সুদ সেই অপরিবর্তিতই রইল। কিন্তু সেই সঙ্গে দিল্লির তখ্তে সদ্য আসা মোদী-সরকারের প্রতি রইল পাশে থাকার সৌজন্য ‘বার্তা’ও। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় প্রথম ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন স্পষ্ট বোঝালেন যে, আর্থিক বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার জন্য শীর্ষ ব্যাঙ্ক অবশ্যই তৈরি। তবে ভারসাম্যের দড়িতে হেঁটে। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার লক্ষ্য থেকে এক চুলও না সরে।
খুচরো ও পাইকারি বাজারে মূল্যস্ফীতির হার এখনও যথেষ্ট চড়া। তাই শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে মঙ্গলবার সুদ কমানোর পথে হাঁটবে না, তা প্রত্যাশিতই ছিল। সেই পূর্বাভাস মিলিয়ে এ দিন রেপো রেট (্স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে সুদে ধার দেয়) অপরিবর্তিতই রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ২২.৫ শতাংশে নামিয়েছে স্ট্যাটুইটরি লিকুইডিটি রেশিওকে (এসএলআর)। যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে শিল্পকে ঋণ দেওয়া কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে, আগামী দিনে মূল্যবৃদ্ধি বাগে থাকলে, আর সুদ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন রাজন। চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫-৬% হবে বলেও মনে করছেন তিনি।
এসএলআর হল সেই অনুপাত, যা মেনে বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি ঋণপত্রে লগ্নি করতে হয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে। এসএলআর ১০% হওয়ার মানে, ১০০ টাকার মধ্যে ১০ টাকা দিয়ে সরকারি ঋণপত্র কিনতেই হবে তাদের। ফলে ওই অনুপাত কমার অর্থ, সেই বাধ্যবাধকতা হ্রাস পাওয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বার এসএলআর ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমায় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি নগদ আসবে ব্যাঙ্কগুলির পকেটে। এবং তখন ওই টাকা শিল্প বা পছন্দের ক্ষেত্রে ধার দিতে পারবে তারা।
আর ঠিক এখানেই নতুন সরকারের প্রতি শীর্ষ ব্যাঙ্কের পাশে থাকার সৌজন্য-বার্তা খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই এসএলআর কমিয়ে আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন রাজন। এক, শিল্পকে ঋণ দিতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির হাতে বাড়তি টাকার সংস্থান। যা বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে। আর দুই, রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরানোর বল কেন্দ্রের কোর্টে ঠেলে দেওয়া। কারণ, সরকারি ঋণপত্র কেনার বাধ্যবাধকতা যদি ব্যাঙ্কগুলির কমে, তবে ওই ঋণপত্র বেচে বাজার থেকে টাকা তুলতে হয়তো আরও বেশি সুদ গুনতে হবে কেন্দ্রকে। ফলে সেই পরিস্থিতি এড়াতে কেন্দ্রের চেষ্টা হওয়া উচিত রাজকোষ ঘাটতি কমানো।
এই ঋণনীতিকে মোটের উপর স্বাগত জানিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বক্তব্য, “শীর্ষ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক বৃদ্ধি দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্যের রাস্তাতেই হেঁটেছে। এ বার সেই ভারসাম্য বজায় রেখে অর্থনীতির সমস্যা সমাধান সরকারেরও অগ্রাধিকার।” এ দিন ঋণনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহলও।
ব্যাঙ্কিং শিল্প জানিয়েছে, এখনই কোনও ঋণে সুদ কমার সম্ভাবনা নেই। যাতে কিছুটা হতাশ দেশের আবাসন নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার মনে করছেন, রাজন চড়া সুদের জমানা ছেড়ে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু এখনই মূল্যবৃদ্ধি কমার সম্ভাবনা কম। বিশেষত যেখানে গত এপ্রিলেই তা বেড়েছে এবং এ বার বর্ষা কৃপণ হওয়ার সম্ভাবনা।
তবে দিনের শেষে বিশেষজ্ঞদের কাছে এই ঋণনীতি আসলে রাজনের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নরেন্দ্র মোদীর সরকারের প্রতি সৌজন্য এবং সহযোগিতার বার্তা। চড়া মূল্যস্ফীতি যুঝেও বৃদ্ধির গতি ফেরাতে সম্মিলিত লড়াইয়ের অঙ্গীকার। বিশেষত এ দিন রাজন যে ভাবে নতুন সরকার আসার পর লগ্নির পরিবেশ এবং অর্থনীতির হাল ফেরার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, তাতে এই বার্তা স্পষ্ট বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy