—ফাইল চিত্র।
অনাদায়ি ঋণ নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তা তো আছেই। সদ্য প্রকাশিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে, জালিয়াতিও তাদের এবং বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির মাথাব্যথার অন্যতম কারণ।
বুধবার প্রকাশিত শীর্ষ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ সালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অঙ্ক ৪১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা এমনকি তার আগের বছরেই ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই জালিয়াতি লাফিয়ে বাড়ার পিছনে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে (পিএনবি) নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীর প্রতারণা অবশ্যই বড় কারণ। কিন্তু শুধু এই মামা-ভাগ্নে জুটিই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাতিয়েছেন, তা নয়। দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে গড়ে সাড়ে চার হাজার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মামলা হয়েছে। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালে তা এক লাফে বেড়ে পৌঁছেছে ৫,৮৩৫টিতে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব বলছে, মুম্বই, কলকাতা ও দিল্লি—এই তিন শহরেই জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে সব থেকে বেশি। জালিয়াতির সবচেয়ে পরিচিত পথ হল, ঋণ নেওয়ার সময়ে একাধিক বন্ধক রাখা এবং নথি জাল করা।
এই সমস্ত কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মত, হিসেব পরীক্ষা (অডিট) ও ব্যাঙ্ক পরিচালনায় আরও অনেক উন্নতির দরকার। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যে সমস্ত অডিট করে, তা আরও জোরদার করা জরুরি। যেমন, তৎক্ষণাৎ হিসেব পরীক্ষা বা ‘রিয়েল-টাইম অডিট’ করতে হবে।
জালিয়াতি রুখতে (বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে) আরও বেশি ক্ষমতার জন্য সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে জোরালো সওয়াল করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল। তাঁর বক্তব্য ছিল, অনাদায়ি ঋণ থেকে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি— পান থেকে চুন খসলেই আঙুল ওঠে পাহারাদারের ব্যর্থতার দিকে। অথচ হাতে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা না দিয়ে সেই পাহারাদার শীর্ষ ব্যাঙ্ককেই করে রাখা হয়েছে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আঁটোসাটো নজরদারি চাইলে, আগে তার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি ক্ষমতা তুলে দেওয়া জরুরি বলে যুক্তি পেশ করেছিলেন তিনি।
তা শুনে অর্থ মন্ত্রকের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত ক্ষমতা না থাকার কথা পটেল বলছেন। কিন্তু বেসরকারি ব্যাঙ্কে সেই সমস্যা নেই। তাহলে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে কেলেঙ্কারি এড়ানো গেল না কেন?
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট কিন্তু বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তুলনায় বেসরকারি ব্যাঙ্কে জালিয়াতি অনেক কম। এক লক্ষ টাকার বেশি জালিয়াতির ৯২.৯ শতাংশই ঘটেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। ঋণ নেওয়ার সময়ে জালিয়াতির ক্ষেত্রেও ৮৭% হয়েছে সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে।
নীরব-কাণ্ড সামনে আসার পরে বিশেষজ্ঞরাও বলেছিলেন, খাতায়-কলমে ব্যাঙ্কে নিয়মের খামতি নেই। ঋণের যাবতীয় কাগজপত্তর, ঠিকানা, বৃত্তান্ত খুঁটিয়ে দেখার দস্তুর আছে। ঋণ মোটা অঙ্কের হলে, বহু স্তরে তার উপর নজরদারির বন্দোবস্তও আছে। কিন্তু সেই বজ্র আঁটুনির মধ্যেই রয়ে গিয়েছে নিঃশব্দ গেরো। সেই সমস্ত ফাঁক মেরামতে জোর দেওয়ার কথা রয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের রিপোর্টেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy