Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পে আশার আলো, কাঁটা সেই মূল্যবৃদ্ধি

শিল্পে বৃদ্ধি প্রত্যাশা ছাপালেও, দুশ্চিন্তা বাড়াল মূল্যবৃদ্ধি। অর্থনীতির ছন্দে ফেরার পথে তা কাঁটা হিসেবে দোসর হল খরার সম্ভাবনার সঙ্গে। শুক্রবার কেন্দ্রের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে শিল্প বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.১ শতাংশ। আগের মাসের (মার্চ) ২.৫ শতাংশের তুলনায় তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের তুলনাতেও তা অনেকটাই বেশি। যেমন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষাতেই অর্থনীতিবিদরা মনে করেছিলেন, এপ্রিলে দেশে শিল্পোৎপাদন বাড়বে ১.৬ শতাংশ হারে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০২:৩৩
Share: Save:

শিল্পে বৃদ্ধি প্রত্যাশা ছাপালেও, দুশ্চিন্তা বাড়াল মূল্যবৃদ্ধি। অর্থনীতির ছন্দে ফেরার পথে তা কাঁটা হিসেবে দোসর হল খরার সম্ভাবনার সঙ্গে।

শুক্রবার কেন্দ্রের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে শিল্প বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.১ শতাংশ। আগের মাসের (মার্চ) ২.৫ শতাংশের তুলনায় তো বটেই, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের তুলনাতেও তা অনেকটাই বেশি। যেমন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষাতেই অর্থনীতিবিদরা মনে করেছিলেন, এপ্রিলে দেশে শিল্পোৎপাদন বাড়বে ১.৬ শতাংশ হারে। অনেকেই মনে করছেন, চিনকে টপকে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হিসেবে ভারতকে তুলে ধরার যে প্রচার মোদী-সরকার করছে, শিল্পবৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানের পরে আপাতত আরও জোর গলায় তা করতে পারবে তারা। এই খবরে প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি শিল্পমহল। অর্থনীতি ছন্দে ফিরছে বলে তাদের আশা। তবে পুরোদস্তুর ‘অচ্ছে দিন’ যে এখনও আসেনি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছে শিল্পমহল।

কিন্তু শিল্পের চাকা ঘোরার আশা জাগানো এই খবরে এ দিন কিছুটা হলেও জল ঢেলে দিয়েছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির পারদ উপর দিকে ওঠা। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসে তা পৌঁছেছে ৫.০১ শতাংশে। ঠিক আগের মাসের (এপ্রিল) ৪.৮৭ শতাংশের তুলনায় যা কিছুটা বেশি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিছক সংখ্যার হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি সূচকের এই উত্থান তেমন মারকাটারি নয়, প্রত্যাশিতও। জানুয়ারির মধ্যে তা ৬% ছোঁবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এইটুকু বৃদ্ধিতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে শিল্পমহল। তাদের আশঙ্কা, এমনিতেই মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিলে, এখনই সুদ আর না-কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তার উপর আবহাওয়া দফতর খরার রক্তচক্ষু দেখাতে শুরু করায় সেই ঝুঁকি তিনি আরওই নেবেন না। কারণ, ভারতের মতো বৃষ্টিনির্ভর চাষের দেশে খরা হলে, মার খাবে কৃষি উৎপাদন। বাড়বে খাদ্যপণ্যের দাম। ফলে তড়তড়িয়ে চড়বে মূল্যবৃদ্ধি সূচকও। এই সম্ভাবনাকে গোড়াতেই নিকেশ করতে রাজন আর সুদ কমানোর আগে দশ বার ভাববেন বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ দিন এই জোড়া পরিসংখ্যান প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী গলায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আগামী দিনে ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধির আরও উঁচু হার ছুঁতে পারব আমরা।’’ জেটলির সঙ্গে একমত অ্যাক্সিস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের কর্তা আর শিবকুমার। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন মাসের পরিসংখ্যান থেকে অর্থনীতির (বিশেষত শিল্প) ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার ছাপ স্পষ্ট।’’

শিল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আশা জুগিয়েছে মূলত দু’টি পরিসংখ্যান। দেখা যাচ্ছে, এপ্রিলে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৩.১ শতাংশ। মার্চে যা বাড়া তো দূর অস্ত্‌, বরং সরাসরি কমেছিল। আলোচ্য সময়ে মূলধনী পণ্যের উৎপাদনও বেড়েছে ১১.১%। কল-কারখানায় উৎপাদনও বেড়েছে ৫.১% হারে। সাধারণত ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির মানে অর্থনীতির হাল ফিরতে শুরু করা। আর মূলধনী পণ্য ব্যবহার হয় অন্য পণ্যের উৎপাদনে। ফলে তা বেশি বিক্রি হওয়ার অর্থ সেগুলি ব্যবহার করে তৈরি হওয়া পণ্যসামগ্রীও আগামী দিনে আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা শিল্পপতিদের।

কিন্তু আকাশে মেঘের অভাবই আগামী দিনে কল-কারখানার উৎপাদনে ছন্দ খুঁজে পাওয়ার পথে বাধা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্র ও শিল্পমহল। দেখা যাচ্ছে, এ বার খুচরো মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার অন্যতম কারণ ডালের দর ১৬.৬২% বাড়া। যে সম্ভাবনা আগাম আঁচ করে কয়েক দিন আগেই প্রয়োজনে ডাল আমদানির কথা আলোচনা হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। সুতরাং শিল্প কিছুটা আশার আলো দেখালেও, দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধির হারকে উঁচু তারে বেঁধে রাখতে আপাতত মেঘের আশায় আকাশের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE