প্রতীকী ছবি।
ধার শোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগত ঋণগ্রাহকেরা সমস্যায় পড়তে পারেন, যার ফলে মাথাচাড়া দিতে পারে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলির অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ)— এই আশঙ্কা থেকেই ঋণ পুনর্গঠনের অনুমতি দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বহু দিন ধরেই যে সওয়াল করছিল কেন্দ্র এবং ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু এমন পদক্ষেপেই কি এনপিএ-র সমস্যা রোখা যাবে? এই প্রশ্নে দ্বিমত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল। তবে একটি বিষয়ে একমত যে, লকডাউনের জেরে যে রকম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বড়-ছোট অধিকাংশ সংস্থা ও খুচরো গ্রাহকের, তাতে কোনও না কোনও পদক্ষেপ করতেই হত।
আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা ফিচের ব্যাখ্যা, ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ঋণ ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। যে কারণে আনতে হয় দেউলিয়া বিধি। এ বার ফের সেই ঋণ পুনর্গঠন ফেরায় তাদের আশঙ্কা, এনপিএ-র সমস্যা দীর্ঘায়িত হবে। দাওয়াই কতটা কাজে লাগবে সন্দেহ আছে। ঋণ পুনর্গঠনের পথে হাঁটা সংস্থা ও ব্যক্তিদের উপরে ব্যাঙ্কের নজর রাখা নিয়েও সংশয়ী ফিচ। তাদের মতে, সব থেকে ভাল হত ব্যাঙ্কগুলিকে মূলধন জোগালে। অনেকে নিজেরা বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে নামলেও, তা যথেষ্ট নয়।
উল্টো মত আর এক মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের। তারা মনে করে, অনুৎপাদক সম্পদ তৈরি হওয়ায় রাশ টানতে ঋণ পুনর্গঠন সেরা ওষুধ। না-হলে ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ ১১.৫% ছুঁত, যা ২০ বছরের সর্বোচ্চ।
পুনর্গঠনের খতিয়ান
কখন হয়
• ঋণ শোধের মেয়াদ, সুদ, মাসিক কিস্তির অঙ্ক ইত্যাদি শর্তের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কগুলি
ঋণ দেয়। কিন্তু ধার শোধে সমস্যা তৈরি হলে ঋণগ্রহীতা তা পুনর্গঠনের আবেদন করতে পারে।
• ব্যাঙ্ক আর্জি মঞ্জুর করলে শর্ত বদলিয়ে ফের ধার শোধের প্রক্রিয়া চালু হয়।
কী ভাবে
• সাধারণত, ঋণ পুনর্গঠন হলে তার মেয়াদ বাড়িয়ে কিস্তি কমানো হয়।
• ঋণ সময়ে শোধ না-করায় জমে যাওয়া সুদের জন্য পৃথক ঋণ চালু
হতে পারে। তাতে সুদে ছাড় ছাড়াও শোধের ক্ষেত্রে এক-দু’বছরের মোরাটোরিয়ামের (কিস্তি স্থগিত) সুযোগ থাকে। তবে সাধারণত আগে প্রায় ১৫% বকেয়া সুদ মেটাতে হয়।
• মূল ঋণের টাকা শোধের জন্য চালু হয় আর একটি ঋণ। সব ক্ষেত্রেই ঋণগ্রহীতা ও ব্যাঙ্কের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে শর্তের হেরফের হতে পারে।
তর্ক-বিতর্ক
• মূল্যায়ন সংস্থা ফিচের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণ পুনর্গঠনে সায় দিলেও তা ব্যাঙ্কগুলিতে অনুৎপাদক সম্পদের সঙ্কট মেটাতে কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং এই সমস্যা মেটানোর বিষয়টি এতে আরও অনিশ্চিত হতে পারে। লম্বা হবে সমস্যা সমাধানের পথ।
• তবে মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের মতে, ঋণ পুনর্গঠন হলে সেগুলির অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হওয়ায় রাশ টানা যাবে। এটা আনা না-হলে তার হার ২০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক হয়ে মোট ঋণের ১১.৫ শতাংশে ঠেকতে পারত।
আশাবাদী ব্যাঙ্ক কর্তা ও বিশেষজ্ঞদের একাংশও। স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কলের কর্তা আর কে মিশ্র বলেন, ‘‘কোনও ঋণকে অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হতে দেওয়ার পরিবর্তে ঢেলে সাজিয়ে ঋণগ্রহীতাকে তা শোধের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। ঋণ এক বার অনুৎপাদক সম্পদ হলে তার জন্য আর্থিক সংস্থান করতে হয় ব্যাঙ্কগুলিকে। তাতেই লোকসানের মুখ দেখতে হয় তাদের।’’ মিশ্রের সঙ্গে একমত ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ তথা ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেনও।
তবে একাংশের প্রশ্ন, সুযোগের অপব্যবহার হবে না তো? তবে ভাস্করবাবু বলছেন, “করোনা ও লকডাউনের জেরে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে বহু ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থা নিজেরাই অন্য সংস্থার থেকে পাওনা টাকা পাচ্ছে না। যাঁরা বাড়ি-গাড়ি কিনতে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই রুজি-রোজগারে ধাক্কা লেগেছে। তাঁদের অবশ্যই ধার শোধ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy