বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় উপরে উঠলেও প্রশ্ন উঠছে, দেশে লগ্নির দেখা কোথায়? ছবি: সংগৃহীত।
ক্রম তালিকায় একশোয় উঠে আসা গিয়েছিল গত বছরই। এ বার এক লাফে ৭৭। বিশ্বব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ তৈরির (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) মাপকাঠিতে এক লাফে ২৩ ধাপ উঠে এল ভারত। পৌঁছে গেল ৭৭ নম্বরে। তেলের চড়া দাম-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধীদের ক্রমাগত আক্রমণের মধ্যে যা মোদী সরকারকে কিছুটা অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিশেষত এর জেরে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট ও তার পরে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের অস্ত্র পাবে তারা।
বুধবার এই রিপোর্ট প্রকাশের পরেই সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার কথা টুইটে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চার বছরে ১৪২ থেকে ৭৭-এ পৌঁছনোর পরে এ বার প্রথম পঞ্চাশে পা রাখার স্বপ্ন ফেরি করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আরও এক ধাপ এগিয়ে নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের দাবি, ‘এ রকম উন্নতি’ বহাল থাকলে পরের বছরেই ৫০-এ ঢুকে পড়া সম্ভব হবে। তিন বছরে প্রথম পঁচিশে পৌঁছনোও অসম্ভব নয়।
কিন্তু এই সব কিছুর পরেও অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এমন লম্বা লাফের পরেও দেখা যাচ্ছে কর মেটানো, সহজে দেউলিয়া ঘোষণা, সম্পত্তি নথিভুক্তির মতো বিষয়গুলি নিয়ে মাথাব্যথার কারণ এখনও যথেষ্ট। এগুলিতে গত বছরের তুলনায় পিছিয়েছে দেশ। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে জেটলির যদিও দাবি, জিএসটিতে শুরুতে কিছু সমস্যা হয়েছে। একই ভাবে দেউলিয়া আইন চালু হলেও, তা এখনও নতুন। ওই সব নতুন ব্যবস্থা চালুর পরে র্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে সময় পাওয়া গিয়েছে অনেক কম। মতামত দিতে গিয়ে শিল্প হয়তো সেই সমস্ত সমস্যার কথা জানিয়েওছে। তাই তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে রিপোর্টে। আগামী দিনে চুক্তি কার্যকর করা, দেউলিয়া বিধি এবং কর সংস্কারের সুফল মিলবে বলেই অর্থমন্ত্রীর দাবি।
তবে প্রশ্ন ওঠা থামছে না। বণিকসভাগুলি এই রিপোর্টকে স্বাগত জানালেও প্রশ্ন উঠছে, ব্যবসা করার পথ না হয় সহজ হচ্ছে। কিন্তু দেশে লগ্নির দেখা কোথায়? নতুন করে কোথায় তৈরি হচ্ছে বড় কল-কারখানা? কেনই বা কাজের সুযোগ তৈরি করতে গিয়ে হিমসিম মোদী সরকার? পরিসংখ্যানও দেখাচ্ছে, দেশি লগ্নি সে ভাবে তো আসছেই না। হালে মুখ ফেরাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগও।
এই অবস্থায় ২৩ ধাপ এগোনোর পরিসংখ্যান দেশের শিল্পপতিদের লগ্নির ঝুলি উপুড় করার সাহস এবং ইচ্ছে বাড়াবে কি না, সেই প্রশ্ন তাই থাকছেই। সিআইআইয়ের প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে বণিকসভাটির জাতীয় কমিটির সদস্য দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেন, কাগজে-কলমে এবং দেশে শিল্পক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর তফাত রয়েছে।
কান্তের অবশ্য দাবি, আগে করা লগ্নিতে উৎপাদন যতটা বাড়ানো সম্ভব, সংস্থাগুলি সেই সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। ফলে আগামী দিনে তাদের বিনিয়োগ না বাড়িয়ে উপায় থাকবে না। বিশ্বব্যাঙ্কও রিপোর্টে সংস্কারের প্রশংসা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে ভারতকে শুল্কের রাজা বলে তোপ দেগেছেন, সেখানে সেই দাবির সঙ্গে তারা একমত নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। দেউলিয়া আইনের হাত ধরে দেশে অনুৎপাদক সম্পদ ২৮% কমানো সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
নজর আরও উঁচুতে
• সহজে ব্যবসার মাপকাঠিতে এক লাফে এগোল ২৩ ধাপ।
• এ বার লক্ষ্য প্রথম পঞ্চাশে প্রবেশ। এমনকি পঁচিশও।
• কর, দেউলিয়া বিধি, চুক্তি কার্যকর করায় আইন তৈরি। আগামী দিনে দেখা যাবে তার প্রতিফলন।
এখনও মাথাব্যথা
• সম্পত্তি নথিভুক্তিতে পিছনের সারিতে। রাজ্যগুলিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান।
• দেউলিয়া বিধি তৈরি, কিন্তু কার্যকর করায় সময় লাগছে বেশি।
• জিএসটি চালু হলেও, শুরুতে কিছু সমস্যা হয়েছে। যার জের র্যাঙ্কিংয়ে।
• চুক্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে সব পরিকাঠামো তৈরি নয়।
জেটলি মেনেছেন, এখনও কাজ বাকি। যেমন, নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আগের থেকে এগোলেও, এখনও ভারত অনেকখানি পিছিয়ে (১৩৭)। সে জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে কাজ করার আর্জি জানান অর্থমন্ত্রী। সম্পত্তি নথিভুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy