শুরু হয়ে গেল বিকিকিনি। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
নববর্ষে ‘মৎস্য মারিব খাইব সুখে’-র মেজাজটাই যেন ফিরে এল খাস কলকাতায়।
ঠিক নিজে মাছ ধরে খাওয়া নয়। তবে বিশাল দীঘিতে খেলে বেড়ানো জিয়ল মাছ চাইলেই জাল থেকে সটান উঠে আসছে গেরস্তের থলেতে। শনিবার, পয়লা বৈশাখে শহুরে বাঙালির জন্য এমন দুর্লভ মৎস্যভোগের কপাল খুলে গেল।
চিংড়িহাটার কাছে ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের ক্যাপ্টেন ভেড়িতে বচ্ছরকার দিনে এমন টাটকা মাছ-সম্ভার দেখে হাঁ টাপুরিয়াঘাটার সুনীল মণ্ডল। ‘‘ধুর, ধুর বরফের পানসে মাছ তো এর পরে মুখেই লাগবে না! দামেও বাজারের থেকে সস্তা।’’ রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া বা জ্যান্ত কাঁকড়ার সঙ্গে সুন্দরবনের গলদা-বাগদা আর পেল্লায় ভেটকিও হাজির এ তল্লাটে। সৌজন্যে স্থানীয় মৎস্য সমবায় সমিতি। কিছু দিন আগে ক্যাপ্টেন ভেড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতেই ওই চত্বরটাকে ঢেলে সেজে মাছ ধরে সরাসরি বাঙালির পাতের মাছের সংস্থান করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই ইচ্ছে এখন বাস্তব। ভিন্ রাজ্য থেকে মাছের জোগানের নিত্য ওঠানামায় বাজারে মাছের চড়া দরে লাগাম পরাতে আপাতত এটাই দাওয়াই। মাছের দামেও চলছে সরকারি নজরদারি। বিক্রি মাছের সবটার রসিদ রাখতে হবে।
মৎস্য দফতর সুত্রের খবর, ক্যাপ্টেন ভেড়ি ছাড়া কসবা কানেক্টরের কাছে পূর্ব কলকাতা ভেড়িতেও রোজ চালু থাকবে শহরের এই টাটকা ‘ফার্ম ফ্রেশ’ মাছের বাজার। ভেড়ির মাছ বাজারে-বাজারে গাড়িতেও বিক্রি হয় অবশ্য। তবে সটান জল থেকে তোলা মাছই এই নয়া বাজারের আবেদন। ক্যাপ্টেন ভেড়ির সমবায় সমিতির কর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আড়তে মাছ নিয়ে যাওয়ার গাড়ির খরচ, মজুরির খরচ থেকেও এই ব্যবস্থাটাই কিন্তু সাশ্রয়। ভেড়ির মাছ ভেড়ির ধারে বিক্রি করা গেলে আমাদের লাভ, ক্রেতাদেরও লাভ।’’ সুন্দরবনের চিংড়ি, ভেটকিও অবশ্য সরাসরি কলকাতায় আসছে সমবায় সমিতিগুলির হাত ধরে।
মৎস্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, সারা রাজ্যে ১২০০ মতো জলাশয় রয়েছে। প্রতিটি জলাশয়ে দেড় থেকে দু’কিলো ওজনের রুই, কাতলা, মৃগেলের চাষ হচ্ছে। সেই মাছ আমজনতার কাছে এখন থেকে বিক্রি করা হবে। রোজ সকাল ৭টা থেকে বেলা ১০টা এবং বিকেলে ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মাছ পাওয়া যাবে। তবে নয়া ব্যবস্থার প্রচারে এখনও খামতি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ভেড়ির ধারের মাছবাজারের খবর পৌঁছে দিতে কয়েক দিন ধরে ওই তল্লাটে পাড়ায়-পাড়ায় বা বাসে-বাসে লিফলেট বিলি হয়েছে। মৎস্য দফতরের আশা, ভাল সাড়া মিললে রাজ্যের সব জলাশয় থেকেই নিয়মিত মাছ বিক্রি করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy