দেশের আখচাষিদের স্বার্থে চিনিকলগুলিকে তাদের বাড়তি উৎপাদন রফতানি করার নির্দেশ দিতে পারে কেন্দ্র। সরকারি সূত্রের খবর, বাধ্যতামূলক এই রফতানির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহ শেষে তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী-আমলা ও বিভিন্ন চিনিকল-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে যে-কৃষি মরসুম শুরু হবে, তখনই চালু হতে পারে নতুন নিয়ম। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, স্থানীয় চাহিদার তুলনায় চিনি উৎপাদন বেশি হলে তবেই খাটবে রফতানির নির্দেশ।
রফতানির বাজার বাড়াতে এই প্রয়াসের পিছনে কেন্দ্র যে-সব কারণ চিহ্নিত করেছে, সেগুলি হল:
• চিনির বাজার বাড়ার হাত ধরে ভারতে চড়তে পারে তার দাম, গত ছ’বছরে যা সবচেয়ে নীচে
• বাড়তি দর পেলে আখচাষিদের বকেয়া প্রাপ্য মেটাতে পারবে চিনিকলগুলি
দেশের ৫ কোটি আখচাষির কাছে চিনিকলগুলির বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে চাষিদের ক্ষোভও চরমে। তাঁদের কিছুটা স্বস্তি দিতে না-পারলে রাজনৈতিক দিক থেকেও মোদী সরকার হোঁচট খাবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। কারণ, লোকসভা ভোটে বিজেপির জেতা প্রতি ১০টি আসনের মধ্যে ৯টিই উত্তরপ্রদেশ থেকে। ওই রাজ্যের বিপুল সংখ্যক আখচাষিকে ফসলের ভাল দাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই ছিল দলের ভোট টানার অন্যতম হাতিয়ার।
অথচ, ব্রাজিলের পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারতে এই নিয়ে পরপর ৫ বছর উৎপাদনের তুলনায় দেশে চাহিদা কম, যে-কারণে দামও পড়তির দিকে। আগামী মরসুমে উৎপাদন ২.৮ কোটি টন ছাড়ানোর কথা। অথচ দেশে চাহিদা কম থাকায় উদ্বৃত্ত ছোঁবে ১.০৩ কোটি টন। চিনিকলগুলি বিক্রি খাতে হাতে পাচ্ছে কেজি প্রতি ২৩ থেকে ২৭ টাকা। উৎপাদনের খরচ কেজিতে ২৯ থেকে ৩৩ টাকা। ফলে আখচাষিদের প্রাপ্য মেটাতে নাজেহাল চিনি শিল্প। দেশে বছরে চাহিদা মাত্র ২.৫ কোটি টন। সেই কারণে সরকারি সূত্রের ধারণা, জরুরি পরিস্থিতির জন্য ভাঁড়ারে যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রেখেও ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টন চিনি প্রতি বছর রফতানি করা সম্ভব। এটা বাস্তবে সম্ভব হলে রফতানিতে অস্ট্রেলিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে ভারত। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ৩০ লক্ষ টন রফতানি করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম দু’টি স্থান রফতানিকারী হিসেবে দখলে রয়েছে ব্রাজিল ও তাইল্যান্ডের।
তবে শিল্পমহলের ইঙ্গিত, বিদেশে রফতানির বাজারে তেমন দাম পাবে না ভারতের চিনি। কারণ, বিশ্ব বাজারেও চিনি উদ্বৃত্ত। ফলে দাম নেমে এসেছে গত সাড়ে ছ’বছরে সবচেয়ে নীচে। তবে আখেরে চিনি শিল্প উপকৃত হবে বলে দাবি কেন্দ্রের। তাদের যুক্তি, রফতানির বাজার বাড়লে দেশে উদ্বৃত্ত কমবে, যা ঠেলে তুলবে দরকে। অন্য দিকে দাম কিছুটা বাড়াতে সম্প্রতি চিনির উপর সেস বসানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্র, যেটিও দর বাড়ায় ইন্ধন জোগাবে। সব মিলিয়ে বাড়বে দর, যা চিনিকলগুলির অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ করে দেবে।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল আখচাষিদের স্বস্তি দিতে চিনির আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করেছে কেন্দ্র। চিনি আমদানি ঠেকিয়ে দেশীয় শিল্পের বাজার বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই একই লক্ষ্যেই রফতানির এই উদ্যোগ। সব মিলিয়ে দেশে চিনির চাহিদা বাড়লে নগদের অভাবে কার্যত ধুঁকতে থাকা চিনিকলগুলিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে এবং চিনি উদ্বৃত্ত থাকার সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy