Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
চড়া ভাড়া গুনতে নাজেহাল যাত্রীরা • বিপাকে ভ্রমণ সংস্থাও

লাফিয়ে বাড়ছে বিমান টিকিটের দাম

মওকা বুঝে বেড়ে যাচ্ছে বিমান টিকিটের দাম। স্পাইসজেটের বহু উড়ান বাতিল। দিশেহারা যাত্রীরা। স্পাইসজেটের টিকিট বাতিল করে শেষ মুহূর্তে অন্য সংস্থার টিকিট কাটতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস যাত্রীদের। আগে কলকাতা-দিল্লি রুটে এক দিন আগে কাটলে যে-বিমান টিকিট পাওয়া যেত ৫ হাজার টাকায়, তার দাম এখন প্রায় ৮ হাজার টাকা। একই ভাবে বেড়েছে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের ভাড়াও। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেই টিকিটই কাটতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

মওকা বুঝে বেড়ে যাচ্ছে বিমান টিকিটের দাম।

স্পাইসজেটের বহু উড়ান বাতিল। দিশেহারা যাত্রীরা। স্পাইসজেটের টিকিট বাতিল করে শেষ মুহূর্তে অন্য সংস্থার টিকিট কাটতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস যাত্রীদের। আগে কলকাতা-দিল্লি রুটে এক দিন আগে কাটলে যে-বিমান টিকিট পাওয়া যেত ৫ হাজার টাকায়, তার দাম এখন প্রায় ৮ হাজার টাকা। একই ভাবে বেড়েছে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ের ভাড়াও। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেই টিকিটই কাটতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।

প্রধানত জেট এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগোর টিকিটের দামই এই মুহূর্তে বেড়ে চলেছে। বুধবার এমনই এক সংস্থার জনৈক কর্তার সাফ কথা, “আমরা ব্যবসা করতেই এসেছি। চাহিদা অনুযায়ী দাম তো বাড়বেই। আর এমন ভাবে ভাড়ার কাঠামো ঠিক করা থাকে, যাতে যত আসন সংখ্যা কমবে ততই ভাড়া বাড়বে। এখন স্পাইসজেটের টিকিট বাতিল করে অনেক যাত্রীই আমাদের টিকিট কাটার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ভাড়া বাড়ছে।”

যাত্রীদের এই চরম ভোগান্তির মুখে স্পাইসজেটের কল সেন্টারের কর্মীরাও ফোন ধরছেন না বলে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। ফলে আগেভাগে টিকিট কেটে রাখা যাত্রীরা প্রবল সমস্যায় পড়েছেন। সমস্যায় পড়েছেন ট্রাভেল এজেন্টরাও। স্পাইসজেটের উড়ান বাতিলের জন্য এই সব ভ্রমণ সংস্থাও এ বার আর্থিক ক্ষতির মুখে। এখন যাঁরা টিকিট কাটতে আসছেন, তাঁদের স্পাইসজেটের টিকিট না-কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন এজেন্টরা।

কলকাতার এক এজেন্টের কথায়, “দিন কয়েক পরে কলকাতা থেকে অন্য শহরে যাওয়ার জন্য স্পাইসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। কিন্তু, আমরা সেই টিকিট কেনার পক্ষপাতী নই। যাঁরা ইন্টারনেটে কিনছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে কিনছেন। আমরা কার্যত স্পাইসজেটের টিকিট বিক্রি বন্ধই করে দিয়েছি।”

২৫ ডিসেম্বর মাদুরাইয়ে অ্যানাস্থেটিস্টদের একটি সম্মেলনে কলকাতা থেকে প্রায় ৫০ জন চিকিত্‌সকের যাওয়ার কথা। যতিশঙ্কর রুদ্র তেমনই এক চিকিত্‌সক, যিনি পরিবার নিয়ে ত্রিচি, তাঞ্জোর ঘুরে মাদুরাই যাবেন বলে ২২ ডিসেম্বর স্পাইসজেটের চারটি টিকিট কেটেছিলেন। যাওয়ার সময়ে কলকাতা-চেন্নাই-মাদুরাই। ফেরার সময়েও একই রুটে। খবরের কাগজ দেখে আতঙ্কিত এই চিকিত্‌সক যোগাযোগ করেন এজেন্টের সঙ্গে। তিনিও কিছু বলতে পারেননি। যতিশঙ্করবাবু বলেন, “কল সেন্টারে ফোন করেছি অনেক বার। বেজে বেজে কেটে গিয়েছে। শেষে স্পাইসজেটের সাইটে ঢুকে দেখি আমাদের চারটি টিকিটই বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু, সে কথা আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয়নি।” এক বন্ধুকে ধরে শেষে নিজের টিকিট বদলে ফেলেছেন তিনি। তাঁকে স্পাইসজেটেরই অন্য উড়ানের টিকিট দেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সওয়া ১১টায় কলকাতা থেকে বাগডোগরা যাওয়ার উড়ান ছিল স্পাইসজেটের। প্রথমে উড়ানের সময় পিছিয়ে দেওয়া হলেও, ১টার কিছু পরে যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয় উড়ানটি বাতিল করা হয়েছে। তার পরেই স্পাইসজেটের কাউন্টারে প্রতিবাদ জানান যাত্রীদের একাংশ।

ট্রাভেল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবি বলেন, “আমার কাছে ৬০ থেকে ৭০টি এমন অভিযোগ এসেছে। কেউ কল সেন্টারে ফোন করে সাড়া পাচ্ছেন না। ফলে অসহায় যাত্রীরা এসে আমাদের চেপে ধরছেন। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন জানিয়েছে, বাতিল হওয়া উড়ানের টিকিটের দাম ১০ দিনের মধ্যে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তিন মাস আগে যাঁরা ৫ হাজার টাকায় কলকাতা-বেঙ্গালুরুর টিকিট কেটেছিলেন, এখন শেষ মূহূর্তে তাঁদের সেই ৫ হাজার টাকা ফেরত দিলেই বা কী হবে? এখন টিকিটের দাম কুড়ি হাজার টাকা ছুঁয়েছে।” অনেক যাত্রী এসে তাই এজেন্টকে বলেছেন, “আপনি টিকিট কেটে দিয়েছেন। আমি জানি না। আমাকে ওই টাকায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

অনিলবাবু জানান, এই কারণে বহু ক্ষেত্রেই এখন গাঁটের কড়ি খরচ করে স্পাইসজেটের যাত্রীদের জন্য অন্য বিমান সংস্থার টিকিট কেটে দিতে হচ্ছে। এক মাস পর্যন্ত টিকিট আগাম বিক্রি করছে স্পাইস। কিন্তু, তাদের আর্থিক ক্ষতির বহর দেখে যাত্রীদের সেই টিকিট কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না মূলত দু’টি কারণে। কিংফিশারের মতো স্পাইসের অবস্থা যে-আরও খারাপ হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তা ছাড়া, দুম করে কখন কোন উড়ান বাতিল হচ্ছে, তাও ঠিক থাকছে না।

স্পাইসজেটের তরফে জানানো হয়েছে, দিনে গড়ে ৮০টি করে উড়ান বাতিল করা হচ্ছে। ফলে, এক সঙ্গে অনেক যাত্রী কল সেন্টারে ফোন করছেন। সেই চাপ নিতে পারছেন না কল সেন্টারের কর্মীরা। তাও এই পরিস্থিতির জন্য কল সেন্টারে অতিরিক্ত ফোন লাইন বসানো হয়েছে বলে দাবি সংস্থার। কিন্তু, তাতেও চাপ নেওয়া যাচ্ছে না। বাতিল উড়ানের যাত্রীদের অন্য বিমানে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। স্পাইসজেটের আশা কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE