Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আঙুর কিনতে আমেরিকার বাজি ভারতের চেরির বাজার

আঙুর ফল টক নয় ঠিকই। কিন্তু চেরিও খেতে ভাল। আমেরিকা তাই বলছে, তারা ভারতের আঙুর খেতে রাজি। কিন্তু এ দেশের লোককেও তাদের চেরি খেয়ে দেখতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৫৮
Share: Save:

আঙুর ফল টক নয় ঠিকই। কিন্তু চেরিও খেতে ভাল। আমেরিকা তাই বলছে, তারা ভারতের আঙুর খেতে রাজি। কিন্তু এ দেশের লোককেও তাদের চেরি খেয়ে দেখতে হবে।

বাণিজ্য নীতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি করতে বসে এ বার আঙুরের বদলে চেরির শর্ত রেখেছে আমেরিকা। ২০০৮ থেকে এ দেশের আম রফতানি হচ্ছে আমেরিকায়। আঙুরের মতো ফলও আরও বেশি করে আমেরিকায় বেচতে চাইছে ভারত। আজ তাই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য নীতি নিয়ে বৈঠকের মঞ্চে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মার্কিন সরকারের বাণিজ্য দূত মাইকেল ফ্রোম্যানের কাছে আর্জি জানান, আঙুরের জন্য আমেরিকার বাজার খুলে দেওয়া হোক। ফ্রোম্যান পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁদের চেরির জন্যও ভারতের বাজার খুলে দিক মোদী সরকার।

আঙুর-চেরির মিষ্টিমুখেই অবশ্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠক থেমে থাকেনি। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্র যে আরও বেশি মার্কিন লগ্নি টানতে চাইছে, সে প্রসঙ্গও ওঠে। সীতারামন ফ্রোম্যানের কাছে আর্জি জানান, ভারতে প্রতিরক্ষা, ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসার সরঞ্জাম উৎপাদনে মার্কিন লগ্নিকারীরা এগিয়ে আসুক। ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে ভারতে মার্কিন লগ্নির পরিমাণ ছিল ৪২০ কোটি ডলার। কেন্দ্র চাইছে, উৎপাদন শিল্পে আরও বেশি মার্কিন লগ্নি আসুক। মন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন সরাসরি বিদেশি লগ্নির রাস্তা খুলে গিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা চাইছে, মোদী সরকার খুচরো ব্যবসার মতো ক্ষেত্রেও বিদেশি লগ্নির রাস্তা খুলে দিক। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ব্যবসায়ী ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে এই সাহস দেখাতে পারেনি মোদী সরকার। আজ মার্কিন দূত সে দিকেই আঙুল তুলেছেন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসঙ্গে ফ্রোম্যান বলেন, ‘‘ব্যবসার সহায়ক পরিবেশের মাপকাঠিতে বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় ভারত কিছুটা এগিয়েছে। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। কারণ লগ্নিকারীদের স্মৃতিশক্তি হাতির মতো, তাঁরা খরগোশের মতো দৌড়ে পালান, তাঁদের মনে ভেড়ার মতো ভয় থাকে। এক কথায়, ব্যবসার পরিবেশ বড়ই স্পর্শকাতর।’’ ফ্রোম্যানের বক্তব্য, মোদী সরকার ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ও অর্থনীতির আগল আরও খুলতে পারলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। গত বছর ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯,৯০০ কোটি ডলার।

আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের ভিসা ফি কমানো এবং তাঁদের উপর সামাজিক সুরক্ষা কর চাপানো বন্ধ করতে ওবামা প্রশাসনের কাছে এ বারের বৈঠকেও ফের ভারত দাবি জানিয়েছে। এইচ-ওয়ানবি এবং এল-ওয়ান ভিসা নিয়ে মূলত যে-সব তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে চান, তাঁদের ভিসা ফি যথেষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকার। সামাজিক সুরক্ষা করও চাপানো হচ্ছে।

প্রতি বছর ভারতের পেশাদাররা এই খাতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার কর মেটান। কিন্তু ভিসার মেয়াদ কম হওয়ায় সামাজিক সুরক্ষা পান না। একই আয়ে দু’বার কর বসানোর এই বৈষম্য দূর করতে দিল্লি চাইছে, অন্যান্য দেশের মতো ভারতের সঙ্গেও এ নিয়ে ‘টোটালাইজেশন এগ্রিমেন্ট’ করুক আমেরিকা। যাতে এক দেশের পেশাদার আর এক দেশে কাজ করতে গেলে সামাজিক সুরক্ষা কর দিতে না হয়। সীতারামন বলেন, ‘‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি, এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের সামনে বাধা আসছে। ওঁরা শুনেছেন। আশা করি, ইতিবাচক সাড়া মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cherry Grape Indian market America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE