তবে ভবিষ্যতেও অর্থনীতি এ ভাবে পরিচালনা করতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে তাদের কাজটা ঠিকমতো করতে দিতে হবে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ফাইল চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে ভারতেও সুদের হার বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। কিন্তু তাকে যেন রাজনীতিবিদ বা আমলাদের তরফে ‘দেশদ্রোহী কার্যকলাপের’ তকমা না-দেওয়া হয়, সে নিয়ে সতর্ক করলেন তিনি।
গত ক’মাসে বিশ্ব জুড়েই মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধির হার। যা যুঝতে বিভিন্ন দেশ সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটছে। ভারতেও খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মার্চে পৌঁছেছে ৬.৯৫ শতাংশে। যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহমসীমার থেকে বেশি। তেমনই পাইকারি বাজারেও তা পৌঁছে গিয়েছে ১৪.৫৫ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে গত ঋণনীতি মিলিয়ে টানা ১১ বার সুদ স্থির রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে তাদের ইঙ্গিত, আগামী দিনে তা বাড়ানোর রাস্তা খোলা।
রাজনের বক্তব্য, ‘মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ কখনওই শেষ হয় না। ভারতেও তা মাথাচাড়া দিচ্ছে। সারা বিশ্বে যে ভাবে সুদ বাড়ছে, দেশেও কোনও সময়ে গিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদ বাড়াতে হবে। আর এই প্রসঙ্গেই শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজ়নেসের অধ্যাপক বলেন, ‘‘...রাজনৈতিক নেতা এবং আমলাদের বুঝতে হবে যে, সুদের হার বাড়ানো বিদেশি লগ্নিকারীদের সুবিধা করে দেওয়ার পদ্ধতি নয়, যাকে ‘দেশদ্রোহী কাজের’ তমকা দেওয়া যায়। বরং একে অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে লগ্নি হিসেবে ভাবা উচিত। যার ফলে আখেরে লাভ হবে ভারতেরই।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকেই পাখির চোখ করেছিলেন প্রাক্তন এই গভর্নর। রাজনের আমলে এক দিকে টাকার দরে বিপুল পতন এবং অন্য দিকে ১০% ছুঁইছুঁই মূল্যবৃদ্ধি ঘুম কেড়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় সুদ বাড়ানো নিয়ে মতবিরোধে জড়ায় মোদী সরকার। কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল লগ্নি টানতে এবং অর্থনীতির চাকায় গতি আনতে সুদ কমানো জরুরি। অর্থনীতিকে তাঁর আমলে পিছু টেনে রাখা হয়েছে বলেও তোপ দেগেছিলেন রাজনীতি ও আমলা মহলের একাংশ।
এ প্রসঙ্গে রাজন বলেন, ‘‘সে সময়ে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৯.৫ শতাংশে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুদের হার ৭.২৫% থেকে ৮% করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। মূল্যবৃদ্ধি নেমে আসার পরে রেপো রেটও (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয় আরবিআই) ১৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে নামানো হয় ৬.৫ শতাংশে।’’ মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি থেকে শুরু করে নোট বাতিল, বৃদ্ধির হার নামা এবং করোনার সময়েও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কম রেখে বাজারদরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পথেই হেঁটেছে বলে জানান তিনি।
আর এ ভাবে আরবিআইয়ের অর্থনীতির সফল পরিচালনার কারণেই ৬০,০০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার নিয়ে এখন ভারত স্বস্তিতে রয়েছে বলে মনে করেন রাজন। তাঁর মতে, যে কারণে তেলের দাম রেকর্ড ছুঁলেও ১৯৯১ সালের মতো আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের দ্বারস্থ হতে হয়নি সরকারকে। তবে ভবিষ্যতেও অর্থনীতি এ ভাবে পরিচালনা করতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে তাদের কাজটা ঠিকমতো করতে দিতে হবে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy