রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় নরেন্দ্র মোদী কিংবা অরুণ জেটলি যে কথা বলতে পারেন না, তা বলছেন সরকারের অর্থনীতিবিদরাই! তুলছেন কৃষিতে কর বসানোর মতো স্পর্শকাতর কথা। যা দেখে ক্ষমতার অলিন্দেরই অনেকের প্রশ্ন, তবে কি তাঁদের মারফত বার্তা দিয়ে আসলে এ বিষয়ে জল মাপতে চাইছে মোদী সরকার?
অর্থনীতির গতি বাড়াতে হোক বা জনমোহিনী প্রকল্পে খয়রাতি— সব কিছুর জন্যই আগে প্রয়োজন রাজকোষ ভরা। কিন্তু সমস্যা হল, আয়কর দেওয়ায় সরকারের ভরসা সেই মুষ্টিমেয় চাকুরিজীবী আর শিল্প-ব্যবসায়ী মহলের একাংশ। এ দেশের অনেকে কৃষি থেকে মোটা টাকা আয় করেন। ‘কোটিপতি চাষি’র ঘরে মার্সিডিজ, হেলিকপ্টারের গল্প মুখে-মুখে ফেরে। কিন্তু ভোট-বাক্সে রোষের কথা ভেবে চাষিদের আয়ে কর বসানোর কথা সাহস করে মুখে আনে না কোনও সরকারই। অনেকে কর ফাঁকি দিতে অন্য সূত্রের আয়কেও কৃষি-রোজগার হিসেবে দেখাতে চান।
হালে এই মৌচাকে ঢিল ছুঁড়েছেন নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়। কৃষি থেকে আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা পেরোলে, তার উপর কর বসানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। কিন্তু বিরোধীরা তা লুফে নিয়ে আক্রমণে যাবেন আঁচ করে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তড়িঘড়ি জানান, কৃষকদের আয়ে কর বসানোর কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।
অথচ ঠিক তার এক দিন পরে শুক্রবার জেটলিরই মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন বলেন, “গরিব ও ধনী চাষির ফারাক করা হবে না কেন? আমরা কেন বলব না যে, ধনীদের আয়কর দিতে হবে। তা সে আয় যেখান থেকেই হোক না কেন।” ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি এর মাধ্যমে আসলে জল মাপছে সরকার?
এই ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেরই। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালার কথায়, “প্রথমে দেবরায়, তারপরে সুব্রহ্মণ্যনের কথায় কেন্দ্রের মুখোশ খুলে গিয়েছে। এখন সরকারের আসল ইচ্ছে স্পষ্ট”।
এমনটা হতে পারে আঁচ করেই দেবরায়ের মন্তব্যের পরে তড়িঘড়ি মাঠে নেমেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। জেটলি তখন মস্কোয়। পরিস্থিতি সামলাতে উদ্যোগী হন রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢ়িয়া। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কথায় জেটলি বিদেশ থেকেই বিবৃতি জারি করেন যে, চাষে আয়কর বসানো হবে না। সংবিধানে কেন্দ্রের সে ক্ষমতাও নেই। অথচ তারপরেই সুব্রহ্মণ্যন ফের বলেন, কেন্দ্রের ক্ষমতা নেই তো কী? রাজ্যগুলি চাইলেই ধনী চাষিদের আয়ে কর বসাতে পারে।
এর পরে শনিবার নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়া বলেন, ‘‘কৃষিজীবীদের উপর কর বসানোর কথা উঠছে কী ভাবে?’’ বিবেকবাবুও সুব্রহ্মণ্যনের কথা প্রসঙ্গে বলেন, “এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই”। কিন্তু ফের চমক। এ দিন এই নিয়ে টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘মন রে কৃষিকাজ জান না। এমন মগজখানা রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা। করের নামে দাও রে বেড়া ফসলে তছরুপ হবে না।’’ ফলে আরও জোরালো হয় জল মাপার জল্পনা।
আসলে আয়করদাতার সংখ্যা যে বাড়ানো জরুরি, তা বিলক্ষণ জানেন জেটলি। বাজেট-বক্তৃতায় তিনি সে কথা বলেওছিলেন। পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছিলেন এ দেশে কর গোনা মানুষের সংখ্যা কত অল্প। কৃষিকে এনে সেই ভিত বাড়াতে এখন তাঁরা জল মাপছেন কি না, প্রশ্ন সেখানেই।
‘‘আয়করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হলে কৃষি থেকে আয়েও কর বসাতে হবে। তবে তা একটি নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা পেরোলে।’’
বিবেক দেবরায়
সদস্য, নীতি আয়োগ
(মঙ্গলবার)
‘‘বিভ্রান্তি যাতে না হয়, তার জন্য স্পষ্ট করে বলছি, কৃষি থেকে আয়ের উপর কোনও রকম কর বসানোর পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই।’’
অরুণ জেটলি
অর্থমন্ত্রী
(বুধবার)
‘‘গরিব ও ধনী চাষিদের মধ্যে ফারাক করা হবে না কেন? রাজ্যগুলি কিন্তু চাইলেই
ধনী চাষিদের উপর কর বসাতে পারে।’’
অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন
মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা
(শুক্রবার)
‘‘৮০% গরিব মানুষই গ্রামে থাকেন। নির্ভর করেন কৃষিকাজের উপর। কৃষিজীবীদের উপর কর বসানোর প্রশ্ন উঠছে
কী ভাবে?’’
অরবিন্দ পানাগড়িয়া
ভাইস চেয়ারম্যান
নীতি আয়োগ
(শনিবার)
‘‘মন রে কৃষিকাজ জান না। এমন মগজখানা রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা। করের নামে দাওরে বেড়া। ফসলে তছরুপ হবে না।’’
বিবেক দেবরায়
(শনিবার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy