Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ বার টিসিএস থেকেও মিস্ত্রিকে সরাল টাটারা

টাটা সন্সের পরে এ বার নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-এর মাথা থেকেও সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে দিল টাটারা। টিসিএস জানিয়েছে, ৯ নভেম্বর টাটা গোষ্ঠীর মূল সংস্থা টাটা সন্সের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিল তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

টাটা সন্সের পরে এ বার নিজেদের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-এর মাথা থেকেও সাইরাস মিস্ত্রিকে সরিয়ে দিল টাটারা।

টিসিএস জানিয়েছে, ৯ নভেম্বর টাটা গোষ্ঠীর মূল সংস্থা টাটা সন্সের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিল তারা। মিস্ত্রিকে সরিয়ে ইশাত হুসেনকে অবিলম্বে চেয়ারম্যানের পদে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল সেখানেই। এরই সঙ্গে বৃহস্পতিবার ন’পাতার এক বিবৃতিতে মিস্ত্রিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে টাটারা। তাদের অভিযোগ, ইন্ডিয়ান হোটেলস-সহ গোষ্ঠীর প্রধান সংস্থাগুলির রাশ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি। যে-আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে টাটা গোষ্ঠীর দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, এ কাজ তা ভঙ্গ করারই সামিল। পাল্টা তোপ দেগেছেন মিস্ত্রিও। তাঁর তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনের তোয়াক্কা না-করে আক্রমণ শানাচ্ছে ক্রুদ্ধ রতন টাটার শিবির।

টিসিএসের শীর্ষ পদ থেকে বিদায় সত্ত্বেও অবশ্য টাটাদের আর এক সংস্থা টাটা কেমিক্যালসের স্বাধীন ডিরেক্টরদের পাশে পেয়েছেন মিস্ত্রি। এ দিন সর্বসম্মত ভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে মিস্ত্রিকে সমর্থন করেছেন তাঁরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন, ওয়াদিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান নুসলি ওয়াদিয়া, ডিসিবি ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নার্সি মুঞ্জি, নাবার্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওয়াই এস পি থোরাট প্রমুখ। উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর ইন্ডিয়ান হোটেলসের চেয়ারম্যান হিসেবে মিস্ত্রির উপর পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেছিলেন ওই সংস্থার স্বাধীন ডিরেক্টররাও।

অভিযোগনামা

• টাটাদের সব ক’টি প্রধান সংস্থার রাশই হাতে নিতে চেয়েছিলেন মিস্ত্রি

• চার বছর আগে তাঁর উপর রাখা আস্থার মর্যাদা দেননি তিনি

• ভেঙেছেন গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণের চিরাচরিত কাঠামো, যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকত টাটা সন্স

• তাঁর আমলে গোষ্ঠীর ৪০টি সংস্থার খরচ বেড়েছে

• ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ৬৯,৮৭৭ কোটি টাকা

শোনা যাচ্ছে, মিস্ত্রি যে-ভাবে খরচ কমিয়ে ও প্রয়োজনে কিছু ব্যবসা বেচে টাটাদের সংস্থাগুলিকে আরও লাভজনক করার চেষ্টা করছিলেন, তা সমর্থন পাচ্ছিল টাটা গোষ্ঠীতে অংশীদারি থাকা বিমা-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার। তবে এ দিন এ নিয়ে ই-মেল পাঠানো হলেও, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলির তরফে উত্তর মেলেনি।

টাটা সন্সের শীর্ষ পদ থেকে সরার পরেও গোষ্ঠীর বেশ কিছু সংস্থার (টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, ইন্ডিয়ান হোটেলস, টাটা কেমিক্যালস ইত্যাদি) মাথায় রয়েছেন মিস্ত্রিই। এর মধ্যে টিসিএসের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হল তাঁকে। এ বার বাকি সংস্থাগুলির শীর্ষ পদ থেকেও তাঁর বিদায়ের রাস্তা টাটারা প্রশস্ত করতে চাইছে বলেই শিল্পমহলের ধারণা। যে-ইন্ডিয়ান হোটেলসে স্বাধীন ডিরেক্টরদের মিস্ত্রি সম্প্রতি পাশে পেয়েছিলেন, সেখানেও তাঁকে সরাতে ডাকা হয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের বিশেষ সাধারণ সভা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন টাটা মোটরসের ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন রতন টাটা।

টাটাদের মুনাফার একটা বড় অংশ আসে টিসিএস থেকে। সংস্থায় টাটা সন্সের অংশীদারি ৭৩.২৬%। পর্ষদে রয়েছেন, ৬ স্বাধীন ডিরেক্টর। শোনা গিয়েছিল, মিস্ত্রি বনাম টাটাদের সংঘাতের একটা কারণও নাকি টিসিএস। গোষ্ঠীর ঋণের বোঝা হালকা করতে টাটারা এই সংস্থার ৫% শেয়ার বিক্রির কথা ভাবলেও মিস্ত্রি রাজি হননি। এ দিন টিসিএসের মাথাতেই আপাতত বসিয়ে দেওয়া হল ১৯৮৩ সাল থেকে টাটাদের সঙ্গে থাকা ৬৯ বছরের ইশাত হুসেনকে। যিনি টাটাদের দুই সংস্থা ভোল্টাস ও টাটা স্কাই-এর চেয়ারম্যান।

তবে টিসিএস থেকে যে-ভাবে মিস্ত্রিকে সরানো হল, বাকিগুলিতে তা করা সম্ভব কি না সে বিষয়ে খুব নিশ্চিত নয় শিল্পমহল। টিসিএসের মতো টাটা সন্সের সিংহভাগ অংশীদারি অন্য সংস্থাগুলিতে নেই। যেমন, টাটা কেমিক্যালসে রয়েছে ১৯.৩৫%, ইন্ডিয়ান হোটেলসে ২৮.০১%। তার উপর অংশীদারি থাকা আর্থিক সংস্থাগুলিও যদি মিস্ত্রির পাশে থাকে, তবে তাঁকে সরানো কঠিন হবে বলে শিল্পমহলের ধারণা। সব মিলিয়ে এ নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই দীর্ঘ ও তেতো হতে পারে।

বিবৃতিতে টাটাদের অভিযোগ, স্বাধীন ডিরেক্টরদের ‘ব্যবহার করে’ ইন্ডিয়ান হোটেলসের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে চাইছেন মিস্ত্রি। বরাবর টাটাদের বিভিন্ন সংস্থা পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ থাকে টাটা সন্সের হাতে। সেই চিরাচরিত কাঠামোও মিস্ত্রি যে-ভাবে ভেঙেছেন, তা মানা যায় না বলে টাটাদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ratan tata Cyrus Mistry TCS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE