Advertisement
E-Paper

নোট বাতিলের ধাক্কায় শক্তি হারাচ্ছে শেয়ার বাজার

যেমন অনুমান ছিল, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে আমেরিকা। আশঙ্কা ছিল, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ালে তার বড় প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতির উপর। শেয়ার বাজারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখে অবশ্য তা মনে হয়নি।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৬

যেমন অনুমান ছিল, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে আমেরিকা। আশঙ্কা ছিল, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ালে তার বড় প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতির উপর। শেয়ার বাজারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখে অবশ্য তা মনে হয়নি। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে শুধু এই দফায় সুদ বাড়িয়েছে তা-ই নয়, বলা হয়েছে সামনে আসছে আরও সুদবৃদ্ধি এবং তা করা হবে দ্রুততার সঙ্গে। এই খবরেও কিন্তু বাজার ভেঙে পড়েনি, নতুন করে ধস নামেনি শেয়ার সূচকে।

তবে ধস না-নামলেও বাজারের দুর্বলতা কিন্তু বেশ স্পষ্ট। ৮০/১০০ পয়েন্ট করে‌ সেনসেক্স নামছে প্রায় প্রতিদিনই। আসলে শুধু ফেড রেট বাড়ার কারণে নয়, নোট বাতিলের প্রভাব যে অনেক শিল্পের কাছে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দেবে, তা অনুমান করেই অনিশ্চয়তা বাড়ছে বাজারে। ক্রেতা কমেছে, কমছে লেনদেনের পরিমাণ। নোট বাতিলের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শিল্পের আরও ৬ মাস সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ২টি ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল বাজারকে তেমন শক্তি জোগাতে পারবে না।

নভেম্বরে‌ খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩.৬৩ শতাংশে। গত দু’ বছরে এটিই ন্যূনতম মূল্যবৃদ্ধির হার। হলে কী হবে, তাতে কিন্তু বাজারে কোনও উত্তেজনা ছড়ায়নি। মূল্যবৃদ্ধির হার এতটা কমে এসেছে যতটা না উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে, তার থেকে বেশি নোট বাতিলের প্রভাবে চাহিদা হ্রাসের জন্য। চাহিদা কমা শিল্প এবং অর্থনীতির কাছে আদৌ কাম্য নয়। এতে বহু সংস্থার বিক্রি কমবে, নেমে আসবে লাভের অঙ্ক। উৎপাদন ছাঁটাই হলে কর্মসংস্থান কমবে। কমবে শুল্ক বাবদ কেন্দ্রের আয়। অর্থাৎ আগামী ৬ মাস শক্ত চ্যালেঞ্জের সামনে থাকবে মোদী-জেটলি সরকার। বাজারও থাকবে অনিশ্চয়তায় ভরা। এই সময়ে প্রতিটি পতনে কেনা যেতে পারে বাছাই করা ব্লু-চিপ ও সম্ভাবনাময় মিড-ক্যাপ শেয়ার। বেশি ঝুঁকি যাঁদের পছন্দ নয়, তাঁরা ঝুঁকতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ড ও ডেট ফান্ডের প্রতি। ছোট মেয়াদে টাকা রাখা যেতে পারে লিকুইড ফান্ডে।

ফেড রেট বাড়ার কারণে ডলারের দাম বাড়ায় ও নোট-কাণ্ডে নগদের জোগান তলানিতে ঠেকায় শেয়ার বাজারের তুলনায় বেশি পতন হয়েছে সোনার দামে। যে-সোনা মাত্র কয়েক মাস আগে ৩০ হাজারের কোঠায় (প্রতি ১০ গ্রাম) ছিল, তার দাম গত শনিবার নেমে এসেছে ২৭,৮৪০ টাকায় (পাকা সোনা)। গয়নার হলমার্ক সোনা (২২ ক্যারাট) নেমেছে ২৬,৮১০ টাকায়। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন গোল্ড ইটিএফ এবং গোল্ড বন্ড-এর লগ্নিকারীরা। ফেড রেট আরও বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় সোনার দাম চড়বে, এই আশা করা যাচ্ছে না। বরং আরও নামার সম্ভাবনাই প্রবল।

ডলারের দাম বাড়ায় শক্তিশালী হচ্ছে রফতানি প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। তবে খরচ বাড়ছে আমদানি-নির্ভর বহু সংস্থার। বাড়তি খরচ সামাল দিতে বেশ কয়েকটি গাড়ি সংস্থা ১ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, তাদের বহু যন্ত্রাংশই আমদানি করতে হয়। ফলে গাড়ির চাহিদা হ্রাসের সম্ভাবনা প্রবল।

দাম বাড়ছে অশোধিত তেলেরও। এটিও অর্থনীতির পক্ষে প্রতিকূল। এর ফলে আমদানি বিল বাড়বে। কিছু দিনের মধ্যেই লিটারে আরও ৪-৬ টাকা বাড়তে পারে পেট্রোল-ডিজেলের দাম।

অর্থনীতিতে চূড়ান্ত অস্থির পরিস্থিতি থাকায় ১ এপ্রিল থেকে পণ্য-পরিষেবা কর চালু হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশই ক্ষীণ হচ্ছে। আগামী দু’মাসে বাজারের উপর যে-সব ঘটনা প্রভাব ফেলবে, সেগুলি হল:

১) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল। আশঙ্কা, এ বার তা তেমন ভাল হবে না।

২) ফেব্রুয়ারিতে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেট।

৩) আগামী ফেব্রুয়ারিতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনা এবং সুদ কমানোর সম্ভাবনা।

মানুষের আশা, এ বারের বাজেটে আয়করের হার কমানো বা করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হবে। এমন ভাবার কারণ হল: ক) কালো টাকা ঘোষণা বাবদ মোটা কর ও জরিমানা খাতে কেন্দ্রের আয়। খ) নোট বাতিলের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ক্ষতে মলম লাগানো।

কর আদায় বাড়লে কর বাবদ সুবিধা দেওয়া হতে পারে, এমন ইঙ্গিত কেন্দ্রও দিয়েছে। এই দাবি আসছে শিল্প-বাণিজ্য মহল থেকেও। নানা আশঙ্কার মধ্যে এখন মানুষের মনে এটিই একটি আশা।

Stock Market Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy