বাংলাদেশ থেকে ভর্তুকিযুক্ত সস্তার চটের বস্তা ভারতে আমদানির ফলে বাজার হারাচ্ছে এ দেশের পাট শিল্প। পাট শিল্পমহল চায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরে এ ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচ তৈরিতে উদ্যোগী হোক কেন্দ্র। দু’দেশের প্রধানদের আলোচ্যসূচিতে ঠাঁই পাক পাটশিল্পও। এ ব্যাপারে ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ) প্রধানমন্ত্রীর দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে। পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্তও।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরের মূল উদ্দেশ্য, উভয় দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি সম্পাদন। একই সঙ্গে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম লক্ষ্য। সেই সূত্রেই ভারতের পাট শিল্পের সমস্যার প্রসঙ্গটিও ওঠে। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বস্ত্রক মন্ত্রক আমাদের কাছে এ নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমরা গোটা বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।’’
পাট শিল্পমহল সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে সস্তার চটের ব্যাগ, কাপড় ও পণ্য ভারতের বাজার ছেয়ে ফেলছে। অবশ্য আইনি পথেই তা আসছে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ভারত ও অন্যান্য দেশে চটের ব্যাগ রফতানির জন্য বাংলাদেশ ১০% ভর্তুকি দেয়। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ, শ্রমিক ও মূলধনের খরচও সেখানে অনেক কম। ফলে ভারতে তৈরি চটের ব্যাগের থেকে তার দাম অনেক সস্তা। স্বাভাবিক ভাবেই এ দেশের চটকলে তৈরি বস্তার চেয়ে দ্রুতগতিতে বাজার দখল করছে বাংলাদেশের চটের বস্তা ও কাপড়।
অথচ ভারতে পাটশিল্পে বস্তার উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ১৪ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি। সরকারি সূত্রের খবর, এর মধ্যে কেন্দ্র নেয় প্রায় ৮.৫ থেকে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন। বাকিটা দেশের বাজারে বিক্রি কিংবা রফতানি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বাজারে দেশি বস্তার চাহিদা কম। বাংলাদেশ বা নেপাল থেকে আমদানি বস্তা সেই বাজার দখল করছে। ফলে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়ছে ভারতের চটশিল্প। সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ১৬টি চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কট পড়েছেন প্রায় ৭০ হাজার কর্মী।
আইজেএমএ-র ডিরেক্টর জেনারেল এস কে মজুমদার বুধবার জানান, তাঁরা বাংলাদেশের ওই ভর্তুকি দেওয়া বস্তা আমদানির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিবের কাছে তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন, তাই তাঁর কাছেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও একটি ক্ষেত্রে নির্দেশ ভাঙার আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে তার উল্লেখ করেছেন সুব্রতবাবু। ২০০২-এ তৎকালীন জুট কমিশনার এক নির্দেশে জানিয়েছিলেন, পাট ও পাটজাত বস্ত্রের ব্যবসার ক্ষেত্রে সকলকেই (উৎপাদনকারী, আমদানিকারী, প্রক্রিয়াকারী, ব্যবসায়ী) কিছু চিহ্ন বা ব্র্যান্ড উল্লেখ করতে হবে। যেমন চটের বস্তার ক্ষেত্রে কোন দেশে সেটি তৈরি, তা উল্লেখ থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যাগের উপরই সেটি এ দেশে তৈরি না আমদানি করা, তা লেখা থাকার কথা। কেন্দ্রীয় বরাত বা যে-সব প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা নির্দিষ্ট থাকবে, সেখানে যাতে অন্য দেশে তৈরি চটের ব্যাগ ঢুকে পড়তে না-পারে সে জন্যই এই রক্ষাকবচ তৈরি হয়েছিল। ভারতে তৈরি বস্তাতেও তার উল্লেখ থাকে। কিন্তু অভিযোগ, বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে যে-সব বস্তা আসছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলির উপর এমন কোনও চিহ্ন থাকছে না, বা সেগুলি যে-বিদেশে তৈরি, তার উল্লেখ থাকছে না। অনেক ক্ষেত্রে আবার সেই সুযোগে কম দামে আমদানি করা বস্তার উপরে পরে ভারতে তৈরির ছাপ দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফলে সরকারি বরাতে ভারতীয় সংস্থার বদলে আমদানি করা সেই বস্তাও মিশে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy