টানা ১০ মাস ধরে আলগা হচ্ছে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির ফাঁস। অগস্টে তা সরাসরি কমলো ৪.৯৫%। খুচরো বাজারে অবশ্য দাম বেড়েছে। তবে তা মাত্র ৩.৬৬% হারে। সোমবার এই জোড়া পরিসংখ্যান প্রকাশের পরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মন্তব্য, ‘‘মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অগস্টে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমেছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই।’’ এই পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পমহলের সঙ্গে একই সুরে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করে অর্থ সচিব শক্তিকান্ত দাসের দাবি, ‘‘সুদ কমানোর ডাকে সাড়া দিতেই হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। কেন্দ্র এবং আরবিআই বিষয়টি একসঙ্গেই খতিয়ে দেখছে।’’
দৈনন্দিন বাজার খরচের বোঝা ততটা না-কমার কারণ, এখনও ৩.৬৬% খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। তবে দু’টি হারই স্বস্তির জায়গায় পৌঁছেছে বলে মনে করছে শিল্পমহল। এই পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আরও জোরালো হয়েছে তাদের সুদ কমানোর দাবি। তাদের মতে ঋণে সুদ কমলে শিল্প ও সাধারণ মানুষের খরচ কমার হাত ধরে চাহিদা বাড়লে প্রাণ ফিরবে অর্থনীতিতে। আর, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের ঋণনীতিতে সুদ কমতে চলেছে, এই প্রত্যাশাতেই এ দিন চাঙ্গা হয়ে ওঠে শেয়ার বাজারও। সেনসেক্স ২৪৬ পয়েন্ট বেড়ে থামে ২৫,৮৫৬.৭০ পয়েন্টে, যা গত দু’সপ্তাহে সর্বোচ্চ। সূচক ওঠায় ও বিশ্ব বাজারে ডলারের চাহিদা কমার জেরে টাকার দামও বেড়েছে ২১ পয়সা। এক ডলার হয়েছে ৬৬.৩৩ টাকা।
পাইকারি মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার আগেকার সব নজির ভেঙে অগস্টে পড়েছে (-)৪.৯৫%। যার অর্থ পাইকারি বাজারে দাম তো বাড়েইনি, বরং তা সরাসরি কমেছে এই হারে। পেঁয়াজ ও ডাল বাদে অগস্টে সব ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দামই পড়েছে, শতাংশের হিসেবে যা ১.১৩%। তার মধ্যে শাক-সব্জির দাম কমেছে প্রায় ২১%, আলু ৫২%। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে ধরলে দাম কমার হার ১৬.৫%, কল-কারখানায় তৈরি পণ্যে তা প্রায় ২%। তবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৬৫%, ডাল ৩৬%। ডিম, মাছ, মাংস ও গমের দামও বেড়েছে। জুলাইয়ে পাইকারি দর কমেছিল ৪.০৫%।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি অবশ্য এখনও শূন্যের নীচে নামেনি। অর্থাৎ দাম কমছে না, তবে তা বাড়ছে ঢিমেতালে। শাক-সব্জি, ফল ও মাছ-মাংসের দাম সামান্য হলেও বেড়েছে অগস্টে, যার জেরে ক্রেতার মূল্য সূচকের ভিত্তিতে হিসাব করা এই হার এখনও ৩.৬৬%। সংশোধিত হিসাব অনুসারে জুলাইয়ের হার ৩.৬৯%। ২০১৪-র অগস্টে তা ছিল অনেকটাই চড়া, ৭.০৩%। প্রসঙ্গত, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার ঋণনীতি ফিরে দেখার সময়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকেই গুরুত্ব দেয়।
মূল্যবৃদ্ধি বাগে আসায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ কমানোর দাবি জানিয়ে সুর চড়িয়েছে কেন্দ্র ও শিল্পমহল। তাদের মতে দ্রুত বৃদ্ধির হারে গতি ফেরাতে এই পথেই হাঁটা উচিত শীর্ষ ব্যাঙ্কের। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমের কথায়, ‘‘মূল বিষয় হল, মূল্যবৃদ্ধি গত তিন মাসে যথেষ্ট কমার মুখ নিয়েছে।’’ বণিকসভা সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের আশা আরবিআই এক ধাক্কায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাবে।’’ ফিকি প্রেসিডেন্ট জ্যোৎস্না সুরিরও মন্তব্য, ‘‘সুদ কমানোই এখন আরবিআইয়ের ঠিক পদক্ষেপ হবে। আশা করব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও তাল মিলিয়ে চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy