নন্দন নিলেকানি, নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান, ইনফোসিস।—ফাইল চিত্র।
এক শুক্রবার থেকে আর এক শুক্রবার। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমূল বদলে গেল ইনফোসিসের অবস্থান!
নন্দন নিলেকানি সংস্থার নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির পাশে দাঁড়াল তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির পরিচালন পর্ষদ। যে বোর্ড ১৮ অগস্ট বিশাল সিক্কার বিদায়ের জন্য কড়া ভাষায় নারায়ণমূর্তির সমালোচনা করেছিল, তারাই এ দিন (২৫ অগস্ট) জানাল, সংস্থার কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠাতাকে আঘাত করা তাদের লক্ষ্য ছিল না। খোদ নিলেকানিও বললেন, বোর্ড এবং মূর্তির সম্পর্ক জোড়া লাগাতে তিনি দায়বদ্ধ।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, বৃহস্পতিবার পর্ষদ থেকে সিক্কা, জেফ্রি এস লেম্যান এবং জন এচেমেন্ডি ইস্তফা দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বাকিরা তো গত সপ্তাহেও মূর্তি বিরোধিতায় সামিল ছিলেন। তাহলে এমন ভোলবদল সম্ভব হল কোন ভোজবাজিতে? এর কোনও স্পষ্ট উত্তর নিলেকানি দেননি। শুধু জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বোর্ডের অবস্থান এটাই। একই সঙ্গে এ দিন বারবার তাঁর দাবি, নন-এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসেবে সমস্ত শেয়ারহোল্ডার, ক্লায়েন্ট এবং কর্মীদের কাছে তিনি দায়বদ্ধ। অর্থাৎ ইঙ্গিত, মূর্তিকে শ্রদ্ধা করলেও শুধু তাঁর বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠাতার কথা ভেবে সংস্থা চালাবেন না তিনি। বললেন, আপাতত প্রথম লক্ষ্য, স্থিতি আনা। ঢেলে সাজা ব্যবসা কৌশল। নতুন সিইও-এমডি খোঁজার কাজও এ দিনই শুরু করে দিয়েছে সংস্থা।
ভোলবদলে ইনফোসিস বোর্ডের বিবৃতি
১৮ অগস্ট, ২০১৭
• বোর্ড পাশে থাকা সত্ত্বেও মূর্তির লাগাতার আক্রমণের কারণেই সরে যাচ্ছেন বিশাল সিক্কা
• মূর্তির আনা মিথ্যে ও ভিত্তিহীন অভিযোগে ক্ষতি হচ্ছে সংস্থার
• বারবার মূর্তি এমন সমস্ত ‘অন্যায়’ দাবি করেছেন, যা তাঁর নিয়ম মেনে সংস্থা পরিচালনার দাবির সঙ্গে কোনও ভাবেই খাপ খায় না
২৫ অগস্ট, ২০১৭
• সম্প্রতি পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে নারায়ণমূর্তির সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। মূর্তি সংস্থার কৃষ্টির প্রতিষ্ঠাতা। সর্বোচ্চ মানের সংস্থা পরিচালনার সংস্কৃতিও তৈরি তাঁর হাত ধরে। তাই বোর্ড মনে করে, মূর্তি বা অন্য কাউকে দুঃখ দেওয়া বা ক্ষুব্ধ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। এই ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক
নিলেকানি শুধু ইনফোসিসের প্রাক্তন সিইও (২০০২-২০০৭) কিংবা অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ভারতের অন্যতম পরিচিত মুখ। আধারের তথ্যপ্রযুক্তি-কাঠামো তৈরির অন্যতম কাণ্ডারী। তাই তিনি ফিরলে লগ্নিকারীদের আস্থা ফিরবে বলে মনে করছিলেন অনেকে। এ দিন নিলেকানি বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দিনেই সেই পথে পা বাড়িয়েছেন তিনি। কথা বলেছেন লগ্নিকারীদের সঙ্গে।
সিক্কার জমানায় শেষ দিকে তাঁর ও বোর্ডের বিরুদ্ধে সংস্থা পরিচালনা নিয়ে নাগাড়ে তোপ দেগে গিয়েছেন মূর্তিরা। সামঞ্জস্যহীন দরে ইজরায়েলীয় সংস্থা পানায়া অধিগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, তা থেকে না কি অন্যায় সুবিধা পেয়েছেন সিক্কা। সংস্থা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে প্রাক্তন সিএফও রাজীব বনসলকে আকাশছোঁয়া টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েও তিক্ততা তৈরি হয়েছে দু’তরফে। এক সময় মূর্তি বলেন, পানায়া নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট সকলের সামনে আনলে তবেই ক্ষান্ত হবেন তিনি। উল্টো দিকে বোর্ডের দাবি ছিল, তদন্তে গড়মিল কিছু মেলেনি। এ দিন নিলেকানি বলেছেন, যাবতীয় তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন তিনি।
নন্দন উবাচ
• সংস্থার কর্ণধার হিসেবে আমি সমস্ত শেয়ারহোল্ডারেরই প্রতিনিধি।...বোর্ড এবং মূর্তির সম্পর্ক জোড়া লাগাতে আমি দায়বদ্ধ। যিনি কিংবদন্তি দূরদ্রষ্টা।
• আমি এখানে, কারণ (এ জন্য) আর কেউ ছিল না।
• বিশ্বাস করি, শুধু সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার দৌলতে এই পদে আসিনি।
• প্রথম বার ইনফোসিসে যোগ দিয়েছিলাম ২৬ বছরে। ফিরলাম ৬২-তে। জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।
প্রথম পদক্ষেপ
• শুরুতেই লক্ষ্য, এই টালমাটাল অবস্থা কাটিয়ে স্থিতি আনা। গুরুত্ব পাবে বোর্ডের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতাদের সুসম্পর্ক তৈরিও
• অক্টোবরের মধ্যে ঢেলে সাজা সংস্থার ব্যবসা-কৌশল
• সিইও-এমডি খুঁজতে দায়িত্ব দেওয়া হল নিয়োগ সংস্থা এগন জেন্ডারকে
• সংস্থা পরিচালনায় গড়মিল নিয়ে ওঠা অভিযোগে যে সমস্ত তদন্ত হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করবেন খোদ নিলেকানি
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, তবে কি সেই রিপোর্ট সবার সামনে আনবেন? সরাসরি উত্তর না-দিয়ে নিলেকানি বলেছেন, সিদ্ধান্ত নেবেন বুঝেশুনে।
অনেকে বলছেন, মাঝে তিন বছর ‘বহিরাগত’ সিক্কার হাতে থাকার পরে ইনফোসিস যে ফের প্রতিষ্ঠাতার হাতে ফিরল, প্রথম দিনেই তা স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy