Advertisement
২১ মে ২০২৪

কলকাতাকে ছুঁয়ে ভারতের সঙ্গে সড়কপথে বাণিজ্য চায় তাইল্যান্ড

শুধু শুরু আর শেষের বিন্দু নয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের সময় পণ্য পরিবহণের পুরো রাস্তারই ‘সদ্ব্যবহার’ চায় তাইল্যান্ড। আর সেই কারণেই এ বার সড়কপথে এ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে প্রবল ভাবে আগ্রহী তারা। সেই সূত্রে তারা উদ্যোগী মায়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে কলকাতার সঙ্গে পোক্ত বাণিজ্যিক যোগসূত্র গড়ে তুলতেও। ভারত ও তাইল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত হয় আকাশ এবং জলপথে। কিন্তু বিমান বা জাহাজে পণ্য পাঠালে, তা এক বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে সরাসরি গন্তব্য বিন্দুতে পৌঁছয়। মাঝে আর কোথাও (জাহাজের ক্ষেত্রে কিছু বন্দর বাদ দিলে) নতুন বাজারের গন্ধ পাওয়া তার পক্ষে শক্ত। সেই সুযোগ বরং অনেক বেশি সড়কপথে।

পথ-পরামর্শ। টি থঙ্গরুয়াঙ্গ (বাঁ দিকে) ও পি রায়।—নিজস্ব চিত্র।

পথ-পরামর্শ। টি থঙ্গরুয়াঙ্গ (বাঁ দিকে) ও পি রায়।—নিজস্ব চিত্র।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০১:৪৩
Share: Save:

শুধু শুরু আর শেষের বিন্দু নয়। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের সময় পণ্য পরিবহণের পুরো রাস্তারই ‘সদ্ব্যবহার’ চায় তাইল্যান্ড। আর সেই কারণেই এ বার সড়কপথে এ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে প্রবল ভাবে আগ্রহী তারা। সেই সূত্রে তারা উদ্যোগী মায়ানমার হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে কলকাতার সঙ্গে পোক্ত বাণিজ্যিক যোগসূত্র গড়ে তুলতেও।

ভারত ও তাইল্যান্ডের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মূলত হয় আকাশ এবং জলপথে। কিন্তু বিমান বা জাহাজে পণ্য পাঠালে, তা এক বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে সরাসরি গন্তব্য বিন্দুতে পৌঁছয়। মাঝে আর কোথাও (জাহাজের ক্ষেত্রে কিছু বন্দর বাদ দিলে) নতুন বাজারের গন্ধ পাওয়া তার পক্ষে শক্ত। সেই সুযোগ বরং অনেক বেশি সড়কপথে। কারণ, সে ক্ষেত্রে রাস্তার দু’ধারে ছড়িয়ে থাকা শহর কিংবা জনবসতিতেও ওই সব পণ্যের চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা থাকে। যে জন্য সড়কপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারের চেষ্টার নজির ইতিহাসে ভুরিভুরি। আর এ বার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যেও সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কোমর বেঁধে নামছে তাইল্যান্ড। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কতটা লাভজনক হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান শিল্পমহলের একাংশ।

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে মায়ানমার দিয়ে সড়কপথে বাণিজ্যের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কলকাতায় পা রেখেছিল তাইল্যান্ডের এক প্রতিনিধিদল। শহরে এসে বেঙ্গল চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকও করে তারা। ২০ জনের ওই দলে ছিলেন পণ্য পরিবহণ (লজিস্টিক্স) ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ১৫টি তাই-সংস্থার প্রতিনিধি। ছিলেন ওই দেশের বাণিজ্য দফতরের কর্তারা। দলটির নেতৃত্বে থাকা ভারতে তাইল্যান্ডের মিনিস্টার কাউন্সিলর (কমার্শিয়াল) টি থঙ্গরুয়াঙ্গ জানান, “আসিয়ান ও বিমস্টেক অঞ্চলে বাণিজ্য বিস্তারে কলকাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখান থেকে গৌহাটি-ডিমাপুর-কোহিমা-মোরে হয়ে মায়ানমার দিয়ে ব্যাঙ্কক পর্যন্ত সড়কপথে বাণিজ্য হতে পারে।” তাঁর দাবি, প্রস্তাবিত রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় বাজারের আঁচ পেতে ওই পথেই দেশে ফিরবেন তাঁরা।

থঙ্গরুয়াঙ্গ জানান, এখন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অঙ্ক ৯৫০ কোটি ডলার। কিন্তু মোরে সীমান্তে তার পরিমাণ নামমাত্র। অথচ ওই পথে সহজেই তাইল্যান্ড পৌঁছনো সম্ভব। তাঁর মতে, ওষুধ-সহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে এই পথ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট পি রায়ের আবার দাবি, কেন্দ্রের সাম্প্রতিক পূবে-তাকাও (লুক-ইস্ট) নাীতির মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই বাণিজ্যের সুফল কুড়োতে পারে কলকাতা।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে মায়ানমারের দরজা খোলার পর সড়কপথে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির সম্মিলিত বাজার ধরাকে পাখির চোখ করছে সারা বিশ্ব। ভারত পূবে-তাকাও নীতি তৈরি করেছে। ভারত-বাংলাদেশ-মায়ানমার-চিনের মধ্যে বাণিজ্য প্রসারে তৈরি হয়েছে বিসিআইএম গোষ্ঠী। এই চার দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৮০ কোটি। এই বিপুল বাজারের কথা মাথায় রেখে সড়কপথে বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে সম্প্রতি কলকাতা থেকে চিনের কুনমিং পর্যন্ত (যশোর-ইম্ফল-মায়ানমার হয়ে) ‘কার-র্যালি’র আয়োজন করেছিল সিআইআই। আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গেও একই কর্মসূচি নিয়েছিল তারা। সেখানে আবার যাত্রাপথে যুক্ত হয় তাইল্যান্ড। বণিকসভাটির পূর্বাঞ্চলীয় ডিরেক্টর সৌগত মুখোপাধ্যায়ের মতে, সীমান্ত বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারতীয় শিল্পের সামনে ওই সব দেশে লগ্নির সম্ভাবনাও খুলছে।

আসিয়ান বা বিসিআইএম-এর মতোই বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে তৈরি হয়েছে আর্থিক সহযোগিতা গোষ্ঠী বিমস্টেক। তারও অন্যতম সদস্য ভারত এবং তাইল্যান্ড। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২% বিমস্টেক-এর আওতাধীন হওয়ায় এই বাজারও বেশ আকর্ষণীয়। শিল্পমহলের একাংশের আবার বক্তব্য, নিজেদের পশ্চিমাঞ্চলে সড়কপথে বাণিজ্য বিস্তারের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে বন্দর-সহ নানা পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দিচ্ছে চিন। তার জেরে বাণিজ্য বাড়াতে বিকল্প রাস্তা খোঁজার উপর জোর দিচ্ছে তাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

thailand debapriya sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE