চেষ্টা: বাগড়ি মার্কেটের ছাদে শুকোচ্ছে জরুরি নথিপত্র। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে বাগড়ি মার্কেটের প্রাসাদোপম বাড়িটি জ্বলছে এখনও। অন্য দিকে, সেই বাড়ির সিমেন্ট করা ছাদে শুকোচ্ছে জরুরি নথিপত্র, কম্পিউটারের সিপিইউ। যদি যন্ত্র আর কাগজে বন্দি কিছু তথ্য সেখান থেকে উদ্ধার করা যায় সেই আশায়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাগড়ি মার্কেটের ছাদে পৌঁছে দেখা গেল, ছ’তলার ছাদে থরেথরে মেলা রয়েছে জলে ভেজা কাগজ, ফাইল। ছাদের পাঁচিলে হেলান দিয়ে রাখা রয়েছে কম্পিউটারের সিপিইউ। রোদে সে সব শুকোতে দিয়ে চিন্তিত মুখে বসে রয়েছেন বিমলচন্দ্র বোথরা। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বাগড়ি মার্কেটের তিনতলায় সি ব্লকে ছিল তাঁর ফার্ম। রবিবার ভোরেই খবরটা পান তিনি। সকালেই ছুটে আসেন। যদিও ওই অগ্নি-যুদ্ধের মধ্যে ঢোকার অনুমতি মেলেনি তাঁর।
দুটো হাত কপালের দু’পাশে চেপে চোখ জোড়া ছাদে নামিয়ে বিমলবাবু বলে চলেন, ‘‘সি ব্লকে আগুন এতই ছড়িয়েছিল যে সোমবারও অফিসে ঢুকতে পারিনি। আজ সকালে দমকল শাটার ভেঙে অফিসে ঢোকে। কিছু ক্ষণ পরে আমিও ঢুকি।
প্রথমেই নজর পড়ে ফাইলগুলোর দিকে। বেশির ভাগই আধপোড়া। যেটুকু বেঁচে ছিল, সেগুলোও জলে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে।’’ ওই ফাইলগুলো আর তাই বস্তাবন্দি করার ঝুঁকি নেননি তিনি। হাতে করেই সে সব ছাদে নিয়ে এসেছেন বিমলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথি। কত পরিশ্রম করে সব তৈরি করা হয়েছিল! দেখা যাক, যদি কিছু উদ্ধার করা যায়।’’
বাগড়ির ছাদে তখন নথি শুকোচ্ছেন শেয়ারের দালাল গোপাল পোদ্দারও। ভেজা কম্পিউটারের সিপিইউ খুলে শুকোতে দিয়েছেন তিনি। সি ব্লকে চারতলায় গোপালবাবুর শেয়ারের অফিস ছিল। তিনি বলেন, ‘‘শেয়ারের বেশির ভাগ কাজই অনলাইনে হয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথির ফাইলও রাখতাম। সেগুলো সব জলে ভিজে গিয়েছে। কড়া রোদ উঠেছে দেখে ছাদে নিয়ে এলাম। সারাদিন বসে থেকে ফাইল আগলে রাখব। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, আজ যেন বৃষ্টি না আসে।’’
ভগবানের দরবারে এমনই প্রার্থনা করছেন কৃত্রিম ফুলের ব্যবসায়ী প্রফুল্ল মোহান্তিও। বাগড়ি মার্কেটের নীচ থেকে তখনও গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আর ছাদে রাখা পরপর বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, পাম, লাকি বাম্বু-সহ বেশ কিছু কৃত্রিম গাছ। বি ব্লকে ছিল প্রফুল্লবাবুর কৃত্রিম ফুলগাছের দোকান। তিনি বলেন, ‘‘কপাল ভাল যে আমার সব গাছ পোড়েনি। জলে ভেজা গাছগুলোকে তাই গুদামে নিয়ে যাওয়ার আগে শুকোতে দিয়েছি।’’ প্রফুল্লবাবু জানান, সামনেই তো পুজো। পুজোর মণ্ডপ সাজাতে এই সব কৃত্রিম গাছের খুব চাহিদা। কিছু দিনের মধ্যেই এগুলো মণ্ডপে পাঠানোর কথা ছিল। নজর গেল ছাদে শুকোতে দেওয়া লাকি বাম্বু গাছের পাতার দিকে। প্রশ্ন ছিল, আধপোড়া এ সব কি আর মণ্ডপসজ্জায় নেওয়া হবে? প্রফুল্লবাবুর উত্তর, ‘‘সবাই তো জানেন আমাদের অবস্থা। অনুরোধ করব। কম দামেও যদি কেনেন তা হলেও হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy