Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্কে সায়

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘর থেকে ছাড়পত্র মিলেছে অনেক আগেই। এ বার ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্ক (ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক) চালু করার প্রস্তাবে সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘর থেকে ছাড়পত্র মিলেছে অনেক আগেই। এ বার ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্ক (ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক) চালু করার প্রস্তাবে সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

বুধবার এই প্রস্তাব পাশের কথা ঘোষণা করে টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, সারা দেশে ১. ৫৪ লক্ষ ডাকঘরের মধ্যে ১.৩৯ লক্ষই গ্রামাঞ্চলে। এ বার সেই উপস্থিতিকে হাতিয়ার করে প্রত্যন্ত প্রান্তেও সকলের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে ডাক বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে প্রসাদের অভিমত।

মন্ত্রীর দাবি, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে পেমেন্টস ব্যাঙ্কের ৬৫০টি শাখা। শুরুতে তহবিল ৮০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪০০ কোটি শেয়ার মূলধন। আর বাকি অর্ধেক জোগাবে কেন্দ্র। ব্যাঙ্কের নেতৃত্ব দেবেন চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার (সিইও)। আর তা চালানোও হবে পুরোদস্তুর পেশাদারি ঢঙে। আর্থিক পরিষেবা বিভাগ, ডাক বিভাগ-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা এতে যুক্ত থাকবেন বলে জানান তিনি।

গত ১৯ অগস্ট পেমেন্টস ব্যাঙ্ক খুলতে ১১ আবেদনকারীকে নীতিগত ভাবে অনুমোদন দিয়েছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তার মধ্যে ছিল ডাক বিভাগও। তখনই অনেকে বলেছিলেন, চাইলে সফল ভাবে পেমেন্টস ব্যাঙ্ক তৈরির মূল লক্ষ্যপূরণ ডাক বিভাগের পক্ষে সম্ভব। দেশ জুড়ে দেড় লক্ষের বেশি ডাকঘর। বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা না-পৌঁছনো গ্রামেও উপস্থিতি। ডাক-কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের ব্যক্তিগত পরিচিতি। এই সমস্ত শক্তি কাজে লাগালে, তা সকলের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দিতে বড়সড় ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন সকলে। বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষের কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলে ডাকঘরের জোরালো উপস্থিতি পেমেন্টস ব্যাঙ্কের মূল লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে বলে আমার ধারণা।’’

গোড়া থেকেই বলা হয়েছে যে, পেমেন্টস ব্যাঙ্ক তৈরির মূল লক্ষ্য, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধা দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও সকলের দরজায় পৌঁছে দেওয়া। যাতে সেখানে অন্তত তুলনায় ছোট অঙ্কের আমানত (প্রতি অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত) জমা করা যায়। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, আগামী দিনে দেড় লক্ষ ডাকঘর ও তার কর্মীদের দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করলে, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে কমতে পারে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখার প্রবণতাও। কারণ, ডাক-কর্মীরা টাকা জমা নিতে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে গেলে, তখন এই সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা করাই পছন্দ করবেন অনেকে। প্রসাদেরও দাবি, ‘‘২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে গ্রামীণ ডাক সেবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে উপযুক্ত যন্ত্র। আই-প্যাড, স্মার্ট ফোন দেওয়ার কথা আলোচনা হচ্ছে শহরে ডাক-পিওনদেরও।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শুরুতেই বলেছিল, পেমেন্টস ব্যাঙ্ক মারফত এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় টাকা পাঠাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। বিশেষত ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য শহর বা ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা। এর মাধ্যমে অনলাইনে কর দেওয়া থেকে শুরু করে ই-কমার্সের বিভিন্ন লেনদেনে টাকা মেটানোর পরিষেবা মিলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যাঙ্ক ব্যবহার হতে পারে স্কুল-কলেজের বেতন মেটানো থেকে শুরু করে ভর্তুকি, পেনশন পাওয়ার মতো হাজারো কাজে। সরকার যেখানে প্রায় সমস্ত ভর্তুকি বা সরকারি আর্থিক সুবিধাই সরাসরি অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দিতে চাইছে, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তাতে সাফল্য পেতে ডাক বিভাগের পেমেন্টস ব্যাঙ্ক যথেষ্ট কার্যকরী হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।

বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের মতে, পেমেন্টস ব্যাঙ্কের মসৃণ পরিষেবায় প্রধান হাতিয়ার হবে প্রযুক্তি। কারণ তাঁদের মতে, এই সমস্ত পেমেন্টস ব্যাঙ্ক সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের মতো বড় শাখা খুলে যত না ব্যবসা করবে, তার থেকে অনেক বেশি আঁকড়ে ধরবে ইন্টারনেটকে। খুলে যাবে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার দিগন্ত। ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের এমডি কূলদীপ মাইতি বলেন, ‘‘পেমেন্টস ব্যাঙ্কের পরিষেবা দিতে উন্নত প্রযুক্তি জরুরি। এখন ডাকঘরেও কোর ব্যাঙ্কিং চালু হয়েছে। যা পেমেন্টস ব্যাঙ্ক পরিষেবা কার্যকর করতে বিশেষ সহায়ক হবে।’’ উল্লেখ্য, এখন ডাকঘরের ২২ হাজারেও বেশি শাখা চলে এসেছে কোর ব্যাঙ্কিংয়ের আওতায়।

এই নতুন পরিষেবার হাত ধরে ঢেলে সাজা সম্ভব হবে ডাক বিভাগকেও। ই-মেল, এসএমএস, হোয়াটস অ্যাপের দৌলতে সাবেকি চিঠির চল কমেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে হালে ই-কমার্সের পণ্য পৌঁছনোকে ব্যবসার নতুন হাতিয়ার করছে ডাক বিভাগ। তেমনই এ বার তাদের পরিষেবার চাকা নতুন রাস্তায় নতুন গতিতে গড়াতে পারে পেমেন্টস ব্যাঙ্কের হাত চাকায় ভর করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RBI Post-payment Bank Post-office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE