ধনতেরসের দিন বেশ খানিকটা চাঙ্গা হয়ে উঠল গয়নার বাজার। সোমবার সকাল থেকেই সোনার দোকানগুলিতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। বৌবাজারের গয়না ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দাম কমে আসার ফলে চাহিদা বাড়ছে হলুদ ধাতুর। তারই প্রতিফলন পড়েছে এ দিন। তাঁদের আশা, চলতি উৎসবের মরসুমে এ বার আরও বাড়বে গয়নার চাহিদা।
গত কয়েক মাস ধরে টানা কমছে সোনার দাম। এক সময়ে যেখানে তা প্রতি ১০ গ্রামে ৩০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে ২৫ হাজারের ঘরে। এ দিন গয়নার বাজারে প্রতি ১০ গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম ২৫,৪০০ টাকা থেকে ২৫,৬০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, দাম কমার ফলে সোনার গয়না কেনার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে সাধারণ মানুষের সামনে। সেটাই তাঁরা কাজে লাগাচ্ছেন। যার ফলে বেড়েছে গয়নার কাটতি।
সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেন-এর মতে, ‘‘আমার ধারণা, সোনার দাম যতটা কমার, কমে গিয়েছে। এ বার বাড়তে থাকবে। সেটা আন্দাজ করেই ক্রেতাদের মধ্যে গয়না কেনার হিড়িক বেড়েছে।’’ একই মত স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে-র। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে গয়নার চাহিদা তেমন ছিল না। কারণ, ক্রেতারা দাম কমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এখন দাম কমায় চাহিদা বেড়েছে। আগামী দিনে চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করি আমি।’’
সোনার দাম কমল কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী ডিসেম্বরে সুদের হার বাড়াতে চলেছে বলে যে জল্পনা চলছে বিশ্ব জুড়ে, প্রধানত তার জেরেই দ্রুত সস্তা হয়েছে সোনা। কারণ, আমেরিকায় সুদ বাড়লে বিভিন্ন ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে আয়ের পথ খুলবে। বিনিয়োগকারীরা এই ধারণায় প্রভাবিত হয়েই সোনায় লগ্নি কমাতে শুরু করেছেন। যে কারণে আগামী দিনে সোনার দাম আরও বাড়বে, না কমবে, তা অনেকটাই সুদ নিয়ে ফেড রিজার্ভের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারিখ বলেন, ‘‘মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ালে মনে হয় সোনার দাম আরও কমবে। এ ছাড়া, মার্কিন ডলারের দাম দ্রুত বাড়ছে। তাই ডলারে বিনিয়োগও ক্রমশ লগ্নিকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানায় পিছিয়ে পড়তে পারে সোনা। এর দরুণও হলুদ ধাতুটির দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
অবশ্য পঙ্কজবাবুর সঙ্গে একমত নন শুভঙ্করবাবু। তাঁর মতে, ‘‘গত মাস তিনেক ধরেই ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়াবে বলে বাজারে জোর খবর। যার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমেওছে। তাই মার্কিন মুলুকের সুদের বদল সংক্রান্ত বিষয়টি ইতিমধ্যেই লগ্নিকারীদের কাছে গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে সত্যিই যদি শেষ পর্যন্ত ওই সুদ বাড়ানো হয়, তা হলেও তার প্রভাব তেমন ভাবে আর সোনার দামে পড়বে বলে আমার মনে হয় না।’’
তবে টাকার দাম কমে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সোনার দর খানিকটা বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। পঙ্কজবাবু বলেন, ‘‘ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম কমে গেলে বিশ্ব বাজারে সোনার দাম না বাড়লেও ভারতে তার দাম বাড়তে পারে। কারণ, এখনও দেশে সোনার বেশির ভাগ চাহিদা মোটানো হয় আমদানি করে। আর এই আমদানি করতে হয় ডলারে। তাই টাকার অঙ্কে ডলারের দাম বেড়ে গেলে বিদেশ থেকে সোনা কেনার খরচও বাড়বে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে তার দামে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy