Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আইপিএলের টানে জনজোয়ার শহরে, চলল কালোবাজারিও

চেন্নাই বনাম কলকাতার হাইভোল্টেজ ম্যাচে রবিবারের শহর একেবারেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।

লোকারণ্য: কেকেআরের ম্যাচ দেখে বাড়ি ফেরার ভিড় মেট্রোয়। রবিবার, এসপ্লানেড স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

লোকারণ্য: কেকেআরের ম্যাচ দেখে বাড়ি ফেরার ভিড় মেট্রোয়। রবিবার, এসপ্লানেড স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

অভিন্ন হৃদয় দুই বন্ধু পিয়াল আর লিসান। দুই বন্ধুর এতটাই মিল যে অনেকে তাঁদের দু’জনকে মানিকজোড় বলেন। সেই মানিকজোড়ের মধ্যে এ দিন সকাল থেকে শুরু হয়েছে জোড় তর্ক। এক জন বলছেন জিতবে ধোনির দল চেন্নাই সুপার কিংস। তো আরেক জন বলছেন রাসেলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স বাজিমাত করবে। ঢাকা থেকে খেলা দেখতে এসে কলকাতার রেড রোডের সামনে দু’জনেই তাদের গালে আকিঁয়ে নিলেন তাঁদের প্রিয় দলের নাম।

শুধু ঢাকার পিয়াল বা লিসানই নন। চেন্নাই বনাম কলকাতার হাইভোল্টেজ ম্যাচে রবিবারের শহর একেবারেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। কার সমর্থক বেশি? ইডেনের সামনে জার্সি বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, অন্তত জার্সি বিক্রির নিরিখে নিজের শহরে কেকেআর পিছিয়েই রয়েছে ধোনির চেন্নাইয়ের কাছে। রেড রোডের কাছে এক জার্সি বিক্রেতা আদিত্য কুমার পাসওয়ান বলেন, ‘‘ধোনির সেভেন লেখা চেন্নাইয়ের জার্সি বিক্রি হয়েছে ১২টি। সেই জায়গায় কেকেআরের বেগুনি জার্সি বিক্রি হয়েছে মোটে ৪টি।’’

আদিত্যের কথা যে খুব একটা ভুল নয় তা ইডেনের আশপাশে ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। দুপুরের গনগনে রোদের মধ্যে চেন্নাইয়ের জার্সির হলুদ ঝড়ে যেন অন্য সব রং ম্লান হয়ে গিয়েছে। বালিগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন বিজয় মজুমদার। তিনি হেসে বলেন, ‘‘আমার পরিবারে আমি সংখ্যালঘু। কলকাতা আমার প্রিয়। তাই আমি কেকেআর এর সমর্থক। আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ধোনির অন্ধ ভক্ত। ওরা চেন্নাইয়ের সমর্থক।’’

নিজের শহরকে সমর্থন না করে চেন্নাইকে সমর্থন করছেন কেন? চেন্নাইয়ের পতাকা ওড়াতে ওড়াতে এক দল যুবকের সাফ জবাব, টিমটার নামই শুধু কলকাতা। কলকাতার বা বাংলার কোনও খেলোয়ার তো খেলে না। সৌরভও নেই। তা হলে কাকে সমর্থন করব? ধোনি তাদের প্রিয়। তাই চেন্নাইকে সমর্থন করছেন তাঁরা।

নিজের শহর কলকাতা প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও যাঁরা ধোনির সমর্থকেরা পড়েছেন দ্বিধায়। শোভাবাজার থেকে আসা কয়েক জন যুবক বলেন, ‘‘ধোনি না কলকাতা— এর মধ্যে আমরা নিজের শহর কলকাতাকেই একটু হলেও এগিয়ে রাখলাম।’’ ওই যুবকেরা পড়েছিলেন অন্দ্রে রাসেল লেখা বেগুনি জার্সি।’’

এই হাই ভোল্টেজ ম্যাচ দেখতে ভিন্‌ রাজ্য থেকেও এসেছেন প্রচুর ক্রিকেটপ্রেমী। রাঁচী থেকে আসা নীরজ কুমার, বিহারের বৈশালী থেকে আসা কমলনাথেরা জানালেন, রাতের ট্রেন ধরে তাঁরা ভোরে কলকাতায় এসেছেন ধোনির খেলা দেখতে। হাওড়া স্টেশনেই কাটিয়েছেন সারা দিন। অন্য দিকে অসম থেকে আসা দুই বন্ধু অসিত ও দেবজিৎ কেকেআর এর রিবন কপালে বাঁধতে বাঁধতে জানালেন তাঁরা বরাবরই কলকাতার সমর্থক।

এ দিনে ম্যাচ ঘিরে শহরের উন্মাদনা অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছিল মেট্রোর ভিড়ে। ছুটির দিন মেট্রোতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। গাড়ির চাপে রেড রোডেও যানজট হয়ে গিয়েছিল। খেলা যত এগিয়ে এসেছে কালোবাজারিতে টিকিটের চাহিদা তত বেড়েছে। একটি বড় ফুটবল ক্লাবের মাঠে টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে ভিড় সরিয়ে দিচ্ছিলেন কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার অফিসার। ওই জটলার মধ্যেই কয়েক জন খুঁজছিলেন টিকিট। এক দোহারা চেহারার যুবক এসে তাঁদের জানালেন, ‘‘চলে যান ওই ক্লাবের তাঁবুর বাঁদিকে। টিকিট পেয়ে যাবেন।’’

ওই যুবকের কথা শুনে ওই ফুটবল ক্লাবের তাঁবুর বাঁদিকে গিয়ে দেখা গেল বট গাছের তলায় চড়া দামে টিকিটের কালোবাজারি চলছে। পাঁচশোর টিকিট বিক্রি হচ্ছে দু’হাজারে। আর এল ব্লকের টিকিট বিক্রি হচ্ছিল ৪ হাজারে। কেন এত দাম? এক কালোবাজারি টিকিট বিক্রেতা বলেন, ‘‘ক্লাব হাউসের পাশেই এল ব্লক। একটু আগেই ৬ হাজারে বিক্রি করেছি। নিতে হলে নিন।’’

দুই বন্ধুর হাতে দু’হাজার টাকা। দু’টো টিকিট চাই। এক একটা টিকিটের দাম ২ হাজার টাকা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ময়দানের একটি বট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক। শত অনুরোধেও টিকিটের দাম কমাতে রাজি হননি তিনি। মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই বন্ধু।

খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। শেষে দুই বন্ধু মুখ চুন করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। কী মনে হল ওই টিকিট বিক্রেতার। এগিয়ে গেলেন তাঁদের দিকে। এক জন কাঁধে আলতো টোকা মেরে বলেন, ‘‘আপনাদেরই জিত। নিন, দু’টো টিকিট দু’হাজর।’’ দুই বন্ধুর আনন্দ তখন দেখে কে। টিকিট নিয়ে দে দৌড় ইডেন গার্ডেনের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crowd IPL 2019 KKR CSK Ticket Black
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE