জামাকাপড় তৈরিতে রাজ্যের কারিগরদের খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। অথচ রফতানির বাজারে হালে পানি পায় না পশ্চিমবঙ্গের পোশাক শিল্প। যতটা সম্ভাবনা, তার অনেকখানি নীচে বিদেশে বিক্রির পরিমাণ। এ বার সেই ছবিটাই বদলের রাস্তা খুলছে দেশের তিন বড় পোশাক বিক্রেতা সংস্থার হাত ধরে। পরিভাষায় যাদের বলে ‘বায়িং হাউস’। অন্যতম কাজ, ব্যবসায়ীদের থেকে পণ্য কিনে সারা বিশ্বে বিক্রি করা। এই প্রথম এ রাজ্যে ঘাঁটি গাড়ছে তারা। দফতর খুলছে রাজ্যের বস্ত্র শিল্প উদ্যান, পরিধানে।
দেশ জুড়ে পোশাক বেচে, এমন বড় ব্র্যান্ডের বহু খুচরো বিপণন সংস্থার দফতর আছে এ রাজ্যে। কিন্তু তেমন ভাবে ছিল না কোনও বায়িং হাউস। ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং বস্ত্র শিল্প দফতর সূত্রে খবর, পরিধানে রাজ্য ১২ হাজার বর্গফুটের যে ভবন গড়েছে, সেখানেই জায়গা নিচ্ছে ট্রাইবার্গ, ইমপাল্স, এসএলকিউএস ইন্টারন্যাশনাল। আরও কিছু সংস্থাকে আনার কথাবার্তা চলছে। প্রথম ধাপে অন্তত ১০টি বড় সংস্থাকে পরিধানে আনার পরিকল্পনা আছে বলে জানান ওই কর্তা।
রাজ্যের বস্ত্র সংস্থাগুলি রফতানি আগেও করত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তার প্রক্রিয়া ছিল ছড়ানো-ছিটানো। যে কারণে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ফুলেফেঁপে ওঠেনি সেই বাজার। সূত্রের দাবি, এ বার তা কিছুটা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কারণ, তৈরি পোশাক কিনে বিদেশে বেচা যাদের অন্যতম প্রধান কাজ, তারাই হাতের নাগালে আসছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বড় বাজার রয়েছে এদের। ফলে সেখানে পৌঁছতে রাজ্যের বস্ত্র সংস্থাগুলিও নিজেদের পণ্য সরাসরি তাদের কাছে তুলে ধরতে পারবে। সুযোগ মিলবে তাদের পছন্দের নিরিখেও পোশাক তৈরির।
চালচিত্র
পোশাক তৈরিতে রাজ্যের দক্ষতার প্রসিদ্ধি বিশ্ব জুড়ে
১০০ বছর আগে প্রথম হোসিয়ারি কারখানা খিদিরপুরে
তৈরি পোশাকের কারখানা ২১ হাজারেরও বেশি। শুধু হোসিয়ারিই ১৮ হাজার
বছরে তৈরি হয় ৬০ কোটির বেশি জামাকাপড়। প্রায় ২০ কোটি কেজি শুধু হোসিয়ারি
পোশাক তৈরির কাজে সরাসরি যুক্ত ২ লক্ষ মানুষ। হোসিয়ারিতে দেড় লক্ষ
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বছরে এখন প্রায় ১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়। লক্ষ্য, আগামী তিন বছরে তা বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য বড় রফতানিকারী সংস্থাগুলিকে রাজ্যে টেনে আনা প্রয়োজন। বস্ত্র রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ এই কাজে রাজ্যকে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে।
ক্ষুদ্র ও বস্ত্র শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিন্হা জানান, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ট্রাইবার্গের মতো সংস্থাগুলির শীর্ষ কর্তারা এসেছিলেন। রাজ্যের সেরা ৪০টি সংস্থার তৈরি পোশাক নিয়ে সে সময় একটি প্রদর্শনীও হয়। তাঁর দাবি, তাতে মেটিয়াবুরুজের কারিগরদের হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ হন ওই কর্তারা। তবে একই সঙ্গে সিন্হা বলেন, বিদেশের বাজার আরও ভাল করে ধরার জন্য তৈরি পণ্যটি নিখুঁত হওয়া দরকার। তার মোড়কও হতে হবে নজরকাড়া। যে কারণে এই বিষয়গুলি উন্নত করার লক্ষ্যে বস্ত্র রফতানি উন্নয়ন পর্ষদ শীঘ্রই আগ্রহী সংস্থাগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy