Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ফোন করলেই গ্যাসের ভর্তুকি ব্যাঙ্কে নিতে আর্জি প্রধানমন্ত্রীর

“নমস্তে। ম্যায় নরেন্দ্র মোদী...।” মোবাইল ফোনে ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স সিস্টেম বা ‘আইভিআরএস’ ব্যবস্থায় রান্নার গ্যাস বুক করতে গেলেই শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই কণ্ঠস্বর। কালোবাজারি ও দুর্নীতি রুখতে গ্রাহকের ফোনে নয়া ব্যবস্থার কার্যকরিতা শোনাচ্ছেন তিনি। গত ১ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে সর্বত্র সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্কে গ্যাসের ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ফের শুরু হয়েছে।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

“নমস্তে। ম্যায় নরেন্দ্র মোদী...।” মোবাইল ফোনে ইন্টারঅ্যাক্টিভ ভয়েস রেসপন্স সিস্টেম বা ‘আইভিআরএস’ ব্যবস্থায় রান্নার গ্যাস বুক করতে গেলেই শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই কণ্ঠস্বর। কালোবাজারি ও দুর্নীতি রুখতে গ্রাহকের ফোনে নয়া ব্যবস্থার কার্যকরিতা শোনাচ্ছেন তিনি।

গত ১ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে সর্বত্র সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্কে গ্যাসের ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ফের শুরু হয়েছে। তার আগে অবশ্য দেশের ৫৪টি জেলায় (পশ্চিমবঙ্গ বাদে) ওই পরিষেবা চালু হয়েছিল ১৫ নভেম্বর থেকে। তেল সংস্থা সূত্রের হিসেব, এখনও পর্যন্ত দেশে প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক এই ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছেন। যা মোট গ্রাহকের প্রায় ৭০%। গ্যাসের ভর্তুকি সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্কে পৌঁছে দেওয়ার প্রচার এ বার সরাসরি নিজের কাঁধেই নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

কী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী? আইভিআরএস পদ্ধতিতে গ্যাস বুক করতে গেলে শোনা যাচ্ছে তাঁর গলা। নমস্কার জানিয়ে তিনি বলছেন, “আমি নরেন্দ্র মোদী। আপনাদের লক্ষ লক্ষ অভিনন্দন। ১০ কোটি পরিবার সরাসরি ভর্তুকির নগদ টাকা হস্তান্তরের সুবিধা পাচ্ছে। আপনার খাতায় (অ্যাকাউন্টে) এখন সেই টাকা পৌঁছচ্ছে। এটা বিশ্ব রেকর্ড। এতে কালোবাজারি বন্ধ হবে। দুর্নীতি বন্ধ হবে। এই পহল (ব্যবস্থাটির নাম) দুর্নীতি বন্ধ করার জন্যই।”

ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিকদের সঙ্গে যোগসুত্র গড়তে মোদী বেছে নিয়েছেন রেডিওকে। শুরু করেছেন তাঁর ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠান। এমনকী গত অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন ভারত সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-ও। এ বার রান্নার গ্যাসের সরাসরি ভর্তুকি গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে হস্তান্তর ব্যবস্থার প্রচারেও উদ্যোগী হলেন তিনি।

তেল সংস্থা সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে গোটা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করতে তেল সংস্থাগুলিকে নিয়ে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তারপর দিন দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে সেই আলোচনার সারবস্তু পেশ করে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। তেল সংস্থার সূত্রের দাবি, সেখানে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মোদীকেও গোটা বিষয়টি অবহিত করেন। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, কাজ অনেকটা এগোলেও এখনও প্রায় ৩০% গ্রাহক এই তালিকার বাইরে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদেরও এই ব্যবস্থায় আনতেই সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াস।

উল্লেখ্য, এ দিন পর্যন্ত তেল সংস্থাগুলির হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৯৩ লক্ষের বেশি গ্রাহকের মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০ লক্ষ (প্রায় ৬৪%) গ্রাহক ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি ভর্তুকি পাওয়ার উপযুক্ত হয়েছেন। তেল সংস্থার দাবি, গ্রাহকদের একাংশের মধ্যে এখনও কিছুটা গা-ছাড়া মনোভাব রয়েছে। অনেকেই ভাবছেন হাতে সময় আছে। কিন্তু শেষ বেলায় ব্যাঙ্ক বা আধার নম্বর জমা দিলে তা নথিভুক্ত হতে সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা সংস্থাগুলির।

নিয়ম অনুযায়ী, ৩১ মার্চের মধ্যে আধার ও ব্যাঙ্কের তথ্য (যাঁদের আধার নেই, তাঁদের শুধু ব্যাঙ্কের তথ্য) গ্যাসের দোকান ও ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার কথা। তত দিন গ্রাহকেরা আগেকার নিয়মেই ভর্তুকির দামে গ্যাস পাবেন। তারপরও ওই সব তথ্য দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ভর্তুকির গ্যাসের টাকা পেতে হলে ৩০ জুনের মধ্যেই তা দিতে হবে। যাঁরা তারপর জমা দেবেন, তাঁরা ওই সময়ের মধ্যে বাড়তি দামে (বাজার দরে) কেনা গ্যাসের ভর্তুকি পাবেন না। যখন দেবেন, তখন থেকে ভর্তুকির টাকা পাওয়ার যোগ্য হবেন।

এই ব্যবস্থা ইউপিএ সরকার চালু করলেনও তা শুধু আধার ভিত্তিক হয়েছিল। কিন্তু দেশের বহু মানুষের আধার নম্বর না-হওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন সরকার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় এবং পুরনো ব্যবস্থাই (অর্থাৎ, ভর্তুকি দিয়ে কম দামে গ্যাস কেনা) কার্যকর রাখে। বিজেপি সরকার এসে কিছুটা সংশোধন করে (যাঁদের আধার নম্বর নেই, তাঁদের শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যের ভিত্তিতেই) নতুন করে এই ব্যবস্থা চালু করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debapriya sengupta subsidies gas subsidies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE