ক্ষুদ্র চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনা বিমা চালু করেছিল টি বোর্ড। কিন্তু ওই সব বাগানে শ্রমিকের চেয়ে মালিকই বেশি। ফলে অবস্থার চাপে পড়ে এখন নিয়ম বদল করে মালিকদেরও এই সুবিধা দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। যদিও তা কার্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করছে কেন্দ্রের উপরই।
১০.১২ হেক্টরের থেকে কম জমিতে চা উৎপাদন হলে তাকে ক্ষুদ্র চা চাষ ধরা হয়। এগুলিকে সুবিধা দিতে দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানেই ক্ষুদ্র চা চাষে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য দুর্ঘটনা বিমা প্রকল্পের কথা বলা হয়। এ ধরনের বাগানে কাজ করা ১৮-৭০ বছর বয়সী শ্রমিকদের জন্য বছরে দু’লক্ষ টাকার ওই বিমা চালু করে টি বোর্ড। যার প্রিমিয়াম বার্ষিক ১৪ টাকার মধ্যে ১০.৫০ টাকা দেবে বোর্ড। ৩.৫০ টাকা দেবেন শ্রমিক। সম্প্রতি এই বিমার জন্য বোর্ড আবেদন জানালেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি বলেই সরকারি সূত্রের খবর।
আর বিপত্তির সূত্রপাত সেখানেই। প্রকল্পটি আদৌ ক্ষুদ্র চা চাষের পক্ষে কতটা সহায়ক হবে, উঠছে সে প্রশ্নও। কারণ, তাতে ক্ষুদ্র চা চাষে যুক্ত শ্রমিকদের জন্যই এই বিমার কথা বলা হয়েছে, ওই সব বাগানের মালিকের জন্য নয়। যেটা সমস্যার মূলে।
চা শিল্পমহল এবং টি বোর্ড সূত্রের খবর, দেশে এখন প্রায় ২ লক্ষ ক্ষুদ্র চা চাষি আছেন। এঁদের মধ্যে অসম ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে অধিকাংশ চাষির জমি খুবই কম। ফলে বেশির ভাগ বাগানে জমির মালিকরা নিজেরাই চাষ করেন। প্রয়োজনে অস্থায়ী ভাবে কিছু শ্রমিককে কাজে লাগান। ফলে এই শ্রমিকেরা একাধিক বাগানে কাজ করেন। উপরন্তু এখন বহু বাগানে যন্ত্রের সাহায্যেও পাতা তোলা হচ্ছে। বেশির ভাগ বাগানের মালিকরা নিজেরাই সেই কাজ করে নিচ্ছেন। ফলে শ্রমিক চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছে।
প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, ওই বিমা ক্ষুদ্র চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য। জমির মালিকানা থাকলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। শ্রমিক যে ওই বাগানে কাজ করছেন, প্রমাণ হিসেবে তার সার্টিফিকেটও দিতে হবে মালিকের তরফে। তাই বাগানের জমির মালিকরা নিজেরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও প্রকল্প থেকে বাদ পড়ছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও সমস্যাটা একই রকম। তবে তুলনায় কিছুটা কম। এ রাজ্যে মোট ক্ষুদ্র চা চাষি প্রায় ৩৫ হাজার। তাঁদের প্রায় অর্ধেক মালিক হলেও নিজেরাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
সব মিলিয়ে বিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিত অনেকেই, অভিযোগ ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের। শ্রমিকদের সঙ্গে যে সব মালিক বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, তাঁদেরও প্রকল্পে যুক্ত করতে টি বোর্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছে তারা। সংগঠনটির দাবি, বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বোর্ড। নিয়ম বদলানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রকের সম্মতি লাগবে। এ নিয়ে বোর্ডের কেউ অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy