ভারতীয় শেয়ার বাজারে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে আজ। এ দেশে এই প্রথম কোনও বিমা সংস্থা নতুন ইস্যু নিয়ে জনসাধারণের দরবারে হাজির হচ্ছে আজ সোমবার। বেসরকারি আই সি আই সি আই প্রুডেন্সিয়াল লাইফ ইনশিওরেন্স কোম্পানি ৬০৫৭ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়ছে জনসাধারণের উদ্দেশে। তবে সংস্থা নিজে নয়, শেয়ার বিক্রি করবে আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক-সহ কোম্পানির প্রধান কয়েকটি উদ্যোক্তা।
নতুন ইস্যু বা আইপিও-র মাধ্যমে এই দফায় বিক্রি করা হবে বিমা সংস্থাটির মোট ১৯ শতাংশ মালিকানা। ২৫ শতাংশে পৌঁছতে তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করতে হবে আরও ৬ শতাংশ। শেয়ার বিক্রির জন্য মূল্য-বন্ধনী ঠিক হয়েছে ৩৩০ টাকা থেকে ৩৩৪ টাকা। আবেদন করতে হবে কম করে ৪৪টি শেয়ারের জন্য। ইস্যু করা হবে মোট ১৮.১৩ কোটি শেয়ার। ইস্যুর পরে এই শেয়ার নথিবদ্ধ করা হবে এনএসই এবং বিএসই শেয়ার বাজারে। ২০১০ সালে কোল ইন্ডিয়ার ১৫,০০০ কোটি টাকার ইস্যুর পরে এটিই বৃহত্তম পাবলিক ইস্যু। আজ ১৯ তারিখে খুলে এই ইস্যু বন্ধ হবে ২১ সেপ্টেম্বর।
প্রস্তাবিত শেয়ার বিক্রির পরেও দেশের বৃহত্তম এই বেসরকারি বিমা সংস্থার ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার মালিকানা থাকবে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের হাতে। ৩৩৪ টাকা দাম ধরলে এই বিমা সংস্থার মোট শেয়ার মূল্যায়ন দাঁড়ায় ৪৭,৮৮০ কোটি টাকা। গুণমানের বিচারে ইস্যুটিকে ‘বেশ ভাল’-র পর্যায়ে ফেলা যায়। কারণগুলি হল:
• শক্তিশালী উদ্যোক্তা
• বিমা বাজারের মোট ১১.৩ শতাংশ দখলে থাকা
• ১৯,০০০ কোটি টাকারও বেশি প্রিমিয়াম বাবদ আয়।
• লাভ ১৬৫৩ কোটি টাকা
• ২০১২ সাল থেকে ইকুইটির উপর রিটার্ন ৩০ শতাংশেরও বেশি
• শক্তিশালী ব্যবসার মডেল ও ভাল নেটওয়ার্ক (১.২৫ লক্ষ এজেন্ট)
• ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎকর্ষ বৃদ্ধি
• অভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্ট টিম
অর্থাৎ আশা করা যায়, এই ইস্যুর সফল আবেদনকারীরা শুরুতেই লাভের মুখ দেখবেন। যাঁরা ইকুইটির বাজারে প্রবেশ করবেন বলে মনস্থ করেছেন, তাঁরা এই ইস্যুকে প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডাররা দু’বার আবেদন করতে পারবেন এই ইস্যুতে। একবার শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ও অন্য বার সাধারণের কোটায়। আইসিআইসি আই ব্যাঙ্কের শেয়ারহোল্ডার কম-বেশি ৯.৫ লক্ষ। আকার বেশ বড় হওয়ায় আবেদন করে সফল হওয়ার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে এই ইস্যুতে।
আইসিআইসিআই প্রু লাইফ ইস্যু-র তাৎপর্য বেশ সুদূরপ্রসারী হতে পারে। এলআইসি ছাড়া দেশে রয়েছে ২১টি বেসরকারি বিমা সংস্থা। আই-প্রু লাইফের দেখানো পথে এর পর হয়তো অনেক বিমা সংস্থাকে আমরা বাজারে হাজির হতে দেখব। স্টেট ব্যাঙ্কের মতো এলআইসি-ও একদিন হয়তো শেয়ার নিয়ে হাজির হবে জনতার দরবারে। বিমা কোম্পানিগুলি শেয়ার নথিবদ্ধ হলে এক দিকে তাদের এবং অন্য দিকে বাজারের উৎকর্ষ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। লগ্নিকারীদের কাছ থেকে আই প্রু ইস্যু কতটা সাড়া পায়, তা-ই এখন দেখার।
আই প্রু ইস্যু ছাড়া চলতি সপ্তাহে আর যে-সব বিষয়ের উপর লগ্নিকারীদের নজর থাকবে, সেগুলি হল মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ নির্ধারণ সংক্রান্ত বৈঠক। সপ্তাহের মাঝামাঝি গোটা পৃথিবী জানতে পারবে ফেড রেট এই দফায় বাড়ছে কি না। আমেরিকায় সুদ বাড়া, না-বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে বাজারের ওঠা-পড়া। সুদ যদি সত্যিই বাড়ানো হয়, তবে বাজার পড়বে সন্দেহ নেই। অন্য দিকে সুদ প্রায় একই জায়গায় ধরে রাখার সিদ্ধান্ত সেনসেক্সকে হাজার পয়েন্ট তুলে দিতে পারে। এই কারণে বাজারে কিছুটা ফাটকা কারবারের সম্ভাবনা থাকবে।
তবে ফেড রেট অনধিক ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়লে এ দেশের অর্থনীতির উপর তা খুব বেশি চাপ সৃষ্টি করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বরং অর্থনীতিবিদরা বেশি চিন্তিত স্লগ ওভারে বর্ষা কেমন খেলে তা-ই নিয়ে। এখনও পর্যন্ত তোলা রানের গতি শেষের দিকে যেন কিছুটা শ্লথ ঠেকছে। ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে কৃষি ভাল করলে দেশ ভাল করবে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। নজর থাকবে পুজোর মরসুমে প্রকাশিত হওয়া দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফলের উপরও। সব মিলিয়ে একটু বড় মেয়াদে বাজার কিন্তু আশাবাদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy