Advertisement
১১ মে ২০২৪
Year Ending Sale

বর্ষশেষের ছাড়ে হামলে পড়া ভিড় শেষ রবিবারেও

২৪ ডিসেম্বরের পরে বড়দিনে করোনা-বিধি হেলায় উড়িয়ে শহরের রাস্তায় নেমে পড়া বেপরোয়া জনজোয়ার দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল নানা মহলে।

বেপরোয়া: দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করে ধর্মতলার ফুটপাতে কেনাকাটার ভিড়। রবিবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

বেপরোয়া: দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না করে ধর্মতলার ফুটপাতে কেনাকাটার ভিড়। রবিবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫১
Share: Save:

মন্তব্য ১: ‘‘লকডাউন উঠতেই এত বায়ুদূষণ যে করোনাভাইরাস দূষণেই মরে গিয়েছে। তাই কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।’’

মন্তব্য ২: ‘‘অন্য ভাবেও তো শরীরে ভাইরাস ঢোকে! তাই মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার কিনে খরচ করার চেয়ে নিজেকে ভালমন্দ খাইয়ে খরচ করছি। শীতের উৎসব তো ভাল খাওয়াদাওয়ার জন্যই!’’

মন্তব্য ৩: ‘‘চিকিৎসকেরা ও রকম ভাইরাসের ভয়ের কথা একটু বলেই থাকেন। ঘোরাঘুরির পর্ব ২৫ তারিখই হয়ে গিয়েছে। বর্ষশেষের ছাড় দেখে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েছি। ছাড় উঠে গেলে আর পাব না!’’

২৪ ডিসেম্বরের পরে বড়দিনে করোনা-বিধি হেলায় উড়িয়ে শহরের রাস্তায় নেমে পড়া বেপরোয়া জনজোয়ার দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল নানা মহলে। শীতের উৎসব পালনে বেরিয়ে পড়া অধিকাংশেরই সঙ্গে মাস্ক ছিল না। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার বা দূরত্ব-বিধি পালনের চেষ্টাও দেখা যায়নি। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ না থাকায় কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশও। সেই বেপরোয়া ছবি দেখা গেল এ দিনও, বছরের শেষ রবিবারেও।

আরও খবর: সোমবার বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী, রোড শো মঙ্গলবার, থিমে রবীন্দ্রভাবনা

আরও খবর: রাজ্যে দৈনিক মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমল, কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যায় ফের উদ্বেগ

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, নিউ টাউন, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর চত্বরে এ দিন ভিড় উপচে পড়ে। বর্ষশেষের ছাড়ের কেনাকাটার জন্য সব চেয়ে বেশি ভিড় ছিল ধর্মতলা এবং গড়িয়াহাট চত্বরে।

দুই নাবালক ছেলে এবং বয়স্কা শাশুড়িকে নিয়ে এ দিন বাগবাজার থেকে ধর্মতলায় এসেছিলেন সুনীতা দত্তগুপ্ত। কারওরই মাস্ক ছিল না। প্রশ্ন করতেই ব্যাগ থেকে মাস্ক বার করে ছেলেদের পরিয়ে দিয়ে সুনীতা বললেন, ‘‘এখনও মাস্ক পরছি কি না, দেখা হচ্ছে? সে ভাবে তো আর করোনাই হচ্ছে না। কত লোক তো মাস্ক পরেননি, আমাদেরই শুধু পেলেন?’’ এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শাশুড়ি মাস্ক হারিয়ে ফেলেছেন। আমিও তাই খুলে রেখেছি। আমাদের আর করোনা কী ধরবে! বাচ্চাগুলো বাঁচুক।’’ গড়িয়াহাট মোড়ের ফুটপাতে আবার বর্ষশেষের ছাড়ের কেনাকাটার লম্বা লাইন। সেখানে এক মহিলা বললেন, ‘‘জানি করোনা যায়নি, কিন্তু ছাড় তো চলে যাবে! ছাড়ের জিনিস না কিনলে সংসার চালানো কঠিন।’’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে পাশে থাকা এক মহিলার মন্তব্য, ‘‘সরকার কিছু না বললে অন্যের কথা শুনবে কেন?’’

সতর্ক না হওয়ার ছবি চিড়িয়াখানার সামনে। গোটা পরিবারকে মাস্ক খুলিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত তরুণীর মন্তব্য, ‘‘আরে, একটু খুললে করোনা হবে না। ভয় পেলে ছবিটাই হবে না।’’ পরিবারের এক সদস্যের আবার সহাস্য মন্তব্য, ‘‘এটা শেষ ছবি না হয়ে যায়!’’ তরুণীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘হলে হবে। আর ভয়ে বসে থাকতে পারছি না।’’

প্রিন্সেপ ঘাটে হাঁফাতে থাকা বৃদ্ধাকে একটি জায়গায় বসিয়ে নাতির প্রশ্ন, ‘‘বলেছিলাম, করোনা যায়নি। এখন দেখলে তো, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে! কেনাকাটা করে ফিরে গেলেই হত।’’ দিদিমা নাতিকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘‘রিপোর্ট তো নেগেটিভই এল! করোনা নয়, একটু হাঁফিয়ে গিয়েছি।’’

চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘হামলে পড়ে মানুষের এই উৎসব যাপন আসলে আত্মঘাতী প্রবণতা! মানুষ যে এত জ্ঞানপাপী হতে পারে, করোনা পরিস্থিতি না এলে ধারণা করতে পারতাম না।’’ এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানেক্স বিল্ডিং বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসের চিকিৎসক বিমানকান্তি রায়ের কথায়, ‘‘শীতের বেশির ভাগ আড্ডাই বন্ধ ঘরে বা ঘেরা জায়গায় হয়। ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত সে সব দয়া করে এড়িয়ে চলুন। আসলে মানুষের মানসিক ধারণাটাই বদলে গিয়েছে। প্রথমে পরিস্থিতি দেখে একটা ভয় কাজ করছিল। সেটা ভাল ছিল। তাতে বেপরোয়া ভাবটা খানিক কমেছিল।’’

চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর মন্তব্য, ‘‘কেউ কথা শোনেন না। তাই বলতেও আর ভাল লাগে না। উৎসব পালনে নেমে পড়া লোকজন দেখলাম অধিকাংশই মাস্ক পরেননি। বেশির ভাগই হয়তো উপসর্গহীন। কিন্তু রোগের বাহক। এই অবস্থায় ভিড়ে ঢুকলে ভাবুন, ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Year Ending Sale Coronavirus Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE