সরাসরি ইউরোপে যাওয়ার উড়ান নেই! সেই কবে মুখ ফিরিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহান্সা। সরাসরি লন্ডনের উড়ান তুলে নিয়েছে দেশীয় সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। এমনকী দেশের মধ্যে অন্য শহরের উদ্দেশে ডানা মেলা বিমানের বেশি ভাড়ার বিজনেস ক্লাসের আসনও সাধারণত ভর্তি হতে চায় না এই শহর থেকে। বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলির মুখে সেই উদ্বেগ শোনা গিয়েছে বারবার। অথচ এই কলকাতাকেই কিন্তু নিজেদের উড়ান মানচিত্রে যত্নের জায়গা দিচ্ছে সস্তার বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলি। এমনকী তাকে দেখছে ব্যবসা পরিকল্পনার অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে।
উড়ানের রুটে কলকাতাকে বাড়তি গুরুত্বের কথা অনেক আগেই জানিয়েছে ইন্ডিগো। একই কথা বলেছে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়া। এ বার সেই একই ইঙ্গিত ন’বছর পরে ফের নতুন করে দৌড় শুরু করা এয়ার ডেকানের কথাতেও। সস্তার টিকিটে দেশে বিমান পরিবহণের নকশা এক সময় আমূল বদলে দেওয়ার পরেও মুখ থুবড়ে পড়েছিল যারা।
কর্ণধার ক্যাপ্টেন গোপীনাথের দাবি, মাস খানেকের মধ্যেই কলকাতা থেকে ছোট বিমানে জামশেদপুর, বার্নপুর, দুর্গাপুর, কোচবিহার, বাগডোগরা, আগরতলা, রাউরকেলার মতো শহরে উড়ান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। ব্যবহার হবে ১৯ আসনের বিচক্রাফ্ট বিমান।
কলকাতা সস্তার উড়ানের কতখানি পছন্দের গন্তব্য, তা স্পষ্ট বিমান ওঠা-নামার পরিসংখ্যানেই। এ শহর থেকে ইন্ডিগোর উড়ান সবচেয়ে বেশি। দিনে ৯৬টি। দ্বিতীয় জেট এয়ারওয়েজ। কিন্তু ফারাক বিপুল। জেটের উড়ান দিনে ৩৪টি।
জেটের মতো ইন্ডিগোয় উচ্চ শ্রেণির আসন নেই। টিকিটের দামের মধ্যে খাবার দেওয়ার বালাই নেই। স্পাইসজেট, এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার মতো সস্তার বিমান সংস্থাগুলিও নিয়মিত উড়ান চালাচ্ছে কলকাতা থেকে। এ বার সেই তালিকায় জুড়তে চলেছে এয়ার ডেকানের নামও।
দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুর মতো নিয়মিত বিজনেস ক্লাস ও প্রথম শ্রেণির যাত্রী কলকাতায় অনেক কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ শহরের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী নিয়মিত সেখানে যাতায়াত করেন। তাতে আসন ভরে না। অভিযোগ, বড় শিল্প কিংবা সংস্থা এখানে দেশের অন্য বড় শহরগুলির তুলনায় অনেক কম। ফলে কম তাতে কাজ করা উচ্চপদস্থ কর্তাদের সংখ্যা। তাই বিজনেস ক্লাসে নিয়মিত যাতায়াত করবেন কাঁরা? মূলত তাঁরা ও উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীরাই তো ওই সমস্ত আসনের খরিদ্দার।
এই ছবি এতটাই স্পষ্ট যে, শহর ছাড়ার আগে দুই বিদেশি বিমান সংস্থা এ কথা বলেও গিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, ইকনমি ক্লাস বা সাধারণ শ্রেণির আসন ভর্তি থাকলেও যেখান থেকে সংস্থার লাভ বেশি, সেই উচ্চ শ্রেণির আসনের যাত্রী কম বলেই কলকাতা থেকে পরিষেবা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
তা হলে সস্তার উড়ান সংস্থার ঘাঁটি হিসেবে এ শহরের এমন কদর কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর স্পষ্ট কয়েকটি কারণ রয়েছে—
• ইকনমি ক্লাসের আসন ভরার অসুবিধা এ শহরে সে ভাবে নেই। এখানে উড়ান চালানো সংস্থাগুলির অভিজ্ঞতা অন্তত তা-ই বলে।
• কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থান যথেষ্ট সুবিধাজনক। এখান থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে কোনও শহরে যাওয়া যায়। ঘণ্টা চারেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে। আর হালে ওই সব দেশে (সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক, মালয়েশিয়া) ভারতীয়দের ভিড় বাড়ছে চোখে পড়ার মতো।
• এখানে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট বা বিস্তারার মতো দেশি কিংবা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহান্সা, ক্যাথে প্যাসিফিক, জাপান এয়ারলাইন্সের মতো আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার ঠেলাঠেলি ভিড় নেই। তাই এখান থেকে প্রাইম টাইমে (যাত্রী পাওয়ার ক্ষেত্রে যা দিনের সবচেয়ে লোভনীয় সময়) স্লট (বিমানবন্দর থেকে ওঠা-নামার অনুমতি) পাওয়া অন্য বড় বিমানবন্দরের তুলনায় সহজ।
এই সমস্ত সুযোগ কাজে লাগিয়েই কলকাতাকে ঘাঁটি বানাতে উদ্যোগী সস্তার উড়ান সংস্থাগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy