Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্রিক্স ব্যাঙ্কে প্রথম নেতৃত্ব ভারতের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সওয়াল মেনেই পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের সমান মালিকানার ভিত্তিতে সাংহাইয়ে গঠিত হচ্ছে ব্রিক্স ব্যাঙ্ক। প্রথম বার ব্যাঙ্কটির নেতৃত্বও যাচ্ছে ভারতের হাতে। আগামী দু’বছরের মধ্যেই ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার শেয়ার মূলধনের ‘ব্রিক্স ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক’ চালু হচ্ছে বলে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে। সদর দফতর চিনের সাংহাইয়ে হলেও ছ’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছে ভারত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সভাপতি হবে যথাক্রমে ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে তাদের মেয়াদ হবে ৫ বছর করে। বোর্ড অব গভর্নস-এর প্রথম প্রধান হবে রাশিয়া।

ব্রাজিলে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ, চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: পিটিআই।

ব্রাজিলে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রোসেফ, চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: পিটিআই।

সংবাদ সংস্থা
ফোর্তালেজা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সওয়াল মেনেই পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের সমান মালিকানার ভিত্তিতে সাংহাইয়ে গঠিত হচ্ছে ব্রিক্স ব্যাঙ্ক। প্রথম বার ব্যাঙ্কটির নেতৃত্বও যাচ্ছে ভারতের হাতে।

আগামী দু’বছরের মধ্যেই ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার শেয়ার মূলধনের ‘ব্রিক্স ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক’ চালু হচ্ছে বলে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে। সদর দফতর চিনের সাংহাইয়ে হলেও ছ’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছে ভারত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সভাপতি হবে যথাক্রমে ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে তাদের মেয়াদ হবে ৫ বছর করে। বোর্ড অব গভর্নস-এর প্রথম প্রধান হবে রাশিয়া।

১০ হাজার কোটি ডলার শেয়ার মূলধনের মধ্যে আপাতত ৫টি দেশ সমান মালিকানার ভিত্তিতে হাতে নিচ্ছে মোট ৫ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার। অর্থাত্‌ প্রতিটি দেশের হাতে থাকছে ১ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার মূলধন, পরে ব্যাঙ্কের সম্প্রসারণ হলে বাকি মূলধনও হাতে নিতে পারবে সদস্য রাষ্ট্রগুলি। এই শেয়ার মূলধনের ভিত্তিতেই ১০ হাজার কোটি ডলারের মুদ্রা তহবিল গড়তে চুক্তি করেছে ব্রিক্স দেশগুলি। এই তহবিলে চিনের অবদানই থাকবে সর্বোচ্চ, ৪১০০ কোটি ডলার। তারপর ১৮০০ কোটি ডলার করে দেবে ভারত, রাশিয়া এবং ব্রাজিল। আর দক্ষিণ আফ্রিকার অবদান হবে ৫০০ কোটি ডলার।

এই মুদ্রা তহবিল থেকেই ব্রিক্স রাষ্ট্রগুলি একে অপরকে নগদের সঙ্কট মেটাতে ঋণ দিতে পারবে, তাদের মধ্যে সহযোগিতার পথও সুপম হবে বলে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে। ভারতীয় অফিসারদের সূত্রে খবর, বিভিন্ন দেশের সংসদে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য ছ’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনুমোদন লাগে না। এর পরে আরও ছ’মাস দেওয়া হবে প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রদেয় সাতটি কিস্তির প্রথমটি মেটানোর জন্য। সব মিলিয়ে তাই ব্যাঙ্কটির কাজ শুরু করতে ২ বছর সময় লাগবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

• ব্রিক্স ব্যাঙ্ক কী? ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে তৈরি উন্নয়নশীল দেশগুলির সংগঠন ব্রিক্স-এর নিজস্ব উন্নয়ন ব্যাঙ্ক। চালু হবে দু’বছরে।

• নাম কী? নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক।

• সদর দফতর কোথায়? চিনের সাংহাইয়ে।

• শেয়ার মূলধন কত? পাঁচটি দেশ মিলিয়ে মোট মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলার। এখন হাতে নেওয়া হবে ৫,০০০ কোটি।

• মুদ্রা তহবিলে কে কত দেবে? চিন ৪,১০০ কোটি ডলার। ভারত, ব্রাজিল এবং রাশিয়া ১,৮০০ কোটি করে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা দেবে ৫০০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় যে-ভাবে গত সত্তর বছর যাবত্‌ আধিপত্য করে আসছে পশ্চিমী দুনিয়া, তা ঢেলে সাজতে সমান শেয়ার মালিকানার ভিত্তিতে এই ব্রিক্স ব্যাঙ্ক গঠন একটি বড় পদক্ষেপ। ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উড্স চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ) তৈরি হওয়ার সময় থেকেই পশ্চিমের উন্নত দুনিয়ার হাতে কুক্ষীগত রয়েছে আর্থিক ক্ষমতা, যা ভাঙতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পাঁচটি ব্রিক্স রাষ্ট্র ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে এই ব্যাঙ্ক গড়ায় শিলমোহর দেওয়াটা মোদীর বড় সাফল্য বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, ব্রিক্সে মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত চেয়েছিল সমান অংশীদারি থাকুক ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত পাঁচ দেশের। যাতে কোনও একটি দেশ (বিশেষত চিন) নিজের আর্থিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সেখানে ছড়ি ঘোরাতে না-পারে। ভারতের মতে, গোড়ায় বেশি মূলধন জোগানোর সুবিধাকে কাজে লাগিয়েই বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফে এখনও কর্তৃত্ব ফলায় আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি।

একই ভাবে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে বাড়তি কর্তৃত্ব ফলায় জাপান। সেই একই সমস্যা যাতে ব্রিকস-ব্যাঙ্কেও না হয়, শুরু থেকে তা নিশ্চিত করতেই সমান অংশীদারির দাবিতে তত্‌পর হন মোদী। লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পরে মোদী বলেছেন, “দু’বছর আগে দিল্লি শীর্ষ সম্মেলনে যে-উন্নয়ন ব্যাঙ্ক গড়ার অঙ্গীকার ব্রিক্স রাষ্ট্রগুলি করেছিল, তা ফোর্তালেজায় বাস্তবায়িত হল। ব্রিক্স দেশগুলি তো এতে উপকৃত হবেই। পাশাপাশি, প্রয়োজনে অন্য রাষ্ট্রগুলির প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আর, ব্যাঙ্ক পরিচালিত হবে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের ব্রিক্স গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই।”

২০১২ সালে দিল্লি সম্মেলনেই এই ব্যাঙ্ক গড়ার কথা প্রথম আলোচনা করে ব্রিকস গোষ্ঠীর দেশগুলি। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান বৈঠকে তা অনুমোদিত হয়। ঠিক হয়, ব্রাজিলের ব্রিকস বৈঠকেই এই নতুন উন্নয়ন ব্যাঙ্ক গড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। ভারত, চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকাঠামো গড়তে যে-বিপুল লগ্নি প্রয়োজন, আগামী দিনে তার একটা বড় অংশ ঋণ হিসেবে দিতে পারবে ওই ব্যাঙ্ক।

এ ছাড়া, আর্থিক সঙ্কটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষ করে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি হঠাত্‌ করে ব্রিক্স গোষ্ঠীভুক্ত কোনও দেশ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যেতে শুরু করলে, তখনও তার পাশে দাঁড়াতে পারবে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BRICKS bank india to head
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE