বরাবর বুদ্ধি বেচে খাওয়া বাঙালির মেধায় আস্থা রেখেই কলকাতাকে পাখির চোখ করছে একের পর এক উপদেষ্টা সংস্থা। সম্প্রতি কলকাতায় নিজেদের টেকনোলজি হাব সম্প্রসারণের পরিকল্পনা জানিয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স (পি ডব্লিউ সি)। তার পর এ বার তথ্য ভাণ্ডার (আইটি ডেটা সেন্টার) গড়ার জন্য এই শহরকে বেছে নিল আর এক উপদেষ্টা বহুজাতিক কেপিএমজি। একই সঙ্গে, কেপিএমজি গ্লোবাল সার্ভিসেস-এর তৃতীয় কেন্দ্র তৈরির জন্যও কলকাতার কথা বিবেচনা করছে তারা।
সংস্থার দাবি, ভারতে তাদের তথ্য সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্মের মেরুদন্ড হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এই আইটি ডেটা সেন্টার। আন্তর্জাতিক স্তরের সব তথ্য কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত থাকবে এটি। কেপিএমজি ইন্ডিয়ার সিইও রিচার্ড রেখি জানান, শুধু ভারতে নয়, বিশ্বমানের এই কেন্দ্র থেকে আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়াতেও পরিষেবা পৌঁছে যাবে।
বর্তমানে কেপিএমজি গ্লোবাল সার্ভিসেসের দু’টি কেন্দ্র রয়েছে (বেঙ্গালুরু এবং গুড়গাঁও)। মোট কর্মী ৪,০০০। এ বার এর তৃতীয় কেন্দ্র তৈরির জন্যও নাম উঠে আসছে কলকাতার। রেখির দাবি, আগামী দেড় বছরে আরও ৩,০০০ নতুন কর্মী নেওয়া হবে। শেষমেশ সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোলে, এর একটা বড় অংশ হতে পারে এই শহরেই। সে ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের মধ্যে কলকাতায় কেপিএমজি-র কর্মী সংখ্যা চার হাজার ছুঁয়ে ফেলবে।
তবে শুধু কর্ম সংস্থানের নিক্তিতে এই সিদ্ধান্তকে মাপতে নারাজ কেপিএমজি-র অন্যতম কর্তা অম্বরীশ দাশগুপ্ত। তাঁর দাবি, এ ধরনের বিশ্বমানের কাজকর্মের কেন্দ্র কলকাতায় তৈরি হলে, উজ্জ্বল হবে রাজ্যের ভাবমূর্তি। মেধা ও দক্ষতার প্রাচুর্যই যে এই শহরকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ, তা জানিয়ে তিনি বলেন, “উপযুক্ত কাজের অভাবে ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে চলে যান এ রাজ্যের অনেকে। আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের উচ্চমানের কাজের হাত ধরে হার্ভার্ড বা লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের মতো বিভিন্ন প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরোনো পড়ুয়ারাও এ বার শিকড়ে ফিরতে পারবেন।”
মেধা-নির্ভর ব্যবসায় ‘বুদ্ধিজীবী’ বাঙালি যে কদর পেতে পারে, সে কথা আঁচ করেই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের লগ্নি টানায় জোর দিতে চেয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। বর্তমানে জমি-জট সমেত বিভিন্ন কারণে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে তেমন সাড়া মিলছে না ঠিকই। কিন্তু ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এই শহরকে ঘাঁটি করতে চাইছে বিশ্বের প্রথম সারির উপদেষ্টা সংস্থাগুলি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই ধরনের প্রকল্পে এক লপ্তে বড় জমির প্রয়োজন নেই। ফলে সেই সমস্যা নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে বরং পর্যাপ্ত মেধা সম্পদের জোগান পেতে এই শহরের দিকেই ঝুঁকছে পিডব্লিউসি, কেপিএমজি-র মতো সংস্থাগুলি।
কলকাতা কেন্দ্র প্রসঙ্গে কে পি এম জি-র যেমন দাবি, খনন শিল্পে ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য এই দফতরই হবে দেশের প্রধান কেন্দ্র। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খনিজ সম্পদের উপরই উৎপাদন ও পরিকাঠামো শিল্প নির্ভরশীল। দেশে যে সব সংস্থা পরিকাঠামো শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাদের পরামর্শ দিতে সংস্থার বিশেষ বিভাগ রয়েছে। এবং সে ক্ষেত্রে কলকাতাই প্রধান কেন্দ্র।
বেসরকারি সংস্থা এবং রাজ্য সরকার উভয়ের জন্যই বিভিন্ন কাজ করছে কেপিএমজি। ব্যবসায়িক কৌশল থেকে শুরু করে বাজার যাচাই, বিভিন্ন প্রশাসনিক ধাপ টপকে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বিষয়ে বেসরকারি সংস্থাকে পরামর্শ দিচ্ছে তারা। কেপিএমজি কর্তৃপক্ষের দাবি, ভিন্ রাজ্যে ব্যবসা করতে আসা নতুন কোনও বিনিয়োগকারীর পক্ষে সম্পূর্ণ অচেনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত প্রকল্প গড়া সহজ নয়। আর ঠিক সেই কাজটিই বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা সংস্থা হিসেবে করে দেবে তারা। যার পোশাকি নাম ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং। এর পাশাপাশি, রাজ্যকেও আয়ের পথ দেখাতে সরকারি সম্পত্তি সদ্ব্যবহারের পরিকল্পনা তৈরি করে দিচ্ছে এই উপদেষ্টা বহুজাতিক।
কেপিএমজি-র আয়ের ৫০% আসে ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং থেকে। যথাক্রমে ২৮ ও ২২ শতাংশের উৎস কর সংক্রান্ত কাজকর্ম এবং হিসাব পরীক্ষা (অডিট)। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মেধা সম্পদের দৌলতে এই তিন ক্ষেত্রেই কলকাতা কেন্দ্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আর সেই যুক্তি থেকেই ঢেলে সাজছে শহরের কেপিএমজি কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy