Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

আর্থিক সুবিধার কার্ড নিতেও অনীহা রাজ্যের ছোট চা চাষিদের

পরিচয়পত্র (কার্ড) হাতে এলে কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা আদায় সহজ হবে ছোট চা চাষিদের। অথচ এ রাজ্যে সেই পরিচয়পত্র জোগাড় করতেই কিছুটা অনিচ্ছুক তাঁরা! অনীহা কার্ডের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে। চা পর্ষদের (টি বোর্ড) দাবি, অসম এবং তামিলনাড়ুতে দ্রুত এগোচ্ছে ওই পরিচয়পত্র বণ্টনের কাজ। তা পেতে সেখানকার চা চাষিদের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো। অথচ এ রাজ্যে যেন সেই পরিচয়পত্রই কিছুটা এড়িয়ে যেতে চাইছেন বহু ছোট চা চাষি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, অনেকে সরকারি নজরের আড়ালে রাখতে চাইছেন চা চাষের বিষয়টিকে।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

পরিচয়পত্র (কার্ড) হাতে এলে কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা আদায় সহজ হবে ছোট চা চাষিদের। অথচ এ রাজ্যে সেই পরিচয়পত্র জোগাড় করতেই কিছুটা অনিচ্ছুক তাঁরা! অনীহা কার্ডের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে।

চা পর্ষদের (টি বোর্ড) দাবি, অসম এবং তামিলনাড়ুতে দ্রুত এগোচ্ছে ওই পরিচয়পত্র বণ্টনের কাজ। তা পেতে সেখানকার চা চাষিদের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো। অথচ এ রাজ্যে যেন সেই পরিচয়পত্রই কিছুটা এড়িয়ে যেতে চাইছেন বহু ছোট চা চাষি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, অনেকে সরকারি নজরের আড়ালে রাখতে চাইছেন চা চাষের বিষয়টিকে।

বোর্ড কর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, পরিচয়পত্রের জন্য অসমে ৫৫ হাজার চা চাষির নাম নথিভুক্তি শেষ। এর মধ্যে পরিচয়পত্র পেয়েছেন ৪০ হাজার জন। তামিলনাড়ুতেও নথিভুক্তি শেষ ৩৮ হাজার চাষির। কার্ড পেয়েছেন ৮ হাজার জন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার আবেদনপত্র বিলি করার পর তা পূরণ করে ফেরত দিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার জন। এমনকী আবেদনপত্র বিলির জন্য অনেক জায়গায় ঢুকতেও বাধা পাচ্ছেন বোর্ডের আধিকারিকেরা। উল্লেখ্য, পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য প্রথমে চাষিদের আবেদনপত্র দেওয়া হয়। তাঁরা তা পূরণ করে বোর্ডের কাছে ফেরত দিলে, নথিভুক্ত হয় নাম। তার পর সেই আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেয় বোর্ড।

পর্ষদের দাবি, পরিচয়পত্র পাওয়া চাষিদের নিয়ে গড়া স্বনির্ভর গোষ্ঠী কেন্দ্রের কাছে বিভিন্ন খাতে (কাঁচামাল রাখার পরিকাঠামো, চা গাছ ছাঁটার যন্ত্র, চা পাতা নিয়ে যাওয়ার গাড়ি কেনা, সেচ ইত্যাদি) আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বেশ কিছু সুবিধা দ্বাদশ পরিকল্পনায় আরও বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বোর্ড। রয়েছে নতুন কিছু সুবিধার প্রস্তাবও।

কিন্তু তা হলে পরিচয়পত্র নিতে চাষিদের অনীহা কেন?

এ বিষয়ে সরকারি সূত্র এবং ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠনের বক্তব্য, এর কারণ মূলত দু’টি। এক, অনেক ছোট চা চাষিই চান না যে তাঁদের চাষের বিষয়টি সরকারি ভাবে প্রশাসনের নজরে আসুক। আর দুই, পরিচয়পত্র নিয়ে এ রাজ্যের চাষিদের সচেতনতাও কম।

সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এ রাজ্যের অনেক ছোট চা চাষিরই জমির কাগজপত্র ঠিক ভাবে নেই। কারণ, এক সময় অনেকেই অন্য শস্যের বদলে চা চাষ শুরু করেছিলেন বেশি লাভের আশায়। তাই এখনও এঁদের অনেকের জমির প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই। অনেকের আবার নেই নতুন জমিতে চা চাষের সরকারি ছাড়পত্রও (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি)। ফলে এখন কার্ড করাতে গেলে আগাম সাঁকো নাড়িয়ে সমস্যা ডেকে আনা হতে পারে বলে আশঙ্কিত তাঁরা।

তার উপর অনেক চা চাষির আবার আশঙ্কা, পরিচয়পত্র নিলে পরে আয়কর দিতে হবে। পড়তে হবে বিভিন্ন সরকারি নিয়মকানুনের আওতায়। তাঁদের মতে, জমির নথি সংক্রান্ত এই সমস্যা তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতে তুলনায় অনেক কম। আর অসমে তা থাকলেও চা চাষিদের বোঝানো গিয়েছে যে, ওই সমস্ত আশঙ্কা অমূলক।

বোর্ড কর্তারা অবশ্য স্পষ্ট জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধা বণ্টনের জন্যই এই পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে জমি বা কর সংক্রান্ত কোনও বিষয়ের যোগ নেই। কেউ যে চা চাষ করছেন, তা চিহ্নিত করতেই এই পরিচয়পত্র। অসমের চাষিদের বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে দেওয়া হচ্ছে স্মার্ট কার্ড।

পর্ষদের মতে, বড় চা বাগানগুলিকে বরাবরই বিভিন্ন খাতে বোর্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি-সহ নানা সুবিধা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু আগে ছোট চা চাষিদের জন্য তেমন কোনও প্রকল্প ছিল না। কারণ, ক্ষুদ্র চা চাষ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল অসংগঠিত ক্ষেত্রে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা উত্তরবঙ্গ, অসম ও দক্ষিণ ভারতে ক্রমশ ছড়াতে থাকে। এখন দেশের মোট চায়ের ৩৩ শতাংশেরও বেশি চাষ হয় সেখানে। অথচ এমন বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও মূলত অংসগঠিত থাকার জন্য তার উপর সরকারি নজরদারি কার্যত নেই। ফলে ওই চা চাষের পদ্ধতি ও তার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকে। এই পরিস্থিতিতেই ক্ষুদ্র চা চাষীদের জন্য গত বছর পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় টি বোর্ড। যাতে নজরদারি সম্ভব হয়। আবার দেওয়া যায় আর্থিক সুবিধাও।

কিন্তু পরিচয়পত্র নিয়ে অনীহার কথা মেনে নিয়েও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিস্টা) প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর দাবি, জমির নথিপত্রের সমস্যার জন্য দায়ী রাজ্য। নিজের জমি ছাড়াও সরকারি জমিতে চা চাষের জন্য আগে অনুমোদন (এনওসি) মিলত। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে তা বন্ধ। লাভ হয়নি নতুন সরকারকে দফায়-দফায় আবেদন জানিয়েও। আর সচেতনতার অভাবের জন্য বোর্ডকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। সিস্টার দাবি, জলপাইগুড়িতে তারা নিজেরাই সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। ফলে সেখানকার হাজার হাজার চাষি আবেদন জানাচ্ছেন। কালীপুজোর পর অন্য জেলাতেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE