—ফাইল চিত্র।
দেশের সবচেয়ে পুরনো মেট্রো পরিষেবা। সময়ের সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু তুলনায় যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য বা পরিষেবার মানোন্নয়ন হচ্ছে না। কলকাতা মেট্রোর এ হেন অবস্থার জন্য মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশ দায়ী করছেন আয়ের ঘাটতিকে। তাঁদের মতে, ব্যয় এবং আয়ের বিশাল ফারাকের কারণেই কলকাতা মেট্রোর পরিষেবার উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না।
দেশের প্রথম মেট্রো হওয়া সত্ত্বেও গত সাড়ে তিন দশকে খুব একটা এগোয়নি কলকাতা মেট্রো। সেখানে তুলনায় অনেক পরে শুরু করেও কয়েক মাইল এগিয়ে গিয়েছে দিল্লি মেট্রো
পরিষেবা। দৈর্ঘ্যপথের নিরিখে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি মেট্রোর মধ্যে রয়েছে দিল্লি মেট্রো। যাত্রাপথের দৈর্ঘ্যের নিরিখে কলকাতা মেট্রো এখনও সাড়ে ২৭ কিলোমিটারেই আটকে রয়েছে, যা দেশের অন্য মেট্রোপথের তুলনায় অনেকটাই কম। সেই সঙ্গে পিছিয়ে রয়েছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যেও।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ডিসেম্বরে ময়দান স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে গত তিন মাসে মেট্রোয় আগুন ও ধোঁয়া বেরোনোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই সমস্যা
সমাধানের উপায় এখনও খুঁজে পাননি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বারবার এমন ঘটনার জন্য পরিকাঠামোগত ঘাটতি এবং কলকাতা মেট্রোর বয়সকেই দায়ী করছেন মেট্রো আধিকারিকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ১০০ টাকা আয় করতে গড়ে ২৭০-২৮০ টাকা ব্যয় করতে হয় কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। অভিযোগ, ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের এই
অসঙ্গতির কারণেই রেল বোর্ড টাকা বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে মেট্রোয় পরিকাঠামোগত বদলও আনা যাচ্ছে না। মেট্রো সূত্রের খবর, ২০১৭ সাল থেকে এ নিয়ে রেল বোর্ডে একাধিক প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা সে ভাবে গুরুত্ব পায়নি। যদিও ময়দানে
অগ্নিকাণ্ডের পরে সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচল এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করেছে রেল বোর্ড। এক মেট্রোকর্তা বলছেন, ‘‘কলকাতা মেট্রোয় যাত্রী বাড়লেও আয় সেই অনুপাতে বাড়ছে না। ফলে যাত্রী ভাড়া না বাড়লে আয় বাড়ানোর তেমন অন্য উপায় নেই।’’
গত ডিসেম্বর থেকে মেট্রোর থার্ড রেলে আগুনের ফুলকি দেখা গিয়েছে একাধিক বার।
মেট্রো আধিকারিকদের একাংশের মতে, ইস্পাতের তৈরি থার্ড রেলে মরচে পড়ায় এবং এর বিদ্যুৎ পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে বারবার। এই সমস্যা এড়াতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোতে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি থার্ড রেল ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ, কলকাতার বর্তমান মেট্রোপথে থার্ড রেল পরিবর্তনের যে প্রকল্প রেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তা-ও কল্কে পায়নি।
কলকাতা মেট্রোয় বর্তমানে প্রতিদিনের যাত্রিসংখ্যা গড়ে প্রায় ৭ লক্ষ। আগামী দেড় বছরে বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর, বিমানবন্দর থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা। কিন্তু সেই চাপ সামাল দিতে কম সময়ের ব্যবধানে মেট্রো চালানোর মতো আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার পরিকাঠামো নেই কলকাতা মেট্রোতে। চেন্নাইয়ে তৈরি মেট্রোর রেকগুলি চিনা রেকের মতো অত উন্নত মানের নয়। মেট্রো সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের মার্চে সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করতে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব রেল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরলেও সেই প্রকল্প নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও উচ্চবাচ্য করেনি
রেল বোর্ড।
আয় কম হওয়ার কারণেই যে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে খামতি থাকছে, তা স্বীকার করছেন মেট্রো আধিকারিকেরা। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘অন্যান্য খাত থেকে মেট্রোর আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি রেল বোর্ডে বিবেচনাধীন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy