিকই। কিন্তু এ জন্য করছাড়ের সুবিধা পাবেন সুলগ্না। ভাইয়েরও বিমা না থাকলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বিয়ের জন্য

দু’তিন বছরে বিয়ে করতে চান। কিন্তু হাতে এখনও পর্যাপ্ত টাকা নেই। আমি বলব এখন থেকেই মাসে ২০,০০০ টাকা করে লিকুইড ফান্ড বা আলট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডে এসআইপি করুন। বিয়ের আগে গিয়ে সেই টাকা তুলতে পারবেন। তিন বছরে মাসে ২০,০০০ টাকা করে জমালে হাতে আসবে প্রায় ৮.০৩ লক্ষ টাকা (৭% রিটার্ন ধরে)। আমার মতে, যা বিয়ের জন্য যথেষ্ট।

পরিবারের দায়িত্ব

বাবার অবসরের পরে সংসারের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে চান সুলগ্না। কিন্তু ঠিক কী ধরনের দায়িত্ব নিতে চান, তা খুলে বলেননি। তাঁদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা করার কথা আগেই বলেছি, সেই টাকাই তিনি দিতে পারেন।

যদি ভাবেন থোক টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন, তা হলে সেই অঙ্ক তাঁকেই ঠিক করতে হবে। চাইলে আরবিট্রাজ ফান্ডে এসআইপি করতে পারেন। সুযোগ নিতে পারেন ডিভিডেন্ড রিইনভেস্টমেন্টের। এতে প্রকল্পে যে ডিভিডেন্ড ঘোষণা হবে, তা আবার তহবিলেই জমা পড়বে। ফান্ড থেকে যখন যেমন প্রয়োজন পড়বে, সেই টাকা বাবা-মাকে দিতে পারবেন।

ফ্ল্যাট-গাড়ি

আমাদের অনেক ধরনের স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আগে সেগুলিকে প্রয়োজন অনুসারে সাজাতে হবে। যে কারণে আমার মত, এখনই সুলগ্নার ফ্ল্যাট-গাড়ি কেনার কথা ভাবা উচিত নয়। তাঁর বয়স খুব কম। কয়েক বছরে বিয়ে করতে চান। তার পরে হয়তো তিনি চাকরি বদলাতে পারেন, শহর বদল হতে পারে। ফলে এখন থেকেই ফ্ল্যাট-গাড়িতে টাকা ঢাললে এক দিকে যেমন মাসিক কিস্তির চক্করে পড়তে হবে। অন্য দিকে, ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড়ের জন্যও দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। ফলে বিয়ের পরেই স্বামীর সঙ্গে কথা বলে এগুলি নিয়ে এগোলে ভাল। আপাতত জোর দিতে হবে তহবিল বাড়ানোর দিকে।

লগ্নি কোথায় কত

সুলগ্নার বয়স সবে ২৪ বছর। ফলে এখনই ঝুঁকি নিয়ে লগ্নির সময়ে। অথচ তাঁর প্রোফাইলে সেই অভাব স্পষ্ট। লগ্নি কী ভাবে ছড়াবেন, চলুন দেখি—

শেয়ার: যত টাকা জমাবেন বলে ভেবেছেন, তার অন্তত ৭০% রাখতে হবে সরাসরি শেয়ার বা শেয়ার ভিত্তিক (ইকুইটি) মিউচুয়াল ফান্ডে। একলপ্তে টাকা ঢালতে না চাইলে বাছুন এসআইপি। লগ্নি ছড়ান লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ ফান্ডে। লগ্নির অনুপাতও হবে সে ভাবেই। অর্থাৎ, লার্জ ক্যাপে বেশি, তার পরে যথাক্রমে মিড ও স্মল ক্যাপ। তার পাশাপাশি কিছু ফান্ড বাছতে হবে যারা সব ধরনের সংস্থার শেয়ারেই টাকা ঢালে।

ঋণপত্র: ২০% টাকা রাখতে হবে ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পে। এ জন্য বাছতে পারেন পিপিএফ। এতে করছাড়ের সুবিধা মিলবে। আবার মেয়াদ শেষে হাতে পাওয়া টাকাও করমুক্ত।

আপৎকালের জন্য: হঠাৎ করে কোনও প্রয়োজন এলে যাতে হাতে টাকা পেতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য লিকুইড ফান্ডে নিয়মিত টাকা রাখতে হবে। সুলগ্না ইতিমধ্যেই রেকারিং করেছেন। তার মেয়াদ শেষ হলে মাসে মাসে সেই টাকা লিকুইড ফান্ডে রাখতে পারেন।

বিয়ের পরে

উপরে বললাম কোথায় কত শতাংশ টাকা জমাতে হবে। কিন্তু তা কাজে পরিণত করার সুযোগ আসবে বিয়ের পরে। তাই তখন সেই ২০,০০০ টাকা ভাগ করে উপরে বলা বিভিন্ন প্রকল্পে রাখতে হবে। প্রত্যেক পাঁচ বছরে খতিয়ে দেখতে হবে পোর্টফোলিয়ো। প্রয়োজনে বদলাতে হবে।

সে ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পরে গিয়ে ফ্ল্যাটের টাকা জোগাড়ের জন্য আলাদা করে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। তখন স্বামীর রোজগারও থাকবে, তা-ও তহবিল গড়তে কাজে লাগবে।

যত আগে তত ভাল

কম বয়সে লগ্নি শুরুর একটা সুবিধা হল প্রথম দিকে কিছু ভুলভ্রান্তি হলে, তা শোধরানোর সুযোগ পাওয়া যায়। বদলে ফেলা যায় প্রকল্প। ঢেলে সাজানো যায় লগ্নির পরিকল্পনা। তাই সঞ্চয় থেকে লগ্নির জগতে পা রাখতে হলে চাকরির একেবারে গোড়ার দিকেই শুরু করতে হবে। যত বয়স বাড়বে, তত লক্ষ্য বেঁধে সঞ্চয়ের দিতে এগোতে হবে। সে জন্য শুভেচ্ছা রইল।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Insurance Savings Wedding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE