Advertisement
১১ মে ২০২৪

মা, আমার বই-খাতা? পোড়া ঘরের সামনে প্রশ্ন 

ডানলপের শান্তনু তবুও পরীক্ষায় বসেছে, সেটুকু সুযোগও পায়নি অজয় রায়। সোমবার নিউব্যারাকপুরের চেয়ার কারখানার আগুনে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তার দাদা মুন্নাপ্রসাদ রায়। রাতভর উৎকণ্ঠার প্রহর গুনেছেন তাঁর পরিজনেরা। মঙ্গলবার আর পরীক্ষাকেন্দ্রেই যাওয়া হল না অজয়ের।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শান্তনু সোনার। ডানলপে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শান্তনু সোনার। ডানলপে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৫
Share: Save:

যে ঘর থেকে সে পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছিল, পরীক্ষা শেষে সেই ঠিকানাটাই আর রইল না। ত্রিপল-ছাওয়া এক কামরার ঝুপড়ি আগুনে ছাই হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাক হয়ে গিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শান্তনু সোনারের স্বপ্নও। খানকয়েক খাতা আর গোটা দুয়েক বই— আপাতত এটাই শান্তনুর সম্বল।

ডানলপের শান্তনু তবুও পরীক্ষায় বসেছে, সেটুকু সুযোগও পায়নি অজয় রায়। সোমবার নিউব্যারাকপুরের চেয়ার কারখানার আগুনে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তার দাদা মুন্নাপ্রসাদ রায়। রাতভর উৎকণ্ঠার প্রহর গুনেছেন তাঁর পরিজনেরা। মঙ্গলবার আর পরীক্ষাকেন্দ্রেই যাওয়া হল না অজয়ের।

মঙ্গলবার দুপুরে ডানলপ মোড়ের পার্কিং বস্তিতে আগুন লাগে। পাশাপাশি গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ঝুপড়িগুলিতে আগুন ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। ঝুপড়ির বেশিরভাগ বাসিন্দাই অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ফলে অধিকাংশই ছিলেন বাইরে।

শান্তনুর মা সরস্বতী কোনারও অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। আগুন লাগার খবর শুনে বস্তিতে যখন পৌঁছন, ততক্ষণে তাঁদের ঝুপড়ি আগুনের গ্রাসে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমেই মনে পড়ল ছেলেটার প্রথম বড় পরীক্ষা। আর কিছু বাঁচাতে না পারি ওই বই-খাতাগুলো যদি বার করতে পারি। তাও সব পারিনি জানেন।’’

পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়েই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শান্তনুর কানে আসে। মুহূর্তে উধাও পরীক্ষা ভাল হওয়ার আনন্দ। ছুটে বস্তিতে পৌঁছে দেখে, রাস্তার উপরে বসে সরস্বতীদেবী। সামনে একটা প্লাস্টিকের গামলা। প্রথমেই শান্তনুর প্রশ্ন, ‘‘মা আমার বই-খাতা?’’ গামলার দিকে আঙুল তুলে কেঁদে ফেলেন সরস্বতীদেবী। ‘‘শুধু সহায়িকা আর খাতা দিয়ে কী করে পরীক্ষা দেব?’’ আগুন ধরা বস্তির কটু হাওয়ায় ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাক খায় শান্তনুর হাহাকারও।

তবে শান্তনুকে একেবারে নিরাশ হতে হয়নি। তাঁর কান্না কানে আসে এলাকায় উপস্থিত জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসককে বলা হয়েছে। তিনি তোমাদের বই-খাতা এবং প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবেন।’’ বিকেলের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয় তাদের।

১৮ বছর ধরে চেয়ার কারখানায় কাজ করেন মুন্না। তাঁর দাদা গণেশ জানান, নিজের দেশ বিহারে লেখাপড়ার সুযোগ তেমন নেই বলে, ছোট ভাই অজয়কে ছোটবেলাতেই নিজের আগরপাড়ার বাড়িতে এনে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন মুন্না। সেই দাদা আর অগ্নিদগ্ধ কারখানা থেকে বেরোতে পারেননি বলেন রাতভর কারখানার বাইরে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে। মঙ্গলবার বেলা বাড়তে তাকে জোর করে বাড়িতে পাঠানো হয়। গণেশ বলেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম পরীক্ষায় বসতে। রাজি হল না। বলল, দাদা আছে কী নেই জানি না। আমার আর হাত সরবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Madhyamik Pariksha Dunlop Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE