Advertisement
০১ মে ২০২৪

বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই

লগ্নির জন্য সময়টা আদৌ সুখকর নয়। অল্প অল্প করে সুদ নামছে। আগামী দিনে তা আরও নামার সম্ভাবনা। শেয়ার বাজার উত্তাল। একদিন ৫০০ পয়েন্ট উঠলে পরদিন ৭০০ পয়েন্ট নামে। মাঝারি মেয়াদে বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০০:৪৮
Share: Save:

লগ্নির জন্য সময়টা আদৌ সুখকর নয়। অল্প অল্প করে সুদ নামছে। আগামী দিনে তা আরও নামার সম্ভাবনা। শেয়ার বাজার উত্তাল। একদিন ৫০০ পয়েন্ট উঠলে পরদিন ৭০০ পয়েন্ট নামে। মাঝারি মেয়াদে বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই।

সুদ কমলে সাধারণত বন্ডের দাম বাড়ে। এ বার সেটাও তেমন হচ্ছে না। বিদেশি লগ্নিকারীরা বন্ডের বাজারেও বিক্রেতার ভূমিকা নেওয়ায় বন্ড তেমন ঊর্ধ্বগামী হয়নি। শেয়ারে অস্থিরতা এবং বন্ডে অনিশ্চয়তা দুর্বল করে রেখেছে মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎকে। ব্যাঙ্কে সুদ কমা সত্ত্বেও ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পগুলি এখনও তেমন আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি। আবার ব্যাঙ্কের তুলনায় কোম্পানি জমা প্রকল্পে সুদ একটু বেশি দেওয়া হলেও সুরক্ষার প্রশ্ন এখানে বড় করে দেখা দেয়। এই সব কারণে যাঁরা লগ্নিযোগ্য তহবিল নিয়ে বসে আছেন, তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, এই বাজারে কোথায় ঠিক কতটা লগ্নি করা উচিত। যাঁরা মার্চে অবসর নিয়েছেন বা শীঘ্রই অবসর নিতে চলেছেন, তাঁদের পক্ষে আগে কষা আয়ের অঙ্কের হিসেব এখন মেলানো শক্ত। প্রবীণ নাগরিকেরা অবশ্য এখনও এই বাজারে ৯% সুদের সন্ধান পেতে পারেন। অন্যদের তুলনায় উঁচু হারে করদাতাদের জন্য এই বাজারেও লগ্নির ভাল সুযোগ আছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, পরিস্থিতি অনুযায়ী কী করা যেতে পারে:

যাঁরা ব্যাঙ্কে টাকা রাখবেন, দেখে নিন কোন ব্যাঙ্ক বড় মেয়াদে সব থেকে বেশি সুদ দিচ্ছে। পাইকারি এবং খুচরো, এই দুই ক্ষেত্রেই মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে (সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী)। পাশাপাশি বেশ মন্থর শিল্পের গতি। এই পরিস্থিতিতে জুনে আর এক দফা সুদ কমাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই কারণে ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে হলে এখনই তা বড় মেয়াদে গচ্ছিত করা উচিত। সুদ আরও কমার আগে।

প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পে এখনও ৯.৩% হারে সুদ দেওয়া হচ্ছে। এই বাজারে মন্দ নয়। পাঁচ বছরের জন্য লগ্নির একাংশ এখানে রাখাই যেতে পারে। এর জন্য বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হতে হবে।

মাস দেড়েক হল চালু হয়েছে নতুন অর্থবর্ষ। পিপিএফ অ্যাকাউন্টে এখনও সুদ দেওয়া হচ্ছে ৮.৭% হারে। করমুক্ত এই সুদ করযুক্ত প্রায় ১২.৫ শতাংশের সমান (যাঁরা ৩০% করের আওতায় পড়েন)। যাঁরা ১০ এবং ২০% হারে কর দেন, তাঁদের জন্য এই হার হল যথাক্রমে ৯.৬৭ এবং ১০.৮৭%। বর্তমান বাজারে বেশ আকর্ষণীয় উপরি পাওনা ৮০সি ধারায় করছাড়ের সুবিধা। সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা অলস ভাবে ৪ শতাংশে ফেলে না-রেখে ১.৫ লাখ পর্যন্ত এখানে রাখা যেতেই পারে।

কোনও কোনও বেসরকারি ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৬ থেকে ৭% সুদ দিচ্ছে। আকারে তত বড় না-হলেও ব্যবসার দিক থেকে কয়েকটি ব্যাঙ্ক বেশ সফল। লাখ খানেক টাকা এখানে রাখা যেতেই পারে। মনে রাখতে হবে, সেভিংস ব্যাঙ্কে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ করমুক্ত। অর্থাৎ যাঁরা ৩০% করের আওতায়, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ হাজার টাকার উপর ৭% সুদ ১০% করযুক্ত আয়ের সমান। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক এফডি-র তুলনায় অনেকটাই বেশি।

শেয়ার বাজার এখন বেশ উত্তাল। উত্তাল সমুদ্রে স্নান করা যেমন বিপজ্জনক, এখন শেয়ার লেনদেন করা তেমনই ঝুঁকিপূর্ণ। খুব ভাল সাঁতার জানা থাকলে তবেই জলে নামার সাহস করা যায়। তা না-হলে তরঙ্গ শান্ত না-হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মাঝেমধ্যেই বাজার বেশ খানিকটা করে পড়ছে। জল কমা মাত্রই নিজের মাছটি ধরতে হবে। তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত না-নিলে পরদিনই হয়তো জোয়ার আসবে। সব চলে যাবে নাগালের বাইরে। প্রতিটি ৫০০ অঙ্কের বেশি পতনে অল্প অল্প করে ভাল শেয়ার কেনা যায়। বাজারে এখন ডামাডোল চললেও অনেকে মনে করছেন, ডিসেম্বর নাগাদ সেনসেক্স ফের ৩০,০০০ স্পর্শ করবে।

শেয়ার বাজারের তালেই নৃত্য করে ইকুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্প। বর্তমান অস্থির বাজারে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করাই কম ঝুঁকিপূর্ণ। আগে থেকে বাছাই করা প্রকল্পে এক লপ্তে লগ্নি করা যেতে পারে বাজারের বড় পতনে। কর সাশ্রয়ের জন্য এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে কোনও ভাল ইএলএসএস প্রকল্পে।

দীর্ঘ মেয়াদে নিয়মিত পেনশন পাওয়ার লক্ষ্যে প্রবীণ নাগরিকেরা টাকা রাখতে পারেন এলআইসি বরিষ্ঠ পেনশন বিমা যোজনায়। বাজারের বর্তমান সুদ অনুযায়ী প্রকল্পটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এখানে সর্বাধিক লগ্নি করা যায় ৬,৬৬,৬৬৫, যা করলে আজীবন সুদ পাওয়া যাবে মাসে ৫,০০০ টাকা। লগ্নির অঙ্ক কম হলে সেই অনুযায়ী পেনশন মিলবে। পেনশন ত্রৈমাসিক, ষাণ্মসিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতেও নেওয়া যেতে পারে। মাসিক ভিত্তিতে পেনশন নিলে সুদ দাঁড়ায় ৯%। বার্ষিক ভিত্তিতে ৯.৩৮%। বর্তমান বাজারে ভালই আকর্ষণীয়। ৬০ বছর বয়স হলে তবেই যোগদান করা যাবে এই প্রকল্পে। পেনশন করযোগ্য। ইস্যু-র ১৫ বছর পর এই পলিসি ভাঙানো যাবে ক্রয়মূল্যে। এই পলিসি জমা রেখে ৭৫% পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেতে পারে। প্রকল্পটি খোলা আছে সীমিত সময়ের জন্য। বন্ধ হবে আগামী ১৪ অগস্ট। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল লগ্নির পরিমাণ এবং পেনশনের অঙ্ক।

বাজেটে ঘোষণা অনুযায়ী কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসছে করমুক্ত বন্ড। উঁচু আয়ের মানুষের জন্য এটি ভাল লগ্নির জায়গা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE