বার্তা: ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। রয়টার্স
‘আয়েগা আয়েগা... আনেওয়ালা আয়েগা...’
হিন্দি ছবির এই বিখ্যাত গানের কলিকেই যেন মনে করাল ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের মঞ্চ। যে শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক সময়ে শিল্পবান্ধব মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট হাসিল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাড়ে চার বছর পার করে সেই মঞ্চেই তাঁকে দেখা গেল কার্যত শুধু আগামীর স্বপ্ন ফেরি করতে। বিদেশি লগ্নি, সহজে ব্যবসার নিরিখে ক্রমতালিকায় উঠে আসার মতো খুচরো কিছু সাফল্যের পরিসংখ্যান পেশ করলেন ঠিকই। কিন্তু বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়েই রইল লোকসভা ভোটের মুখে ফের এক দফা অচ্ছে দিনের স্বপ্ন ফেরি। যা দেখে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, সবই তো আগামীর প্রতিশ্রুতি। নিজের জমানায় এত দিন তবে কী হল?
প্রধানমন্ত্রীর মতো স্রেফ আগামীতে মজে রইল শিল্পমহলও। রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী থেকে শুরু করে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি— গুজরাতে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিল শিল্প। শুধু সমঝোতাপত্র সই হল ৫৬ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু প্রায় সবই দীর্ঘ মেয়াদে। পাঁচ বছর। এমনকি দশ বছরেরও। ফলে সেখানেও প্রশ্ন, সত্যিই এই লগ্নি প্রস্তাবের সিকি ভাগও দিনের আলো দেখবে তো? না কি তা থেকে যাবে স্রেফ প্রচার আর প্রতিশ্রুতি হয়েই? বরাবর যে অভিযোগ তাড়া করে এসেছে ভাইব্র্যান্ট গুজরাত-সহ দেশের অধিকাংশ শিল্প সম্মেলনকেই।
এক দিকে, শিল্পমহল ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো লগ্নির প্রস্তাব পেশ করল। অন্য দিকে, মোদী বললেন তাঁর জমানায় সহজে ব্যবসা করার নিরিখে ৭৫ ধাপ পেরিয়ে ৭৭ নম্বরে উঠে এসেছে ভারত। দাবি করলেন, আগামী বছরে প্রথম পঞ্চাশে উঠে আসাকে পাখির চোখ করছেন তাঁরা। এ দেশে ব্যবসা করার পথ সহজ করতে তাঁর সরকার কী কী করেছে, তার খতিয়ান দিতে গিয়ে টেনে আনলেন জিএসটি চালু আর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, নোট বাতিলের পরে মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য তো তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর দিকেই আঙুল তুলেছে ছোট-মাঝারি শিল্প!
প্রশ্ন উঠছে, ব্যবসা করার রাস্তা এত সহজ হয়ে থাকলে, দেশে এখন লগ্নির খরা কেন? কেনই বা তলানিতে শিল্প বৃদ্ধি? যে শিল্পপতিরা একটি মাত্র রাজ্যে এমন বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, এখন সারা দেশে কত টাকা ঢালছে তাঁদের সংস্থা? তবে কি লম্বা দৌড়ে ওই লগ্নি প্রতিশ্রুতি নিছক কথার কথা?
মোদী সরকারের অর্থনীতি সামলানোকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও। তাঁর কথায়, আগামী ৬০ দিনে সরকার অর্থনীতির হাল বদলাতে পারবে না। যাবতীয় আশা ও ভরসা তাই পরের সরকারের উপরেই রাখা উচিত। তাঁর দাবি, ‘‘বিগত পাঁচ বছর দেখে শুধু স্থির হবে যে, কী কী ভুল করা যাবে না। যেমন, সর্বনাশা নোট বাতিল আর বিপর্যয় ডেকে আনা জিএসটি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy