Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নোট-কাণ্ডের কোপে রাজ্যের একমাত্র মোবাইল কারখানা

নোট কাণ্ডের জেরে মার খাচ্ছে কম দামি ফোনের বাজার। আর তার ছোবল এ বার পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মোবাইল তৈরির কারখানায়। ফিতে কাটার এক বছরের মাথায় উৎপাদন ও কর্মী, দুই-ই অনেকটা ছেঁটে ফেলেছে রাজ্যের মোবাইল সংস্থা হাইটেক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

নোট কাণ্ডের জেরে মার খাচ্ছে কম দামি ফোনের বাজার। আর তার ছোবল এ বার পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মোবাইল তৈরির কারখানায়।

ফিতে কাটার এক বছরের মাথায় উৎপাদন ও কর্মী, দুই-ই অনেকটা ছেঁটে ফেলেছে রাজ্যের মোবাইল সংস্থা হাইটেক। তাদের দাবি, নোটের টানাটানিতে ৭০ শতাংশের বেশি ব্যবসা মার খাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত।

গত বছরই হাওড়ার সাঁকরাইলে ৪৪ হাজার বর্গ ফুট জুড়ে কারখানা গড়ে ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা করা সংস্থা হাইটেক। পুঁজি ঢালা হয় ১৫ কোটি। সেখানে মোবাইল ও তার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তৈরির জন্য চিনের সংস্থা কেয়ন কমিউনিকেশন্স টেকনোলজির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে তারা। দেশের বাজারের পাশাপাশি এই কারখানায় তৈরি মোবাইল বিদেশেও রফতানি করার কথা ছিল। পরিকল্পনা ছিল ফোরজি প্রযুক্তি সহায়ক হ্যান্ডসেট তৈরির। কিন্তু নোট সঙ্কটে আপাতত সবই ভেস্তে গিয়েছে।

মাথায় উঠেছে সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও। যে-জন্য সাঁকরাইলে আরও ৩৬ হাজার বর্গ ফুট জায়গা নিয়েছিল সংস্থা। হাইটেক-এর প্রধান মহম্মদ গিয়াসুদ্দিন জানান, ব্যবসা বাড়ানো দূর অস্ত্‌, তা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়েছে এখন। তাঁর দাবি, ‘‘উৎপাদন ৫০% কমানো হয়েছে। তার জেরে ইতিমধ্যেই ছাঁটতে হয়েছে ১০০ জনকে।’’ নোট কাণ্ডের আগে ৫৫০ জন কর্মী ছিলেন সেখানে। মাসে তৈরি হত আড়াই লক্ষ মোবাইল।

শুধু হাইটেক মোবাইলস নয়। নোটের আকালে সারা দেশেই কম দামি মোবাইল ফোনের বিক্রি কমছে। দ্রুত পড়ছে ব্যবসা। বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই বাজার নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে মাইক্রোম্যাক্স, ইনটেক্স টেকনোলজির মতো কম দামি বা ‘বাজেট স্মার্ট ফোন’ প্রস্তুতকারকরা। পায়ের তলার জমি শক্ত করার তাগিদে উৎপাদনের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তারা। নোট নাকচের বড় খেসারত যাতে দিতে না-হয়, তাই বিক্রি কমার ধাক্কা সামলানোই যার লক্ষ্য।

বিশেষজ্ঞ সংস্থা কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চ-এর তথ্য বলছে, কম দামি স্মার্ট ফোন ও ফিচার বা সাধারণ ফোন মিলিয়ে ৩৪% বিক্রি কমেছে নভেম্বরে। তবে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের হিসেব, সবচেয়ে বেশি মার খাচ্ছে ৪০০০ থেকে ৬০০০ টাকার মোবাইল। প্রায় ৭০% নেমেছে সেগুলির বিক্রি।

এ রকম ফোনের ক্রেতা মূলত ছড়িয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরে। গিয়াসুদ্দিন জানান, তাঁর সংস্থার মোবাইলের ৭০% ক্রেতাও ছোট শহরের। যাঁরা নগদ টাকায় দাম মিটিয়ে মোবাইল কেনেন। যে-কারণে হাতে নোটের জোগান কমায় মার খেয়েছে সেই বাজার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগদে মোবাইল কেনার ঝোঁক নেমেছে ১০ শতাংশের নীচে।

একই সুরে মাইক্রোম্যাক্স ও ইনটেক্স টেকনোলজির দাবি, ছোট শহরের পাশাপাশি অনলাইন কেনাকাটার বাজারও মার খেয়েছে। বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরিসংখ্যান, নভেম্বরে ই-কমার্সের মাধ্যমে ফোন বিক্রি একলপ্তে ১৮% কমেছে।

এই পরিস্থিতিতে হাইটেকের মতো উৎপাদন কমানোর রাস্তায় এগোনোর ইঙ্গিত দিয়েছে মাইক্রোম্যাক্সও। সংস্থার কর্ণধার বিকাশ জৈনের দাবি, মজুত থাকা মোবাইলের সংখ্যা বাড়া আটকাতে উৎপাদন কমানোই একমাত্র উপায়। অন্য দিকে, কঠিন পরিস্থিতি যুঝতে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন কমানোর কথা ভাবছে ইনটেক্স টেকনোলজিস।

কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাওয়া নতুন বছরে কী অপেক্ষা করে আছে জানা নেই। তবে কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের মতে, আশঙ্কা বহাল রেখে ডিসেম্বরে ১০০ ডলারের কম দামি মোবাইলের জোগান ২০% কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hitech Mobile Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE