Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কটাক্ষ মোদী সরকার, নীতি আয়োগকে

মনগড়া তথ্যেই চড়া বৃদ্ধির দাবি

এ দিনই আবার মুম্বইয়ে পর পর দু’জন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের বিদায় নিয়ে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন চিদম্বরম।

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৫
Share: Save:

স্বাধীনতার আগে এবং পরে মিলিয়ে বৃদ্ধির হার যে ইউপিএ সরকারের প্রথম দফাতেই সব থেকে বেশি ছিল, সেই দাবি করেছিলেন গতকালই। ওই আক্রমণ আরও ধারলো করে শনিবার টুইটে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, এনডিএ জমানায় সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির হারের যে দাবি বিজেপি বা মোদী সরকার করে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। এবং তা নীতি আয়োগের মনগড়া সংখ্যার ভিত্তিতে করা।

এ দিনই আবার মুম্বইয়ে পর পর দু’জন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের বিদায় নিয়ে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন চিদম্বরম। রঘুরাম রাজন এবং উর্জিত পটেলের নাম না করেও বলেছেন, এ ভাবে পর পর দুই শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নরের অপমানিত হয়ে চলে যাওয়ার নজির ভারতে নেই। কটাক্ষ করেছেন দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়েও। সে প্রসঙ্গে তুলে এনেছেন চাষিদের দুর্দশা, তাঁদের ন্যূনতম দাম না পাওয়া, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সুবিধা কাজে লাগাতে ব্যর্থতা, কাজের সুযোগ তৈরিতে মুদ্রা প্রকল্পের ব্যর্থতার মতো বিভিন্ন বিষয়কে।

অর্থনীতির আয়তন কী ভাবে বাড়ছে, ক্ষমতায় এসেই তা মাপার ফিতে বদলে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। জিডিপি মাপার সেই নতুন ফিতেয় তাঁর আমলে বৃদ্ধির সংশোধিত হার বেড়েছে। কিন্তু ‘মান গিয়েছে’ মনমোহন সিংহের! ২৮ নভেম্বর পরিসংখ্যান মন্ত্রক এবং নীতি আয়োগ একযোগে জানিয়েছিল, জিডিপি মাপার নতুন হিসেবে ইউপিএ জমানার অর্থনীতিকে আতসকাচের নীচে ফেললে ২০০৫-০৬ থেকে ২০১১-১২ পর্যন্ত আগের তুলনায় শুধু কমেই যাচ্ছে বৃদ্ধির হার। আগে ২০১০-১১ সালে বৃদ্ধি ১০% পেরনোর দাবি করা হলেও, আদপে তা ঘটেনি। এমনকি অঙ্ক বলছে, মোদী জমানার গড় বৃদ্ধি দ্বিতীয় দফার ইউপিএ সরকারের থেকে বেশি।

বিতর্ক এর পর থেকেই। ২০১৫ সালে জিডিপি মাপার এই নতুন পদ্ধতি ও তার জন্য ভিত্তিবর্ষ বদল নিয়ে এমনিতেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, মোদীর আমলে বৃদ্ধিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতেই এই উদ্যোগ। একই সমীকরণে তার পরে মনমোহনের সময়কার বৃদ্ধি কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তা কি নিছকই কাকতালীয়? নাকি ভোটের মুখে প্রচারের প্রস্তুতি?

আগেই একে বাজে রসিকতা বলে কটাক্ষ করেছিলেন চিদম্বরম। উল্টো দিকে, নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমারের দাবি ছিল, হিসেবের এই পদ্ধতিই ঠিক। এ বার সেই নীতি আয়োগের পরিসংখ্যানকেই বিঁধলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী।

চিদম্বরম আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, বৃদ্ধির তথ্য তৈরির কাজ তো পরিসংখ্যান মন্ত্রকের। নীতি আয়োগের সেখানে ভূমিকা কী? পরে একই প্রশ্ন ওঠে আরও বিভিন্ন মহলে।

অনেকে আবার মনে করিয়েছিলেন, অগস্টে ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশনের ‘ফাঁস হওয়া’ এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, নতুন মাপকাঠিতেও বৃদ্ধির হারে মোদী জমানাকে হেলায় টেক্কা দিয়েছে মনমোহন সিংহের দশ বছর। ইউপিএ সরকারের দু’দফায় বৃদ্ধির গড় হার যেখানে ৮ শতাংশের উপরে ছিল, সেখানে মোদী জমানায় তা মোটে ৭.৩%। সেই ইউপিএ আমল, যার নীতিপঙ্গুত্ব এবং তার জেরে থমকে যাওয়া বৃদ্ধির হার নিয়ে মনমোহন সিংহকে নিয়মিত কটাক্ষ করতেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। পরে সরকার দাবি করে, ওই হিসেবে ভুল রয়েছে।

অনেকের ধারণা, সেই অস্বস্তির কাঁটা উপড়ে ফেলে নতুন পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে ভোটে ঝাঁপাতে চাইবেন নরেন্দ্র মোদী। দাবি করবেন, ইউপিএ আমলে ১০% ছোঁয়নি বৃদ্ধি। বলতে পারবেন, তাঁদের সময়ে গড় বৃদ্ধি ইউপিএ-২ সরকারের থেকে বেশি। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সম্ভবত সেই চেষ্টায় জল ঢালতেই এ দিন নীতি আয়োগের পরিসংখ্যানকে ফের নিশানা করলেন চিদম্বরম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

P Chidambaram Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE