Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মধ্যরাতে মানুষের গন্ধ খুঁজছে স্নিফার ডগ

গোটা চারেক স্নিফার ডগ কংক্রিটের ফাটলের মধ্যে মানুষের গন্ধ খোঁজার মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভেঙে পড়া সেতুর হাঁ-মুখের এক পাশের ডেক স্ল্যাবে দাঁড়িয়ে একটি গাড়িকে উপরে টেনে তোলার চেষ্টা করছে একটি ক্রেন। ব্রিজের অক্ষত র‌্যাম্পে সার দিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর গাড়ি।

প্রাণের খোঁজে। ছবি: সুমন বল্লভ।

প্রাণের খোঁজে। ছবি: সুমন বল্লভ।

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

ভার সইতে না পেরে ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতুর ছাদকেই তখন মনে হচ্ছে কংক্রিটের দুর্ভেদ্য বাঙ্কার।

কয়েক হাজার ওয়াটের আলোর মধ্যে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা তিন-চারটি দলে ভাগ হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে ভিতরে পৌঁছনোর।

জল-কাদায় মাখামাখি তাঁদের কমলা অ্যাপ্রন। তবু ‘এয়ার প্রেশার হ্যামার’কে চেপে ধরে তাঁরা চেষ্টা করছেন কংক্রিটের পুরু আস্তরণ ভেঙে ফেলতে।

গোটা চারেক স্নিফার ডগ কংক্রিটের ফাটলের মধ্যে মানুষের গন্ধ খোঁজার মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভেঙে পড়া সেতুর হাঁ-মুখের এক পাশের ডেক স্ল্যাবে দাঁড়িয়ে একটি গাড়িকে উপরে টেনে তোলার চেষ্টা করছে একটি ক্রেন। ব্রিজের অক্ষত র‌্যাম্পে সার দিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর গাড়ি।

মঙ্গলবার রাত ১২টা নাগাদ মাঝেরহাটের ছবিটা ছিল এমনই।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকাজের হালহকিকত জানতে ঘটনাস্থলে এসে পড়লেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মিনিট দশেক ঘুরে দেখে ফিরেও গেলেন। তাঁর পিঠোপিঠি পৌঁছলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। প্রায় ঘণ্টাখানেক উদ্ধার–কাজের খোঁজখবর নিয়ে ফিরে গেলেন তিনিও।

আরও পড়ুন: হাঁটতে গিয়েও গর্তে পড়তে পারি, মন্ত্রী বিঁধলেন বিরোধীদের

রাত ১টা নাগাদ মাঝেরহাট মেট্রো স্টেশনের দিক থেকে চেষ্টা করা হল, পে লোডার ব্যবহার করার। কিন্ত নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশনের কংক্রিটের থাম আর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে কার্যত নড়চড়া করার জায়গাই খুঁজে পেল না পে-লোডার। ফলে আঁচড় কাটার বেশি কিছু হল না।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে ততক্ষণে কাজে লেগে পড়েছেন পুরসভার ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ’এর কর্মীদের একটি দল। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে এল সেনার প্রতিনিধি দলও।

মোটামুটি ১৫ ফুট লম্বা, ২০ ফুট চওড়া একটি জায়গাকে চিহ্নিত করে চলতে থাকল স্ল্যাব ভাঙা। মধ্যে মধ্যে উদ্ধারকারী কর্মীদের কাছে পাউচে জল পৌঁছে দিচ্ছিলেন রাজ্যের সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা।

রাত ৩টে নাগাদ এক এন ডি আর এফের (জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী) এক সদস্যকে নামানো হল ফাটলের মধ্যে। আশা, যদি খানিকটা এগোনোর রাস্তা তৈরি করতে পারেন তিনি। কিন্ত, সেই চেষ্টা কাজে এল না। উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা তখন বলাবলি করছেন, “খুব তাড়াতাড়ি কাজ মিটবে না।”

ক্লান্ত হয়ে পড়া কর্মীরা পালা করে একপাশে শুয়ে-বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন যখন, আরেক দল চালিয়ে যাচ্ছে স্ল্যাব ভাঙার কাজ। বুধবার ভোর ৩টে নাগাদ দেখা গেল, ভেঙে পড়া সেতুর কংক্রিটের স্ল্যাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে চারটি স্নিফার ডগ।

কিছু ক্ষণের মধ্যে বিধস্ত চেহারা নিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থেকে পৌঁছল প্রণব দে-র পরিবার। মেরুন রঙের টাটাসুমো থেকে নেমেই তাঁর মামা দেখলেন, কংক্রিটের উপর আছড়ে পড়ছে ‘এয়ার প্রেশার হ্যামার’। সেই আঘাত তো পড়ছিল তাঁর বুকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE