গয়নাশিল্পীদের জন্য প্রকল্প গড়তে এ বার ইতালির হাত ধরছে রাজ্য।
ইতালির নেপ্লস শহরে এ ধরনের ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক শিল্পের আদলে রাজ্য তৈরি করছে সোনার গয়নার কারিগরদের জন্য প্রকল্প। কারিগরি সহায়তা দেবে ইতালির নেপ্লস-এর শহরতলি টেরিতে গড়ে ওঠা এ ধরনের ক্লাস্টার। সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বছরের গোড়ায় রাজ্য সরকার আয়োজিত শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর মঞ্চে এই প্রকল্প ঘোষণা করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ৮ একর জমি চিহ্নিত করেছে। গোটা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকছে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল (জিজেইপিসি)। প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে ১০ কোটি টাকা এই প্রকল্পে ঢালছে জিজেইপিসি।
মূলত কারিগরদের জন্যই প্রকল্পটি তৈরি করা হচ্ছে বলে কাউন্সিলের দাবি। দেশের ৩০% সোনা ও হিরের গয়নার কারিগরের শিকড় এ রাজ্যে। সুরত, রাজকোট, মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন। জিজেইপিসি-র চেয়ারম্যান প্রেম কোঠারি জানান, কারিগরদের নিজেদের রাজ্যে কাজ করার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দিতে সরকার ও কাউন্সিল এই প্রকল্পে সামিল হয়েছে।
রাজ্যে মণিকাঞ্চন ও অঙ্কুরহাটির মতো গয়না শিল্পের পার্ক আগেও তৈরি হয়েছে। তবে শুধুমাত্র কারিগরদের জন্য পাঁচিল ঘেরা সুরক্ষিত পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা এই প্রথম। কাউন্সিলের প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা পঙ্কজ পারিখ জানান, ১০০০ ছোট ছোট কামারশালা এই প্রকল্পে জায়গা পাবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কারিগর এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
ইতালির নেপলস-এর শহরতলি টেরিতে এ ধরনের ক্লাস্টার রয়েছে। কাউন্সিলের দাবি, প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য টেরির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে কাউন্সিল। কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেবে টেরি। চলতি মাসের গোড়ায় কথাবার্তা পাকা করতে ইতালি গিয়েছিল রাজ্যের একটি প্রতিনিধিদল। গয়না শিল্পের প্রতিনিধি ছাড়াও সেই দলে ছিলেন সচিব ও অন্যান্য পদস্থ আমলা।
বাম আমলে গয়না শিল্পের পার্ক তৈরি করতে গিয়ে এক বার হাত পুড়িয়েছে রাজ্য। রাজ্যের প্রথম গয়না শিল্পের বিশেষ আর্থিক অঞ্চল সল্টলেকের মণিকাঞ্চনে পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার আজও হয়নি। পুরোপুরি চালু হওয়ার এক দশক পরেও মণিকাঞ্চনের সব মডিউল ভর্তি হয়নি। ২০০৪ সালে কমন ফেসিলিটি সেন্টার ও স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন ফ্যাক্টরি মিলিয়ে ২ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গা তৈরি হয়েছে। ৩১টি কারখানা তৈরির জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে এখনও কিছু জায়গা ফাঁকা পড়ে।
বিশেষ আর্থিক অঞ্চল হওয়ায় মণিকাঞ্চনের গয়না সংস্থাগুলিকে রফতানির বাজারের উপরেই নির্ভর করতে হয়। এখানে তৈরি গয়না দেশে বিক্রির উপরে রয়েছে বিধিনিষেধ। ফলে বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমায় মার খাচ্ছে মণিকাঞ্চনের সংস্থাগুলি। অন্য দিকে দেশে চাহিদা বাড়লেও তার সুযোগ নিতে পারে না বিশেষ আর্থিক অঞ্চল। সব মিলিয়ে দেশে গয়না শিল্পের অন্যান্য বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের মতোই মণিকাঞ্চনেও ব্যবসা তলানিতে।
ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে গয়না শিল্পের পার্কে অবশ্য সেই সমস্যা নেই। কারণ ডোমজুড়ের শিল্প প্রকল্পের নজর দেশের বাজার। এই এলাকা কারিগরদের আঁতুড়ঘর। ডোমজুড় সংলগ্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে কারিগররা থাকেন। বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গেই জড়িত তাঁরা। ফলে হাতের কাছে দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুযোগও বিনিয়োগকারীদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। সব মিলিয়ে অঙ্কুরহাটি প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে।
রাজ্যের কারিগরদের দক্ষতার কদর দেশ-বিদেশে রয়েছে। এ বার সেই দক্ষতার শংসাপত্র দিতে এগিয়ে এসেছে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ও এডুজবস অ্যাকাডেমি। প্রথম পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৮০০০ কারিগরকে এই শংসাপত্র দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy