Advertisement
E-Paper

ঝামেলা ছাড়াই চাবি

সংসদে পাশ হয়েছে আবাসন নির্মাণ বিল। যার দৌলতে এ বার না কি ফ্ল্যাটের চাবি দিতে আর গড়িমসি করতে পারবেন না প্রোমোটার। কেনার পরেই খুঁত বেরোলেও সারিয়ে দেবেন তিনি। পাকাপোক্ত জায়গা হবে অভিযোগ জানানোর। দামের হিসেব কষা যাবে কার্পেট এরিয়া ধরে। লিখছেন গার্গী গুহঠাকুরতাশুধু রেস্ত জোগাড়ের হিসেব-নিকেশ নয়। মাথার উপর ছাদ জোগাড়ের কথা ভাবলেই, মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করে হাজারো দুশ্চিন্তা। এই বুঝি নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরেও ফ্ল্যাটের চাবি দিতে গড়িমসি করবেন প্রোমাটার।

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:০৭

শুধু রেস্ত জোগাড়ের হিসেব-নিকেশ নয়। মাথার উপর ছাদ জোগাড়ের কথা ভাবলেই, মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে শুরু করে হাজারো দুশ্চিন্তা। এই বুঝি নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরেও ফ্ল্যাটের চাবি দিতে গড়িমসি করবেন প্রোমাটার। বিজ্ঞাপন-ব্রোশিওরে চটকদার ছবি আর প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে শেষমেশ বাড়িতে খুঁত থাকবে বিস্তর। কিংবা নিয়মিত টাকা জুগিয়ে যাওয়ার পরেও ঝুলে থাকবে নির্মাণ। শুনতে হবে, সেই টাকা না কি খরচ হয়ে গিয়েছে অন্য কোনও প্রকল্পে। সে ক্ষেত্রে কড়ায়-গণ্ডায় দাম মেটানোর পরেও শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়ার জোগাড় হবে ফ্ল্যাট হাতে পেতে। হয়তো অনন্ত অপেক্ষার ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হবে আদালতের দরজায়।

বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে প্রোমোটারের হাতে হেনস্থা হওয়ার বহু অভিজ্ঞতা লোকের মুখে-মুখে ফেরে। এই সমস্ত সমস্যার সুরাহা খুঁজতেই সম্প্রতি সংসদে পাশ হয়েছে ‘রিয়েল এস্টেট বিল’ (আবাসন নির্মাণ বিল)। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে ১০ মার্চ তা অনুমোদন পেয়েছে রাজ্যসভায়। ১ মে তৈরি হয়েছে নতুন আইনও। তবে তার খুঁটিনাটি এখনও ঠিক হয়নি।

আশার আলো

সরকারের দাবি এবং অনেকের আশা, সদ্য পাশ হওয়া এই বিল আইন হিসেবে পুরোদস্তুর কার্যকর হলে, বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি পাবেন আমজনতা। কারণ, এর দরুন নির্মাণ শিল্পে স্বচ্ছতা আসবে। তার উপর কড়া নজর রাখতে তৈরি হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সুরক্ষিত হবে ক্রেতা স্বার্থ। আবাসনে ত্রুটি থাকলে, তা নিয়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন ডেভেলপার। প্রকল্পের অন্তত ৭০% টাকা তুলে রাখতে হবে আলাদা অ্যাকাউন্টে। এমনকী আগাম তথ্য পাওয়া যাবে বেচা-কেনায় মধ্যস্থতাকারীদের (ব্রোকার) সম্পর্কেও।

তাই এই বিল পাশের দৌলতে আমার-আপনার ঠিক কী কী সুবিধা হতে পারে, আজ এখানে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব আমরা—

নজর নিয়ন্ত্রকের

শেয়ার বাজারে নিয়ন্ত্রক হিসেবে সেবি রয়েছে। ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিমায় আবার এই ভূমিকা পালন করে আইআরডিএ। এদের সকলেরই কাজ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের উপর কড়া নজরদারি। কেউ আইন ভেঙে কিংবা তার ফাঁক গলে লগ্নিকারীদের ঠকাচ্ছে কি না, তার উপর সতর্ক চোখ রাখা। তেমন কিছু চোখে পড়লে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেওয়াও। রিয়েল এস্টেট বিলের ভিত এ বার নির্মাণ শিল্পের জন্যও এমন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করা।

বিল অনুযায়ী, আইন চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়তে হবে। তা না-হওয়া পর্যন্ত এই কাজে অন্য কোনও সংস্থা কিংবা আধিকারিক নিয়োগ করতে হবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারকে।

এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক বার তৈরি হলে, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্রেতা হিসেবে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারার কথা আপনার। কারণ, সে ক্ষেত্রে আপনাকে কেউ ঠকাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ চোখ থাকবে সংস্থাটির।

লেখাতেই হবে নাম

যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা এতক্ষণ বললাম, সেখানে প্রকল্প নথিভুক্ত (রেজিস্ট্রেশন) করতেই হবে নির্মাণ সংস্থাকে। তা সে প্রকল্প বাণিজ্যিক হোক বা আবাসন। এবং ওই নথিভুক্তি সেরে ফেলতে হবে বুকিং বা বিক্রি শুরুর আগেই।

অনেক সময়ে বড় প্রকল্প ধাপে ধাপে তৈরি করা হয়। সে ক্ষেত্রে আবার নথিভুক্ত করতে হবে প্রতিটি ধাপকেই। অর্থাৎ, প্রথম দফায় যে-ফ্ল্যাট তৈরি হবে, তা বিক্রির আগে নথিভুক্তির কাজ মিটিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় দফার জন্য প্রয়োজন হবে পৃথক নথিভুক্তি।

শুধু নতুন প্রকল্প নয়, এই আইনের আওতায় আসছে অনেক নির্মীয়মাণ প্রকল্পও। কারণ, আইন কার্যকর হওয়ার সময়েও যে-সমস্ত প্রকল্প কাজ শেষের শংসাপত্র (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি) পায়নি, সেগুলির নথিভুক্তির জন্যও আবেদন জানাতে হবে প্রোমোটারকে।

এতে আপনার সুবিধা কোথায়?

সেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন নিয়ন্ত্রকের কাছে নির্মাণ সংস্থাকে নথিভুক্তির সময়ে কী কী জানাতে হবে, সে দিকে খেয়াল করলেই।

বিশদে তথ্য

নথিভুক্তির সময়ে প্রকল্প ও নিজেদের সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি জানাতে হবে নির্মাণ সংস্থাকে। যেমন:

• প্রোমোটারের নাম, ঠিকানা ও সংস্থার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য।

• গত পাঁচ বছরে তাদের তৈরি প্রকল্পের বিশদ বিবরণ।

• সরকারি দফতর, পুরসভা ইত্যাদির অনুমোদন। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার বৈধ শংসাপত্র।

• প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা (প্ল্যান), প্রস্তাবিত সুযোগ-সুবিধা ও অবস্থানগত তথ্য।

• ক্রেতাদের যে-বাড়ির চাবি হাতে দেওয়ার চিঠি (অ্যালটমেন্ট লেটার), সেল এগ্রিমেন্ট ইত্যাদি দেওয়া হবে, তার খসড়া (প্রোফর্মা)।

• ফ্ল্যাটের সংখ্যা ও কার্পেট এরিয়া (দেওয়াল থেকে দেওয়ালের মাপ)।

• গ্যারাজের সংখ্যা ও তার মাপ।

• প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থপতি, ইঞ্জিনিয়ারের নাম ও ঠিকানা।

• প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রোমোটারের তরফ থেকে কোনও এজেন্ট থাকলে, তাঁদের নাম, ঠিকানা।

• প্রোমোটারের পক্ষ থেকে হলফনামা। যার মধ্যে থাকবে:-

(ক) জমির বিবরণ। তার উপর প্রোমোটারের আইনি অধিকার।

(খ) জমি সংক্রান্ত কোনও জট রয়েছে কি না, সেই তথ্য। থাকলে, এখন তার অবস্থা কেমন।

(গ) প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা।

এই সমস্ত বিষয় নিয়ন্ত্রকের ঘরে জানিয়ে প্রোমোটার প্রকল্প শুরু করতে বাধ্য হলে, পুরো বিষয়টিতে আপনার সুবিধাই হবে। কারণ, এই সমস্ত খতিয়ে দেখার পরে নিয়ন্ত্রক প্রকল্প গড়ার ছাড়পত্র দিলে, কিছুটা নিশ্চিন্তে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন আপনি।

নইলে জরিমানা

প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রকের ঘরে প্রকল্প নথিবদ্ধ না-করালে, তা তৈরির মোট খরচের ১০% পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। সময়ে সেই জরিমানা
না-দিলে, চাপবে আরও ১০%। সঙ্গে তিন বছর কারাবাসও।

নিয়ন্ত্রককে ভুল তথ্য দিলেও গুনতে হবে ৫% জরিমানা।

ছাড় নেই ব্রোকারেরও

অনেক সময়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্রেতাকে ভুল বোঝান ব্রোকাররা। সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে বলেন। দেন অবাস্তব প্রতিশ্রুতি। সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হয় ক্রেতাদের। আবার ফ্ল্যাট কেনার কথা বলে ক্রেতা সময়ে টাকা না-দিলে সমস্যায় পড়েন প্রোমোটাররা।

এই সমস্যা মেটাতে এ বার প্রোমোটারদের পাশাপাশি ক্রেতা এবং ব্রোকারদেরও আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে ওই বিলে।

সময়ে টাকা না-দিলে, ক্রেতাকে ফ্ল্যাটের দামের ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। নিয়ন্ত্রকের নিয়ম না-মানলে হতে পারে এক বছর পর্যন্ত কারাবাসও।

একই ভাবে, নিয়ন্ত্রকের ঘরে নাম তোলা থাকায় চট করে ক্রেতাকে ভুল তথ্য দিতে চাইবেন না ব্রোকারও।

মঞ্জুর বা নাকচ

প্রোমোটারের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রক জানিয়ে দেবে যে, ওই প্রকল্প অনুমোদন না কি নাকচ করছে তারা।

সবুজ সঙ্কেত পেলে, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ প্রকল্প শেষ করার নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোনও বিশেষ কারণে প্রকল্প একান্তই শেষ না-হলে, এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়তে পারে। তবে সে জন্য ‘ফি’ দিতে হবে। সুতরাং ফ্ল্যাট কিনতে টাকা ঢালার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে, প্রকল্পে নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন রয়েছে কি না।

নিজের টাকা নিজের ফ্ল্যাটে

আপনার কাছে টাকা নিয়ে তার সিংহভাগই প্রোমোটার অন্য প্রকল্পে ঢেলে দেবেন, সেই রাস্তা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে বিলে। নতুন আইন অনুযায়ী, কোনও প্রকল্পের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা বা তা থেকে বিক্রির অর্থের অন্তত ৭০ শতাংশ একটি আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে (এসক্রো অ্যাকাউন্ট) জমা রাখতে হবে। তা ব্যবহার করা যাবে শুধুমাত্র ওই প্রকল্পের জমি কেনা ও সেখানে নির্মাণের কাজে।

বেআইনি কাজকর্ম কিংবা চুক্তিভঙ্গের মতো কারণে প্রকল্পের নথিভুক্তি নিয়ন্ত্রক বাতিল করলে, ওই অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হবে। প্রোমোটার আর তা ব্যবহার করতে পারবেন না। আশা করা যায়, সে ক্ষেত্রে কোনও কারণে প্রকল্প ভেস্তে গেলে, ক্রেতাদের টাকা ফেরত পাওয়া কিছুটা সহজ হবে।

বাস্তবের বিজ্ঞাপন

অধিকাংশ আবাসন প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে ঝাঁ-চকচকে ছবি থাকে। সুন্দর-সাজানো ফ্ল্যাট, সুইমিং পুল, চওড়া রাস্তা, কমিউনিটি হল— এমন আরও কত কী। আগ্রহী ক্রেতাদের হাতে দেওয়া বিজ্ঞাপনী পুস্তিকাতেও (প্রসপেক্টাস বা ব্রোশিওর) থাকে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় যে, বাস্তবের সঙ্গে তার ফারাক আকাশ-জমিন।

নতুন আইন অনুযায়ী, প্রকল্পের যে কোনও বিজ্ঞাপন বা ব্রোশিওরে উল্লিখিত তথ্য নির্মাতা সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হবে।

শুধু তা-ই নয়। নির্মাণ কাজ শেষের পরে ফ্ল্যাট বা আবাসন কেমন হবে, ক্রেতার পক্ষে তো তা আগেভাগে নিখুঁত ভাবে অনুমান করা সম্ভব নয়। তাই মূলত বিজ্ঞাপন এবং ব্রোশিওরে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ক্রেতা অগ্রিম টাকা জমা দেন। বিল বলছে, এ বার থেকে বিজ্ঞাপনে কোনও ভুল তথ্য কিংবা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কারণে ক্রেতার ক্ষতি হলে, ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন প্রোমোটার। ফলে বিজ্ঞাপনের প্রতিশ্রুতি প্রোমোটার রেখেছেন কি না, ফ্ল্যাট কেনার সময়ে তা খতিয়ে দেখতে ভুলবেন না।

মাপ বুঝে নিন

ফ্ল্যাট কেনায় মস্ত মাথাব্যথা হল তার মাপ বোঝা। কারণ, ওই মাপ এবং তার ভিত্তিতে দামের হিসেব করতে গেলেই ‘বিল্ট আপ’, ‘সুপার বিল্ট আপ’-এর কথা বলেন প্রোমোটাররা। তার থেকে মোটামুটি কত শতাংশ বাদ গেলে কার্পেট এরিয়া (দেওয়াল থেকে দেওয়ালের মাপ) পাওয়া যাবে, তারও একটা ধারণা দেন। কিন্তু সেই হিসেব কতটা সত্যি, তা যাচাই করা শক্ত।

নতুন আইনের হাত ধরে সেই সমস্যার সুরাহা হওয়ার কথা। কারণ, ওই নিয়ম কার্যকর হলে, কার্পেট এরিয়াকেই বিবেচ্য হিসেবে ধরা হবে। তার ভিত্তিতে ঠিক হবে দাম। অর্থাৎ, আসলে ফ্ল্যাটের যতটা জায়গা (ফ্লোর এরিয়া) সত্যিই ব্যবহার করবেন, ততটারই দাম দিতে হবে আপনাকে।

বাইরের দেওয়াল, লিফ্‌ট, ছাদ ইত্যাদির জায়গা ধরে দাম হাঁকা যাবে না। ফ্ল্যাটের মধ্যে ঘরের ‘পার্টিশন’ হিসেবে যে দেওয়াল আছে, তার মাপ অবশ্য কার্পেট এরিয়ায় ধরা হবে।

মেপে অগ্রিম

ফ্ল্যাট কিনতে আবেদনের সময়েই ‘অ্যাপ্লিকেশন ফি’ বাবদ কিছু টাকা জমা দিতে বলেন প্রোমোটাররা। নতুন নিয়মে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সেই অগ্রিমের ঊর্ধ্বসীমাও।

এ বার থেকে ফ্ল্যাটের মোট দামের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ ওই অগ্রিম বা অ্যাপ্লিকেশন ফি হিসেবে নেওয়া চলবে না। অর্থাৎ, ক্রেতার সঙ্গে লিখিত চুক্তি করার আগে ১০ শতাংশের বেশি টাকা নিতে পারবেন না প্রোমোটার। এর পরেও কেউ তা চাইলে, পাল্টা প্রশ্ন তুলুন।

নকশায় বদল নয়

বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মূল কাঠামো এবং ভিতরের ঘর ইত্যাদির যে নকশা সরকারের ঘর থেকে অনুমোদন পেয়েছে, তাতে পরিবর্তন করা যাবে না। চলবে না নিজের ইচ্ছেয় সংযোজন। কোনও রকম কিছু বদলাতে আগে অনুমতি নিতে হবে ক্রেতার কাছে।

যেমন, প্রকল্প-এলাকায় সকলের ব্যবহারের জন্য যে জায়গা (কমন স্পেস) রাখা হয়েছে, ক্রেতার অনুমতি ছাড়া তাতেও কোনও পরিবর্তন করা যাবে না। যে কোনও রকম বদল করতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতার লিখিত সম্মতি লাগবে।

ফলে প্রোমোটার তেমন কিছুর চেষ্টা করলে, নতুন আইনের শক্তিতে আপনি রুখে দাঁড়াতে পারেন।

নিখরচায় ফ্ল্যাট সারাই!

খারাপ মালমশলা দিয়ে কোনও মতে একখানা ফ্ল্যাট বা বাড়ি খাড়া করে তা বেচে দিতে পারলেই কিন্তু আর নিশ্চিন্ত হওয়ার জো থাকবে না প্রোমোটারের। কারণ, নতুন নিয়মে চাবি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে কাঠামোগত কোনও গলদ ধরা পড়লে, তা বিনা পয়সায় ঠিক করে দেওয়ার দায় নিতে হবে তাঁকে।

আজ করছি-কাল হবে বলে সেই মেরামতির কাজ অনন্তকাল ফেলে রাখাও চলবে না। ত্রুটি নজরে আনার ৩০ দিনের মধ্যেই তা সারাই করে দিতে হবে। নইলে ক্ষতিপূরণ।

নির্ঝঞ্ঝাটে চাবি

প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় থেকে নিয়মিত মাসিক কিস্তি (ইএমআই) গোনার পরেও সময়ে বাড়ির চাবি পেতে হন্যে— এমন অভিজ্ঞতার কথা প্রায়ই শুনি আমরা। অনেকের আবার শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়ার জোগাড় হয় এ নিয়ে আদালতের চক্কর কাটতে গিয়ে। কোনও প্রোমোটার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রকল্প শেষ করেন না। কেউ গড়িমসি করেন ফ্ল্যাটের চাবি দিতে। এই সমস্ত সমস্যার সুরাহার বন্দোবস্ত রয়েছে বিলে। যেমন—

চুক্তির (সেল এগ্রিমেন্ট) শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার হাতে ফ্ল্যাট তুলে দিতে না-পারলে, তার দাম হিসেবে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে। সঙ্গে গুনতে হতে পারে সুদ এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও।

ক্রেতা (অ্যালটি) যদি টাকা ফেরত না নিয়ে প্রকল্প শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় রাজি থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সুদ দেবেন প্রোমোটার। যতদিন ফ্ল্যাট হস্তান্তর না হয়, ততদিন তাঁকে প্রতি মাসে ওই সুদ গুনে যেতে হবে।

অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ক্রেতার অনুমতি ছাড়া প্রোমোটার তাঁর সিংহভাগ অধিকার বা দায় হস্তান্তর (ট্রান্সফার) করতে পারবেন না। এ জন্য অবশ্য নিয়ন্ত্রকের লিখিত অনুমোদনও প্রয়োজন হবে।

আপিল আদালত

দেশে মামলা যত, তার তুলনায় আদালতের সময় এবং বিচারপতির সংখ্যা দু’ই কম। অথচ ফ্ল্যাট বা বাড়ি নিয়ে অনেক মামলাই বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এ বার ওই সমস্ত আইনি লড়াইয়ের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা আপিল আদালত (রিয়েল এস্টেট অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল) তৈরির কথা বলা হয়েছে বিলে।

নতুন আইন চালুর এক বছরের মধ্যে নিয়ন্ত্রকের পাশাপাশি আপিল আদালতও তৈরি হওয়ার কথা।

এই আদালতের ক্ষমতা দেওয়ানি আদালতের (সিভিল কোর্ট) সমান হবে। সেখানে মামলা মেটানো হবে আবেদন জানানোর ৬০ দিনের মধ্যে।

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না। ‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in

flat harresment free construction bill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy