Advertisement
E-Paper

জমির গেরোয় শঙ্কা থিম সিটি নিয়েও

সিঙ্গুর-রায় সংশয়ের মেঘ জমা করেছে রাজ্যের ছয় ‘থিম সিটি’ প্রকল্পের আকাশেও।ওই সমস্ত প্রকল্পে সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, এর পর সেখানেও অধিগৃহীত জমি ফেরত চাইতে পারেন পুরনো মালিকরা।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪

সিঙ্গুর-রায় সংশয়ের মেঘ জমা করেছে রাজ্যের ছয় ‘থিম সিটি’ প্রকল্পের আকাশেও।

ওই সমস্ত প্রকল্পে সম্ভাব্য লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, এর পর সেখানেও অধিগৃহীত জমি ফেরত চাইতে পারেন পুরনো মালিকরা। সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরে জমি ফেরত দিতে বলার পরে হালে যে-ছবি দেখা গিয়েছে বর্ধমানের মিষ্টি হাব কিংবা শিলিগুড়ির কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পে। এমনকী বোলপুরে থিম শহর প্রকল্পের জমিও ফেরত চাইতে শুরু করেছেন কেউ কেউ।

সিঙ্গুর, বর্ধমান ও শিলিগুড়ি তিন জায়গাতেই অধিগৃহীত জমি ফেরত পাচ্ছেন মালিকরা। নির্মাণ শিল্পমহলের মতে, এ বার থিম শহর প্রকল্পেও তাঁরা পুরোদস্তুর জমি ফেরত চাইতে শুরু করলে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। একে প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত অনেক জায়গাতেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব। তার উপর এই সব প্রকল্প শেষমেশ কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে এখনও নিঃসংশয় হতে পারেনি নির্মাণ সংস্থাগুলি। যে-কারণে প্রাথমিক ভাবে উৎসাহ দেখালেও এখনও আগ্রহপত্র জমা দেয়নি তারা। এই সমস্ত কিছুর সঙ্গে এ বার অধিগৃহীত জমি ফেরানোর সমস্যা যুক্ত হলে, আমূল বদলে ফেলতে হবে পরিকল্পনা। বাড়বে খরচ এবং সময় দু’ই। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প বিশ বাঁও জলে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেই কারণে এই বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান দ্রুত জানতে চান সম্ভাব্য লগ্নিকারীরা।

থিম সিটি প্রকল্পের জন্য অধিকাংশ জমি অধিগৃহীত। যেমন, বারুইপুরে ১০০% জমিই তা-ই। সে ক্ষেত্রে মালিক তা ফেরত চাইতে পারেন। হাতেগরম উদাহরণ কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্প। ২০০৪ সালে উপনগরী তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। অনিচ্ছুকরা জমি ফেরত চেয়ে আন্দোলন করেন। আইনি জটিলতায় তা ফেরানো যায়নি। কিন্তু এখন সিঙ্গুর মামলার রায়কে সামনে রেখে সাড়ে ১১ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। বর্ধমানেও মিষ্টি হাব তৈরির জন্য চিহ্নিত জমি ফেরাচ্ছে রাজ্য। খোদ মুখ্যমন্ত্রীই সে কথা জানিয়েছেন। ফের নতুন করে হাবের জন্য জমি চিহ্নিত করেছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে ‘থিম সিটি’ প্রকল্পের জমি নিয়ে কতটা নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নির্মাণ শিল্পমহলে।

বিশেষত বোলপুরে যেখানে ইতিমধ্যেই মাথা চাড়া দিতে শুরু করেছে জমি-সমস্যা, সেখানে ‘গীতবিতান’ থিম সিটির জন্য চিহ্নিত এলাকা শিবপুরে জমি ফেরত চেয়েছেন মালিকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বোলপুরে গিয়েছেন হিডকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন। তিনি জানান, ওই থিম সিটির জন্য চিহ্নিত জমি থেকে ছোট-ছোট টুকরো বাড়ি তৈরির জন্য কিনতে পারবেন আগ্রহীরা। এ ধরনের সমস্যার আশঙ্কা থিম সিটি প্রকল্পের শরিক হতে এখন আরও বেশি দ্বিধায় ফেলছে নির্মাণ শিল্পকে।

এমনিতে থিম শহর প্রকল্পে বিনিয়োগ টানতে চেষ্টার কসুর করেনি রাজ্য। ‘ফ্লোর-এরিয়া রেশিও’-তে (জমির সঙ্গে তার উপর নির্মিত বর্গ ফুটের অনুপাত) ছাড় দিয়েছে, যাতে কম জমিতে বেশি বর্গ ফুট তৈরি করে লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে নিতে পারে নির্মাণ সংস্থাগুলি। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবের সমস্যা প্রথম থেকেই রয়েছে। তার উপর চাহিদা নিয়ে সংশয়ের কাঁটা খচখচ করছে এখনও। ঝুঁকি মাপলে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না মুনাফা নিয়ে। আর সেই কারণেই প্রস্তাবিত ‘থিম সিটি’ প্রকল্পে লগ্নির শর্ত নমনীয় রাখার আর্জি নিয়ে রাজ্যের কাছে আগেই দরবার করছে নির্মাণ শিল্প। চাহিদা আঁচ করে জমি ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য সওয়াল করছে তারা।

নির্মাণ শিল্প চায়, চাহিদা মেপেই জমি ব্যবহারের নিয়ম-নীতি তৈরি করুক রাজ্য। প্রকল্পে কত একরে আবাসন হবে আর কতখানি জমিতে ‘থিম’ অনুযায়ী তৈরি হবে স্টেডিয়াম-কলেজ-হাসপাতাল, তা ঠিক হোক চাহিদার ভিত্তিতে। যাতে থিমের পরিকাঠামো বেশি গড়ে পরে চাহিদার অভাবে ভুগতে না হয় তাদের। একই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পের আর্জি, জমির লিজের টাকা মেটাতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় দিক রাজ্য। এই সমস্ত বিষয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছে নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই।

এ সবের পরে এ বার জমি নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে আলোচনার টেবিলে বসতে চায় নির্মাণ শিল্প।

Theme city Singur Farmers land acquisition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy